Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় শর্মিষ্ঠা ঘোষ

maro news
T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় শর্মিষ্ঠা ঘোষ

ভোকাট্টা

আধ শতক ছুঁই ছুঁই একটা গাছের ডালে পালায় আটকে থাকে কত যে ভোকাট্টা ঘুড়ি আর তার তলায় ছেঁড়া সুতো লাটাই নিয়ে এক হতভম্ব শৈশব কৈশোরের মায়াবী সিল্যুয়েট । মনে হয় ওকে গাল টিপে বলি ," ইটস্ লাইফ, মাই বেবি ! " জীবন থেকে ভোকাট্টা হয়ে যায় একবার যে সময় তাকে আর ফেরানো যায়না । আমাদের ছোটবেলা মাঝবেলা বড়বেলা ঢলে পড়ে এখন বুড়োবেলা কিংবা দ্বিতীয় শৈশবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ঘুড়ির মতো উড়িয়ে দিই স্মৃতির রংবেরঙের ছররা। এখন আর যে কটা দিন আছি এইসব ছুটন্ত সময় কোলাজ বুকের ভেতরে নিয়ে বাঁচা। আর কাটা ঘুড়িতে চলে গেছে যে সব দিন চলে গেছে যে সব স্মৃতির মানুষ আমার চারপাশের কত যে প্রিয় রং গন্ধ ছবি তাদের ছেঁড়া সুতোর স্মৃতিটুকু যে রয়ে গেছে আজও হাতে । কোথায় কোন আগাছায় জড়িয়ে গেছে কাটা ঘুড়ির খানিক সুতো কোন কাঁটা গাছে লাট খাচ্ছে আমার স্মৃতির আর পুরনো সময়ের কিছুটা । আমিও লাট খাই তার মায়ায় মায়ায়। দৃষ্টিপথ অস্বচ্ছ হতে হতে আচমকা যেন বৃষ্টি নামে। ঘনঘোর শ্রাবণ ছাড়াও যখন তখন। ভিজে যায় স্মৃতি। কাটা ঘুড়ি। মাঞ্জা সুতোর ধার যায় খসে বয়সের সাথে সাথে। সে তখন পোষ মানা বুড়ো ঘুড়ি মানে মেয়ার । ঘুড়ি ঘুড়ি করছি বটে আমার হাতে ঘুড়ি কোনদিন ঠিকঠাক ওড়েনি। চেয়েচিন্তে ২৫ বা ৫০ পয়সার ঘুড়ি তার সাথে কাঠিতে মায়ের উল পেঁচিয়ে লাটাই। হাতে নিয়ে দৌড়ের সাথে সে ঘুড়ি খানিক উঠে নেমে আসত নীচে । কোথাও আটকে ছিঁড়ে যেত ফড়ফড়। বাবা ছোটবেলায় দুর্দান্ত নাকি ঘুড়ি বানাত। তাই বন্ধুমহলে বাবার নাম ছিল কাইট মাস্টার। এক পয়সার রঙিন কাগজ কিনে চারখানা ঘুড়ি বানিয়ে তিনটে তিন পয়সায় বিক্রি। পরের বারের খরচ উঠে যেত । এসব গল্প শুনেই যেন বাড়াবাড়ি রকম গম্ভীর লোকটার আড়ালে সহাস্য এক ছোটবেলা আমাদের কাছে ধরা দিত। আমাদের জেনারেশান এ আসলে ঘুড়ি ওড়াতো আমার দাদাভাই মানে জ্যাঠতুতো দাদা। শীত পড়লেই শুরু হতো তোড়জোর । মাঞ্জার আঠা বানানো। কাচের চুড়ি গুঁড়ো কর রে। বেলের আঠা গদের আঠা ভাতের আঠা ময়দা গুলিয়ে আগুনে জ্বাল দিয়ে আঠা বানাও রে । বিবিধ আঠা আর কাচের গোঁড়ো মিশিয়ে তৈরি হতো সেই মাঞ্জা। যত ধার তত সেই ঘুড়ির কদর। আমরা যারা কুচোকাঁচা ওর চ্যালাচামুন্ডা আমাদের কাজ ছিল ওর ফাইফরমাশ খাটা । সব রেডি হলে ঘুড়ি ধরে খানিক দূর দৌড়ে গিয়ে দিতাম উড়িয়ে। লাটাইয়ের কায়দার টানে পেঁচিয়ে ছেড়ে ডাইনে খেলিয়ে বায়ে হেলিয়ে ঝাপরা গাছের মাথা বাঁচিয়ে সেই ঘুড়ি যখন নীল আকাশে ডানা মেলতো আমরা হাততালি দিয়ে নাচতাম। যেন চন্দ্র যান লঞ্চ করেছে ইসরো । এমনই তার থ্রিল । লাল ঘুড়িতে নীল ঘুড়িতে হলুদ ঘুড়িতে সবুজ ঘুড়িতে ভাব ভালোবাসা ঝগড়া বিবাদ । লাগতো প্যাঁচ। সুমন চ্যাটার্জির গানের মত পেটকাটি চাঁদিয়াল রকমারি নাম তাদের। যার লেজ যত লম্বা হবে তত সে যেন গ্রেসফুল । পতপত করে শব্দ হতো হাওয়ায় । তার কি কেতা ! তখন তো আর ঘাড়ে স্পন্ডেলাইটিস ছিল না । হাঁ করে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ঘন্টার পর ঘন্টা। কারো ঘুড়ি কাটা পড়লেই দৌড় আর দৌড়। এদিক ওদিক পেঁচিয়ে আধা ঘুড়ি ছিঁড়েখুরে হয়তো উদ্ধার হত সে । সে ছিল আমাদের এক বিশাল সম্পদ। এই সব দিনগুলো পেরিয়ে আজকের জটিল জীবনে দেখি এখনো বিশ্বকর্মা পূজা হলেই শুরু হয় ঘুড়ির দিন। আমার ঘরের কেউ আর ঘুড়ি উড়ায় না । আফসোস আফসোস ! দাদাভাইটাও অকালে ভোকাট্টা হয়ে গেছে ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register