Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৫)

পদাতিক

নদীর নাম বাগদা। কোত্থেকে এসে যে কোথায় হারিয়ে গেছে, তার খবর একমাত্র নদীই জানে। হেঁড়িয়া ছেড়ে রাস্তা দৌড়োচ্ছে কাঁথি হয়ে দীঘার সৈকতের দিকে। সেই পথে হেঁড়িয়া আর মারিশদার মাঝে কালীনগর বাসস্টান্ডে নেমে উল্টোদিকে যে পথ এগিয়েছে মেঠো বাঁশীর সুর বুকে নিয়ে, সেই পথ ধরে এগোলে প্রথমেই পড়বে দীঘা হয়ে উড়িষ্যা হয়ে অচিনপুরে যাওয়ার রেল লাইন। আকাশের দিকে বুক চিতিয়ে শুয়ে থাকা সেই রেললাইন পেরিয়ে রাস্তা এগিয়ে গেছে একেবেঁকে একটা তিন রাস্তার বাঁকে। সুকুনিয়া মোড়। সেই রাস্তা সোজা এগিয়ে গেছে সুকুনিয়া গঞ্জের দিকে, আর ডানদিক ধরে কিছুটা এগোলে নদীর বুকে যে সেতু, তার নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে বাগদা নদী। আর সেই নদীর ধার ধরে গড়ে উঠেছে একটা ছোট্ট জনপদ -- " পাঁউশি "। এই মিষ্টি সুরেলা নামের জনপদের বাসিন্দারাও বেশ মিশুকে। সেতুর এপারওপার জুড়ে খাপছাড়া খাপছাড়া ভাবে মাথা তুলেছে কিছু দোকান। চা, সেলুন, দর্জি, ভুষিমাল ( মুদি), দুতিনটা ফলের দোকান, সাইকেল সারাইএর দোকানের সাথে গলা জড়াজড়ি করে মিলেমিশে দাঁড়িয়ে আছে একটা ওষুধের দোকান। " রেবতী মেডিকেল হল "। এরকম অঞ্চলের ওষুধের দোকান যেরকমটা হয়। কিছু কফ সিরাপ, গ্যাস, অম্বল, পেটখারাপ, হজমের কালো রঙা সিরাপের বোতল, আর ডেটল, ফিনাইলের বোতল দিয়ে সাজানো কাঁচ ভাঙা শো কেস। দোকানের সামনে কাউন্টার বলতে একটা পুরোনো খবরেরকাগজ ঢাকা একটা নড়বড়ে টেবিল। কটাই বা পরিবারের বাস? দিনে কত টাকারই বা লেনদেন হয়? একান্নবর্তী পরিবারের সম্পত্তি এই দোকান যিনি চালাতেন, দোকান চালানোর দিকে তাঁর যতো না মনযোগ ছিলো, তার চাইতেও গ্রাম ঘুরে বেড়ানোতে তার আগ্রহ অনেক বেশী। সেতু ধরে নেমে কিছুটা পশ্চিমমুখী হাঁটলে একটা কালীমন্দির, আর তার গা ধরে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গেছে একটা কাঁচা রাস্তা। সেই কাঁচা রাস্তার বাঁদিকে, নদীর শরীরে শরীর মিলিয়ে যে খড়ের আটচালা, সেই আটচালার নীচে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে করণ পরিবার। নদীর কোলে বাস, সে কারণেই বুঝি বাগদার বুক চিরে এগিয়ে যাওয়া খালের বুকে নৌকো চালিয়ে যাত্রী পারাপারের কাজ করেন পরিবারের কর্তা খগেন্দ্রবাবু। নদীর বুকের রূপোলি শস্যেরা খলবল করে ধরা দেয় তার খেপজালে। বর্ষার থৈ থৈ জলে একাকার হয়ে যায় ঘরদোর। ঘরের ভেতর ঘুরে বেড়ায় মাছ, সাপ, জলজ জীব। অথচ নদীর সাথে অপূর্ব এক সখ্যতায়, মিতালী পাতায় করণ পরিবার। সেই পরিবারেরই সন্তান বলরাম, শিখে নিতে থাকেন যুদ্ধ করে কীভাবে টিকে থাকতে হয়। অভাব অনটন আর পড়াশোনা সমতালে এগিয়ে চলে। মেধাবী ছাত্র বলরাম, শুধুমাত্র গতানুগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে নিজেকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন জীবনমুখী শিক্ষায়। সে শিক্ষাই তাঁকে দিনে দিনে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। --" আপনি বললে বিশ্বাস করবেন না দাদা, তিন তিনটে মেয়ে নিয়ে একদিকে অমানুষের মতো লড়াই করে চলেছি, আর তিনি দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে মানুষের বিপদে আপদে ছুটে বেড়াচ্ছেন "। কথাগুলো একনাগাড়ে বলে একটা হাঁফ ছাড়েন তাঁর স্ত্রী। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register