Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || রবি আলোয় একাই ১০০ || সংখ্যায় ইন্দ্রাণী ঘোষ

maro news
T3 || রবি আলোয় একাই ১০০ || সংখ্যায় ইন্দ্রাণী ঘোষ

রবীন্দ্রনাথ ও আজকের লেখালিখি 

রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে লেখার সাহস জোগাড় করতেই তো কতদিন লেগে গেল, তাও আবার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে । মোদ্দা কথা তাঁকে নিয়ে লিখতে বসলেই তো পন্ডিতদের তেড়ে আসার কথা । তা বাপু যে যাই বলুক রবি ঠাকুরের দেশে জন্মে কেউ দু এক কলম লেখে নি লুকিয়েচুরিয়ে বা নিদেন পক্ষে সংসারের হিসেবের খাতার পিছনে বা ক্যাশমেমো, বা ধোপার হিসেবের স্লিপের পিছনদিকে, তা তো হবে না ।

যতই সুনীল, শক্তি, সাহিত্যে জোয়ার আনুক না কেন শেষ অবধি ফিরতে হয়েছে তাদেরও সেই রবি ঠাকুরের কাছেই । সুনীল, শক্তি, সন্দীপনের মত ঝোড়ো কলম না হলেও, কেমন লিখছেন আজকের মেয়েরা? এই ফেসবুক বা অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদের কেমন গতিবিধি? কফি হাউসে টেবিল চাপড়ে, মধ্যরাতে কলকাতা শাসন না করে, বরং সংসার, হেঁসেল, কেরিয়ার ইত্যাদি সামলে কেমন করে একফালি রুমালের মত আকাশে ডানা মেলছেন তাঁরা?

আমি কিন্তু কয়েকজনের মধ্যে এই রবীন্দ্রযাপন প্রায় প্রতিদিন দেখি ।

শ্যামলী আচার্য - অত্যন্ত জোড়ালো কলম, শ্যামলী ডিজিটাল এবং ছাপার মাধ্যম দুটোতেই বেশ সাড়া ফেলেছে । সম্প্রতি শ্যামলীর বই 'প্রেমের বারোটা' তে 'গুড্ডির বয়ফ্রেন্ড' গল্পে রবি ঠাকুরের উপস্থিতি চমক লাগিয়ে দিয়ে যায় । গুড্ডি একেবারেই সাধারন, তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে কম আকর্ষণীয়া, হীনমণ্যতায় ভুগে গলা দিয়ে সুরটুকু ছোটবেলায় বার করতে পারে নি। সুন্দরী, সফল, আকর্ষণীয়া দুই দিদিদের বিয়ে হয়ে যাবার পর, মায়ের রোগশয্যায় মায়ের জন্যই রবিগান তাঁর কন্ঠে নেওয়া। সে স্বামী পরিত্যক্তা, সামান্য বেসরকারী সংস্থায় চাকরী করে। স্বামী সিংহটি গুড্ডির রবি ঠাকুরের গানের ছত্র ভরা ডায়েরি দেখে ভাবে পরকীয়ায় লিপ্ত গুড্ডি । ডায়েরিটি কোর্টে পেশ করে গুড্ডির স্বামী সিংহটি বলে 'দেখুন ইওর অনার, কাকে লিখেছে এসব?' গুড্ডি হাসে । গুড্ডি বাবার দেওয়া মাথার উপরের ছাদ, আর ফুটফুটে কিশোরী মেয়েকে নিয়ে জীবন সাম্পানের হাল ধরে থাকে, গুড্ডিকে ভরসা জোগান একমাত্র রবি ঠাকুর অন্য কোন ঠাকুর নন । সেই গুড্ডির সাজতে ইচ্ছে করে একমাত্র পঁচিশে বৈশাখের দিন, আর তাই কিশোরী মেয়ে যখন তাঁর ডায়েরীর পাতায় পঁচিশে বৈশাখের আগের দিন লিখে ফেলে 'আমার মায়ের বয়ফ্রেন্ডের কাল জন্মদিন, তাঁর বাড়ী যেতে হবে সকালে উঠতে না পারলে কেস খাব । মা ইস ম্যাড ফর হার বয়ফ্রেন্ড ।' গুড্ডির চোখ থেকে জল চুঁইয়ে পরে । বৈশাখের হাওয়া জানলার পর্দারা উড়তে থাকে । শ্যামলীর গুড্ডির কথা যখন আমি লিখছি একইভাবে বৈশাখের হাওয়া আমার জানলাতেও দামাল হয়ে উঠছে ।

আরেক কন্যা সাবিনা ইয়াসমিন । সে যখন তাঁর রান্না সাজিয়ে রেসিপি লেখে রবি ঠাকুরের এক মজার গল্পের কথা মনে পড়ে । রবি ঠাকুর প্রতিমা দেবী কে বলেছিলেন ঘুগনির উপর লাল লঙ্কা দিতে । হলুদের উপরে লাল রঙের বাহার বড় মানায়। সাবিনার রেসিপি রান্নার ছবি বারবার এই গল্পটা মনে পড়ায় । রন্ধনশিল্পে নান্দনিকতা সাবিনাকে দেখেই জানা যায় ।

শ্যামশ্রী চাকি - এ মেয়ে গবেষণা করে রান্না করে । ঠাকুরবাড়ীর রান্না, হারিয়ে যাওয়া রান্না, এ মেয়ের নখদর্পনে । তেমন লেখেও, শ্যামশ্রীর 'ফেলে আসা খাঁচার গল্প' তে ভক্তদাস টিয়াপাখীকে আমার অতিথির তারাপদ মনে হয়েছিল । মুক্তির আনন্দে ডানা মেলা বিহঙ্গ, মনে হয় পাঠকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চাড়িয়ে যাচ্ছে মুক্তির আস্বাদ । ডাক্তার, সুলেখিকা সোনালিদি যখন ভোরবেলা তার দক্ষিণের এক চিলতে বারান্দার বেলফুলের টবের পাশে বসে 'স্টেথোস্কোপের পান্ডুলিপি' লেখে, কে জানে কেন একটা ছবি ভেসে ওঠে। রবি ঠাকুরের নতুন বৌঠানের নন্দনকাননের এক চিলতে ছবি । এই বুঝি ছাঁচি পান, বেলের গন্ধ, বৈশাখের বাতাসকে আত্মস্থ করে বেজে উঠবে জ্যোতিদাদার এস্রাজ, আর সৃষ্টি হবে সুর ।

শ্যামলী, শ্যামশ্রী, সাবিনা, সোনালীদি সকলে ঠাকুরবাড়ীর সময় থাকলে নিদেন পক্ষে একেকজন সরলা দেবী, স্বর্ণকুমারী দেবী হয়েই যেতেন । এখন না হয় সেই যুগ থেকে কয়েক যোজন দুরে বসে লেখালিখি করছেন, তবু তো ফেসবুকেও আলো আসছে । রবির আলো ।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register