- 9
- 0

কথায় কথায় যাওয়া যাক শ্রীরামপুরের বিখ্যাত গোস্বামীদের কথায়। গোস্বামীদের সমস্ত সম্পত্তি, জায়গা জমি একরকম শ্যাওড়াফুলীর রাজার পৃষ্ঠপোষকতাতেই। আসা যাক সেই গল্পে। শান্তিপুরের পরম বৈদান্তিক রামগোবিন্দ গোস্বামী তাঁর স্ত্রী সমেত শান্তিপুর থেকে চলেছেন কলকাতার দিকে। রামগোবিন্দ শান্তিপুরের বিখ্যাত পন্ডিত ভীম তর্কপঞ্চাননের মেয়ের ঘরের নাতি। ভীম হলেন শান্তিপুরের চৈতন্য পার্ষদ শ্রী অদ্বৈত আচার্যের বংশধর। সুতরাং বংশ সূত্রে রামগোবিন্দের শিরায় বৈষ্ণব রক্ত বইছে। কলকাতা যাত্রাকালে শ্রীরামপুরের কাছে স্ত্রীয়ের প্রসবযন্ত্রণা শুরু হলে একরকম বাধ্য হয়েই নৌকা বাঁধতে হল ঘাটে। স্থানীয় মানুষের সহায়তায় একটি ফুটফুটে সন্তান প্রসব করলেন রামগোবিন্দের স্ত্রী। এদিকে খবর পৌঁছলো শ্যাওড়াফুলী রাজ মনোহরচন্দ্রের কাছে। দানধ্যানে তাঁর নামডাক জগতজোড়া। তাঁর রাজ্যের সীমানায় পরম ভাগবত রামগোবিন্দ গোস্বামীর স্ত্রী সন্তান প্রসব করেছেন শুনে শ্রীরামপুরে গঙ্গাতীরেই প্রচুর জায়গা জমি দান করলেন তিনি। রামগোবিন্দ রাজার দান গ্রহণে অস্বীকার করে একটি কড়ির বিনিময়ে কিনে নিলেন সেই জায়গা। এভাবেই কালের চক্রে শান্তিপুরের রামগোবিন্দের হাত ধরে গোস্বামী পরিবার এসে পৌঁছলো শ্রীরামপুরে। এরপর শুধুই উত্তরণের গল্প। গোস্বামী পরিবারের রামনারায়ণ গোস্বামী ও হরিনারায়ণ গোস্বামীর কথা কিছু আগে উল্লেখ রয়েছে। ড্যানিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান হিসাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে সম্পদ বৃদ্ধি করেন হরিনারায়ণ। এছাড়াও বংশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির মূল কান্ডারী হিসাবে যাঁদের ধরা হয়, তাঁরা হলেন রঘুরাম গোস্বামী ও রাজা কিশোরীলাল গোস্বামী। রঘুরাম প্রথমে ছিলেন কলকাতার বিখ্যার জন পামার কোম্পানির মুৎসুদ্দি। পরে তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের শেয়ারহোল্ডার হিসাবেও প্রচুর উপার্জন করেন। ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক পরে উঠে গেলেও তিনি আগেই সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ভাগ্যজোরে বিশাল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পান। শোনা যায় ১৮৪৫ সালে ড্যানিশরা শ্রীরামপুর বিক্রি করে দেবার সিদ্ধান্ত নিলে রঘুরাম একাই ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সমগ্র শহরটা কিনে নিতে চান। কিন্তু ব্রিটিশরা শেষমেশ আর ১ লক্ষ টাকা বেশি দিয়ে ১৩ লক্ষ টাকায় শ্রীরামপুর ক্রয় করে। এমনই ছিল শ্রীরামপুরের গোস্বামীদের প্রতিপত্তি। পরে রঘুরামের পৌত্র কিশোরীলাল 'রায় বাহাদুর' ও 'রাজা' উপাধি পান। আজও রাজা কিশোরীলাল গোস্বামীর কাছারী বাড়িটি থেকেই শ্রীরামপুর পৌরসংস্থার কাজ রোজ পরিচালিত হয়। শ্রীরামপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোও এক জীবন্ত ইতিহাস। পরিবারের মানুষদের কাছে শোনা যায় এই পুজোয় সংগীতানুষ্ঠানে গান গেয়ে গেছেন অ্যান্টনি কবিয়াল, ভোলা ময়রা থেকে বাগবাজারের রূপচাঁদ পক্ষীরাও।
0 Comments.