Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে অয়ন ঘোষ (পর্ব - ১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে অয়ন ঘোষ (পর্ব - ১)

বেদ-কথা:

বিদ্ হইতে বেদ শব্দের উৎপত্তি। বিদ + অচ্ - বেদ। বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান অথবা পরমজ্ঞান। জ্ঞানেন্দ্রিয় আমাদের ইন্দ্রিয়লব্ধ পৃথিবীর সন্ধান দেয়। কিন্তু যে পৃথিবী রয়ে গেল আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়ের বাইরে সেই পৃথিবী অনুভব করতে হলে আমাদের অতীন্দ্রিয় পরমজ্ঞান লাভ করতে হবে। বেদ থেকে আমরা সেই পরমজ্ঞান পেতে পারি। মহর্ষি যাগ্যবল্ক এর কথা অনুযায়ী প্রত্যক্ষ বা অনুমানের দ্বারা যে জ্ঞান লাভ করা যায় না, সেই জ্ঞান অতীন্দ্রিয় স্বরূপ একমাত্র বেদ হইতেই সেই অতীন্দ্রিয় জ্ঞান লাভ করা সম্ভব। বেদ ধর্মতত্ত্ব ও ব্রহ্মতত্ত্ব প্রতিপাদক শ্রুতি বচন। বৈদিক আচার্যদের কথা অনুযায়ী বেদ থেকে ধর্মতত্ত্ব ও ব্রহ্মতত্ত্ব তথ্য জানা যায়। মনু বেদকে অখিল ধর্মের মূল বলে চিহ্নিত করেছেন। বেদ শব্দের বেশকিছু প্রতিশব্দ প্রচলিত আছে যথা - 'শ্রুতি' 'ত্রয়ী' 'আগম' 'ছন্দস্'। আদিকাল হতে গুরু শিষ্য পরম্পরা ও শ্রবণবিধৃত বাণী স্বরূপ। লিপিবদ্ধ না হওয়ার আগে বেদ যুগযুগান্তর ধরে স্মৃতিতে সঞ্চিত ও রক্ষিত হত। বেদের নাম শ্রুতি হওয়ার কারণ বৈদিক সম্প্রদায় আচার্য, শিষ্য, প্রশিষ্য, প্রশিষ্যের শিষ্য পরম্পরা পরম জ্ঞানের আকর বেদকে শ্রুতিতে স্মৃতিতে রক্ষা করত। ঋষি বাদরায়ন ব্রহ্মসূত্রে শ্রুতি সংজ্ঞা ব্যবহার করেছেন। ছন্দস্ শব্দটি পাণিনি তাঁর ব্যাকরণ সূত্রে ব্যবহার করেছেন। উনি বৈদিক সংস্কৃতকে ছন্দস্ সংজ্ঞা দ্বারা ও লৌকিক সংস্কৃতকে ভাষ্য সংজ্ঞা দ্বারা স্বীকৃত করেছেন। বেদকে 'ত্রয়ীবিদ্যা' বলা হয়ে থাকে বা কেবলমাত্র 'ত্রয়ী'ও বলা হয় এখানে 'ত্রয়ী' বলতে ঋক, সাম, যজুর্বেদ এই তিন বেদকে একত্রে বোঝানো হচ্ছে। এটাই প্রচলিত মত। এখান থেকে অথর্ববেদকে বাদ রাখা হয়েছে। এই বিষয়ে বেশ কিছু যুক্তি রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান যে যুক্তি তা হলো - ঋক, সাম, যজুর্বেদ - এই তিন বেদের যজ্ঞের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। অথর্ববেদ যজ্ঞের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় তাই অথর্ববেদ ত্রয়ীর অন্তর্ভুক্ত না। কোন কোন বেদ পারঙ্গম পন্ডিতের মতে 'ত্রয়ী' বলতে প্রথম তিনটি বেদকে বোঝানো হয়নি। 'ত্রয়ী' বলতে ঋক, সাম, যজু এই ত্রিবিদ মন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। ঋষি জৈমিনি ঋক, সাম, যজু এই তিন প্রকার মন্ত্রের লক্ষণ নির্দেশ করেছেন। বেদের যে মন্ত্রগুলিতে অর্থানুসারে ছন্দ ও পাদব্যবস্থা আছে সেই মন্ত্রগুলিকে 'ঋক' বলা হয়। ঋকসকলের মধ্যে যে মন্ত্রগুলো গীত হতে পারে সেগুলিকে 'সাম' বলা হয়। ঋক ও সাম মন্ত্র ব্যতীত আর যে সকল মন্ত্র অবশিষ্ট রইল সেই সকল মন্ত্রসকলকে যজুঃ সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register