Mon 20 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || দোল পূর্ণিমা || সংখ্যায় লিখেছেন শম্পা সাহা

maro news
T3 || দোল পূর্ণিমা || সংখ্যায় লিখেছেন শম্পা সাহা

ধূসর বসন্ত

-কী হলো? কাঁদছিস কেন? -কিছু না! -আরে ধ্যার!! তোকে নিয়ে আর পারা যায় না! ওদিকে আবার নাক টানার আওয়াজ! একটু হতাশ হয়েই ফোনটা কেটে দেয় ঋজু! শিমুল ভারী অবুঝের মতন করে এই সময়টা আসলে! ওদের যে যখন তখন ছুটি পাবার উপায় নেই সেটা বোঝে না মেয়েটা! না, মেয়েটা নয়! তাহলে কী ভাববো? বৌটা না মহিলাটা! নিজের ভাবনায় নিজেই একবার থমকে দাঁড়ায়, দুবার ভাবে! ঋজু আনমনে ঘরের কোণে ঝুলতে থাকা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকায়! লাল কালিতে লেখা "হোলি"! ছুটির দিন, সারা দেশের জন্য! কিন্তু ওর!! ওর ছুটি নেই! গোয়াল ঘরের পেছনে একটা রোগা পটকা মেয়ে ঘাড় গুঁজে কেঁদেই চলেছে! সবে বছর চোদ্দো! ক্লাস নাইন! বন্ধুদের সঙ্গে রং খেলতে বেরিয়েছিল। কখন যে দল বেঁধে হৈ হুল্লোর করতে করতে পৌঁছে গেছিল নিজের পাড়ার চৌহদ্দি ছেড়ে শিয়ালতলির দিকে। হঠাৎ একদল ছেলে এসে ওদের চেপে ধরে। রং মাখানোর নাম করে ছোট্ট মেয়েটার গাল মুখ ছেড়ে হাত চালায় ফ্রকের ভেতর থেকে ভেতরে! প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারে না কিশোরী মেয়েটি। তারপর যখন বোঝে এ হাত শুধুই রং মাখানোর উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে না, উদ্দেশ্য অন্য তখন যেন এক মুহূর্তের জন্য শীতল স্রোত বয়ে যায় ওর শিরদাঁড়া বেয়ে। "মা গো" বলে দুই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে মাটিতেই। ততক্ষণে বেগতিক দেখে সেই বাইরের দল চোখের আড়ালে। সঙ্গী সাথীদের কিছু বলতে পারে না মেয়েটা। সেই থেকে শুধু কেঁদেই চলে! কাকে বলবে? কীভাবে বলবে? এ তো ওর দোষ! কেন ও এসেছে অন্য পাড়ায় রং খেলতে! কেন? কেন? নিজের উপর রাগে, ঘেন্নায়, লজ্জায়, ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে মেয়েটা। সাইকেল নিয়ে ঝড়ের বেগে বাড়ির দিকে ফিরছিল ছেলেটা! বাজার করে ফিরতে একটু দেরি! হবে নাই বা কেন? বাজারেও তো একটু রং খেলা চললো। বছর ঊণিশের ফার্স্ট ইয়ারে পড়া ছাত্রটি নতুন নতুন রোমাঞ্চকর পরিস্থিতি তৈরী করতে ভালোবাসে। এ বোধহয় সেই বয়সী সব ছেলেরাই বাসে। তাই তো একটু বেহিসাবি রং খেলে বাজারের ব্যাগটা হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দেখে শিমুল বসে আছে রাস্তার মাঝখানে আর ওকে ঘিরে ছোটখাটো একটা জটলা। মুহুর্তে ঘটনাটা বুঝে ফেলে ও। আর দেরি করলে তিল থেকে তাল হয়ে ছড়িয়ে পড়বে এই গ্ৰামের আনাচে কানাচে দাবানলের মত। তাড়াতাড়ি সাইকেল থেকে নেমে হৈ হৈ করে ওকে সাইকেলের পেছনের সীটে বসতে বলে। বাকিরা কিছু বোঝার আগেই, যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব করে সাইকেলে পৃথ্বীরাজের মতন যেন সংযুক্তাকে উদ্ধার করে নিয়ে চলে বাড়ির দিকে। নামিয়ে দেয় বাড়ির সামনের রাস্তায়! শিমুলের কানের কাছে মুখ এনে বলে, - যা! বাড়ি যা! তবু মেয়েটা নিঃশব্দে কেঁদেই চলেছে দেখে নিজের এক হাতে সাইকেল ধরে অন্য হাতে শিমুলের কাঁধে রেখে বলে, -বুঝেছি কী হয়েছে! কিন্তু এ নিয়ে বেশি কথা বললে সমস্যা বাড়বে! তুই কি ওদের কাউকে চিনিস? নিঃশব্দে ঘাড় নাড়ে শিমুল! - তাহলে বাড়ি যা! আর কখনো একা যাস না ওসব এলাকায়! সঙ্গের বাকি বন্ধু বান্ধবীরা পরিস্থিতি ঘোরালো দেখে আর এমুখো হয়নি। সেই থেকে শিমুল গোয়ালের পেছনে বসে কেঁদেই গেছে! কেঁদেই গেছে যতক্ষণ না ওর মা ওকে খুঁজতে এসেছে! কিন্তু কান্নার কারণ বলেছে, মায়ার সঙ্গে ঝগড়া! মা নিশ্চিন্ত হয়। এই দুই বান্ধবীর ঝগড়া, আর মান অভিমানের গল্প তো রোজকার ব্যাপার! ধীরে ধীরে সময় গড়ালেও শিমুলের মন থেকে মোছেনি সেই ঘটনার স্মৃতি! আজ এই কুড়ি বছর পরেও দোলের দিন শিমুল ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হয় না। রং খেলা তো দূর অস্ত! আর ওর দরকার হয় ঋজুকে। ওই একটা দিনের জন্যে হলেও! প্রতি বছর ঋজু দোলে ছুটি নিয়ে বাড়ি যায়। শিমুলের পাশে থাকতে চেয়েছিল সারা জীবন, শিমুলের বাড়ির লোক তা হতে দেয়নি কিন্তু শত সমস্যা সত্ত্বেও এই একটা দিন শিমুল ঋজুকে চায়! এত গুলো বছর পরেও সেই দুঃসহ স্মৃতি আর একটা অফুরান ভালোবাসা শিমুল ঋজু দুজনকেই মনে পড়িয়ে দেয় এক মিশ্র অনুভূতির কথা!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register