Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে অয়ন ঘোষ (পর্ব - ৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে অয়ন ঘোষ (পর্ব - ৭)

বেদ - কথা

বেদের প্রণয়ন নিয়ে হিন্দু পণ্ডিতদের মধ্যে অনেক ধরনের মতভেদ আছে। একটি প্রধানমত হল এই যে, বেদ কেউ লেখেননি বা প্রণয়ন করেননি বেদ চির শাশ্বত ও নিত্য প্রবাহমান। মানুষের এ পৃথিবীতে পদার্পণের পূর্বেও এটি বর্তমান ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সুতরাং বেদ কখনোই অনিত্য নয়। এটি যেমন কেউ সৃষ্টি করেননি তেমনই কারো দ্বারা এটি নষ্টও হবে না। আরো একটি মত হল বেদ ঈশ্বর-সৃষ্ট। ঈশ্বর নিজেই বেদের সৃষ্টি করে মানুষের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এটি ঈশ্বরের বাণী রূপ, যেমন ভাবে খ্রিস্টানদের মধ্যে গসপেলের ধারণা রয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে বেদ ঈশ্বরের বাণীরূপ হয়ে প্রাচীন ঋষিদের কাছে পৌঁছে ছিল। কিন্তু এই দুটি মত সম্বন্ধেই আমাদের মধ্যে দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব রয়েছে। মানুষের সৃষ্টির আগে থেকে মানুষের কথা-রূপ এ পৃথিবীতে বর্তমান ছিল এই বিশ্বাস অনেকেরই পক্ষেই রাখা সম্ভব না আবার ঈশ্বর নিজে অগ্নিস্তব, ইন্দ্রস্তব, নদীস্তব ও অশ্বমেধ যজ্ঞ এইসবের নিয়ম-কানুন রচনা করেছেন এই বিশ্বাস করাও অনেকের পক্ষে ভয়ানক কষ্টকর। পরমেশ্বর যিনি তিন গুণের অতীত, ত্রিগুণাতীত তার পক্ষে বিভিন্ন নিয়ম-কাননে ধর্ম ও আধ্যাত্ম চিন্তাকে বেঁধে রাখা বোধহয় সম্ভব নয় সুতরাং এই বিশ্বাস দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন বেদ মনুষ্য-সৃষ্ট। মানুষের উন্নততর জীবন ভাবনার প্রতীক এটি। এবার যেটা দ্বর্থ্যহীন ভাবে জানা প্রয়োজন বেদ যেভাবেই সৃষ্টি হয়ে থাকুক বেদের সংকলন কিন্তু মনুষ্য দ্বারা নির্ধারিত। মন্ত্রের ভিন্নতা অনুযায়ী যে বেদকে ভাগ করা হয়েছে একথা বেদ অধ্যয়ন করলে বোঝা যায়। ঋগ্বেদেরবেদের মন্ত্র ছন্দবদ্ধ, যজুর্বেদের মন্ত্র গদ্যে বিবৃত এবং দেবতাদের যজন ও যজ্ঞানুষ্ঠান তার একমাত্র উদ্দেশ্য, সামবেদের মন্ত্র গান। ঋগ্বেদের মন্ত্র গীত হয় আর দ্বিতীয় হলে তাকেও সাম বলা হয়। অথর্ব বেদের মন্ত্র অনেক বেশি লৌকিক এখানে মারণ, উচাটন, বশীকরণ ইত্যাদি বিষয়েও কথা বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সামবেদের প্রভাব ও জনপ্রিয়তা বেশি কারণ এটি যেহেতু গীত হতে পারে তাই মানুষ অনেক বেশি এটার সাথে সাযুজ্য খুঁজে পায়। এমনকি গীতা গ্রন্থেও পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন - "বেদানাং সামবেদোস্মি দেবানামিত্যাদি"। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যারা বেদ সমন্ধে খোজ রাখেন বা বেদ চর্চা করেন তাদের কাছে ঋগ্বেদ হলো সর্বোত্তম। এছাড়া এ কথা অনস্বীকার্য যে ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলোর প্রাচীনত্ব সর্বাপেক্ষা বেশি। আগেই বলেছি প্রত্যেকটি বেদের দুটি অংশ - ব্রাহ্মণ ও সংহিতা আর ব্রাহ্মণ অংশের আরো দুইটি ভাগ আছে আরণ্যক ও উপনিষদ। এই বিষয়ে যাওয়ার আগে সংহিতার কথা বলে নিলে ভালো হবে। ঋগ্বেদে রয়েছে দশটি মন্ডল ও আটটি অষ্টক। এক একটি মন্ত্রকে বা সংহিতাকে বলে ঋচ্। অনেক ঋষি মিলে মিশে এক একটি বেদ রচনা করেছেন। নির্দিষ্ট এক দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত নির্দিষ্ট একজন ঋষির সৃষ্টি করা মন্ত্রগুলোকে বলে সূক্ত। অনেক ঋষির মিলিত ভাবে সৃষ্টি করা সূক্ত সব যদি কোনো একজন ঋষি একসাথে সংকলন করেন তাহলে সেটিকে বলে মন্ডল। এই ধরনের দশটি মন্ডল রয়েছে ঋক সংহিতায়। চলবে...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register