Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৮)

পদাতিক

বলরাম করণ - একটা নাম। শুধুই কী একটা নাম? নাকি আধুনিক সভ্য সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার একটা প্রতীক ? যিনি অনেক রাষ্ট্রনায়কের মতোই উঠে এসেছেন একেবারে ঘাসেঢাকা মাটির বুকে পা রেখে। তরুণ বয়সের বলরামবাবুকে যিনি দেখেছেন তিনি জানেন কী আশ্চর্য মায়াবী দুটো চোখে দুপাটি শক্ত চোয়ালকে লালন করেছেন। দুটোঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি যেন মনুষ্যত্বকে টেনে এনে নামিয়েছে তার চেতনার পরিসরে। কী ছিলেন বলরাম করণ? এমন একজন ওষুধ বিক্রেতা যার দোকানে ধারের খাতা দোকানটাকে গিলে খাচ্ছিলো। এ সময় তিনি একটা সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনে একজন কর্মী হিসেবে যোগ দেন। তিনি যোগ দিয়েছিলেন না তার ভাগ্য বাধ্য করেছিলো তাঁকে যোগদান করাতে কে জানে? কর্মসূত্রে তাঁকে চষে বেড়াতে হতো আশেপাশের গ্রামগঞ্জ। কখনও মোটরসাইকেলে আবার কখনোবা সাইকেলে করে তিনি সেই সংগঠনের কাজে সকাল থেকে রাত দৌড়ে বেড়াতেন। এরভেতরেই একদিন তিনি লক্ষ্য করেন একটি শিশুকে, বিয়েবাড়ির উচ্ছিষ্ট ফেলার জায়গায় মানুষের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট থেকে শিশুটি হাতেপায় ঘা নিয়ে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। শিশুটিকে তো অনেকেই দেখেছেন, দেখেছেন বলরামবাবুও। ঠিক এখানেই অন্যান্যদের সাথে ঈশ্বর প্রভেদ গড়েছেন তাঁর। তিনিও লক্ষ্য করেছেন শিশুটিকে। কতই বা বয়েস শিশুটির? তিন ! বড়জোর চার বছর। বলরামবাবু পরমযত্নে তাঁর বাড়িতে এনে তুললেন শিশুটিকে। বাড়িতে এনে হাতপা সাফ করালেন। তাঁর বাড়িতে তাঁর তিন মেয়ে, স্ত্রী আর তিনি নিজে। তিনজনই কন্যা। বড়টি বছর দশেকের আর ছোটটি বড়জোর তিন। রাতেরবেলা মাটির মেঝেতে পাটের বস্তার ঢালাও বিছানা আর মাথার ওপর গোয়ালের গরুদের জন্য ব্যবহৃত লম্বা মশারী। স্ত্রী দেখলেন, কিন্তু প্রতিবাদ করলেন না। তিনি প্রতিবাদ করলে হয়তো এ গল্পটাই লেখা হতো না। তাঁর স্ত্রী তার বোনের বাড়ি কাজ করে খুদকুঁড়ো নিয়ে আসেন, বাদা ঘেঁটে তুলে আনেন কচুশাক, কলমী, হেলেঞ্চা... অভাবের সংসারে যুক্ত হলো নতুন করে অভাবের উপকরণ। স্ত্রী বুঝলেন যে প্রতিবাদ করে কোনো লাভ হবে না। যে মানুষটাকে নিয়ে তিনি ঘর বেঁধেছেন, তিনি আর অন্য দশপাঁচজন মানুষের মতো নন। তিনি একেবারেই অন্যরকম। তিনি পাঁচজনের ভীড়ে মিশে যান না, তিনি এক হয়েও পঞ্চম। পুরোপুরিভাবেই অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র একজন মানুষ। এরপরই ফের আর একটি ঘটনা ঘটলো বলরামবাবুর জীবনে। পাশের গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে তিনি সংসারের অভাব অভিযোগের কথা ভাবতে ভাবতে সাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ একজন শিশুকন্যার চিৎকার শুনে তিনি প্যাডেল করা ছেড়ে নেমে পড়েন। ইতিমধ্যেই সেই চিৎকার শুনে দুএকজন গ্রামবাসী গুটিগুটি পায়ে সেই বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, যেখান থেকে সেই চিৎকারটা আসছিলো। বলরামবাবু বাইরের উঠোনে দাঁড়িয়ে গৃহকর্তাকে ডাকলেন। তিনি এসে চিৎকার করে বলতে লাগলেন -- তাঁর বাড়ির বিষয়ে অন্যকারো নাক গলানোর দরকার নেই। এক ধমক দিয়ে গৃহকর্তার চিৎকারকে থামিয়ে দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলেন তিনি। দেখলেন একজন শিশুকন্যা মেঝেতে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। বিষয়কি সেটা জানতে চাইলেন শিশুটির কাছে। শিশুটির হাতে পিঠে দগদগে ফোস্কার দাগ। ওই বাড়িতে কাজ করতো শিশুটি। কোনো কারণে কিছু ভুল হয়তো করে ফেলেছিলো সে, গৃহকর্ত্রী রাগের জ্বালা মেটাতে তার গায়ে কাপশুদ্ধু গরম চা ঢেলে দিলে বাচ্চামেয়েটির হাত পিঠ সব পুড়ে যায়। প্রচন্ড রেগে বলরামবাবু পুলিশে খবর দেওয়ার হুমকি দিয়ে শিশুকন্যাটিকে ওদের কবল থেকে উদ্ধার করেন। মাঝ রাস্তায় এসে তাঁর টনক নড়ে। উদ্ধার তো করলেন কিন্তু এই বাচ্চা মেয়েটিকে নিয়ে যাবেন কোথায়! ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register