Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় স্বর্ণযুগে অমিত গোস্বামী (গুচ্ছ কবিতা)

maro news
কবিতায় স্বর্ণযুগে অমিত গোস্বামী (গুচ্ছ কবিতা)

১| সুরঞ্জনা

সুরঞ্জনা, তুমি আজও চেয়ে আছো প্রদীপের দিকে! উজ্জ্বল আলোয় কি খুঁজে চলেছ তুমি? হারাবার পথ? চলমান পৃথিবীর মূলসূত্র গেঁথে তুলে নিয়ে চৌদিকে যে সুর বাঁধছো প্রতিদিন, সে কী সব পাওয়ার শপথ! কত নদী চলে গেছে তোমায় একাকী ফেলে কত দেশে তীরতটে সব জল এসেও নিশ্চুপ, হয়ে আছে স্থির সময় ফুরিয়ে গেছে বলে তুমি প্রদীপের উষ্ণ আশ্লেষে এসে বলেছ কি – আমি সুরঞ্জনা, খুলে দেখাবো শরীর? ভয় কেন! চোখে চোখ রাখো, কন্ঠ তুলে বলো পরিস্কার এখন কি চাই? কেন প্রতিদিন খোঁড়ো বালির বিবর? কিছু প্রেম ছড়িয়েই থেকে যায়, শুধু শব্দ শোনা তার ভুল, তাই তুমি আজ হয়ে আছো শুধু বিবর্ণ অক্ষর মেঘে মেঘে দিন বেলা বয়ে গেছে, তবু চুম্বনক্ষত এঁকে দাও ঠোঁটে! শরীরে গভীরে আলোরঙ আঁকো! প্রেমের মানচিত্র ধুলোবর্ণ মাখা তথাপি নিয়ত সুখ খুঁজে চলে অভ্যস্ত রতি, শুধু পেরোবার সাঁকো।

২| আমি অন্য মেয়ে

দশ বছর বয়সে রংচটা ফ্রক পরে দেশ ছেড়েছিল পিছনে জ্বলছে ভিটে, লোভী চকচকে শার্দুল চোখ এড়িয়ে সীমার ওপার, মনে পোড়া দাগ থেকে গেল কাঁধের ঝোলায় সভ্যতা দুলিয়ে সে পৌঁছল এপারে দেশভাগ, কেবলই কান্নার মুখ মনে পড়ে প্রতিদিন এভাবেই…এভাবেই অতিক্রম করে সে কিশোরীবেলা পার করে যৌবন, নতুন সংসার, স্বামী-ছেলে-মেয়ে খেদহীন নিশ্চিন্ত জীবন, সংসার বাড়ে আড়ে ও বহরে এখন সে পঁচাশি, অন্তরে ডাক শোনে, পরপারের নয় ওপারের, ফেলে আসা দেশ তাকে ডাকে, নদী-মাঠ মসজিদের আজান, পুকুরের ঘাট, ঝাঁক বাঁধা পাখি চণ্ডীমণ্ডপ তাকে ডাকে, ঘাস চেরা পথ, শরত শিশির লুকোচুরি খেলা, এক্কাদোক্কা, ডাকে তাকে প্রত্যন্ত স্বদেশ চলে গেলে হয়, পাসপোর্ট, ভিসা, বিমানের মসৃণ ভ্রমণ মৃগয়া তো শেষ, যুদ্ধের শেষ ঘোড়া ফিরে গেছে আস্তাবলে হানাহানি নেই, আকাশে আলোকসজ্জা, নতুন পতাকা। তুমি যাও মা, আমি সব ঠিক করে দেই, ঘুরে এসো, ওইপারে বুক পেতে আছে যারা তারা আলোর সন্তান “ধূলিকে ভুলি নি, দু’চোখ জড়ান ঘুমে, কে বলেছে জাগি নি প্রহর, আমার পোশাকে রক্ত লেগে আছে মুছে দিতে আসে নি বিকেল, এসেছিল, বলেছে সে – ‘আমি অন্য মেয়ে’, কামালের কবিতাটা পড়িস নি তুই?” বললেন আমার মা, তিস্তাপারের মেয়ে, রংপুর দুহিতা।

৩| মানুষ ও মন্ত্যাজ

পৃথিবীর দেহ ছোট হয়ে গেছে আজ বন্দীজীবন যাপন সকলকার পালটে গিয়েছে মানুষ ও মন্ত্যাজ মানুষের বড় মানুষকে দরকার। ইচ্ছে আমার ঘরকুনো কোলাহল রোদ এসে তাকে কেবল জাগাতে চায় মেঘ সরে গেলে জমা বৃষ্টির জল ঝরে ঝরে পড়ে তোমার অপেক্ষায়। কতদিন তুমি আসো না গুনেছ দিন দাগ দিয়ে রাখো নতুন ক্যালেন্ডারে প্রতীক্ষারাও হয় না অন্তহীন সবাই কি আর সব কিছু হতে পারে? টেবিলে পেয়ালা পোড়া সিগারেট স্তুপ মোবাইল প্রেম আঁকশিটানেই শেষ শেষরাতে চাঁদ ডুবেছে আড়ালে ‘টুপ’ আমার কলমে বর্ণমালার দেশ। বর্ণের ছটা ছড়ানো আমার কাজ ছড়িয়েছি রঙ, চিত্রের সম্ভার পালটে গিয়েছে মানুষ ও মন্ত্যাজ মানুষের আজ মানুষকে দরকার।

৪| বাঙালি

আমার বন্ধু আশরাফ এসেছিল আমার বাড়িতে, আমার সাথে পড়ত, তখনও দেশভাগ হয় নি, আমরা বসতাম একই বেঞ্চিতে, পাশাপাশি একসাথে টিফিনবেলায় খাবার ভাগ করে খেতাম মা’র সাথে আলাপ করালাম, ‘নাম কি তোমার?’ ‘আশরাফ জুয়েল’ কদমবুসী করল আশরাফ ‘ওহ তুমি মুসলমান! আমি বাঙালি ভেবেছিলাম’ ‘আমি তো বাঙালি’ আশরাফ মা’কে বলেছিল। ‘ও তাই বুঝি? মুসলমানরাও বাঙালি হয় ? কিছুদিন আগে হিথরো এয়ারপোর্টে বসে আছি হঠাৎ একটি তরুন হাসিমুখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল ‘ভাইজান কি বাঙালি নি?’ আমি বললাম ‘হ্যাঁ’ ‘ঢাকার থন আইলেন?’ আবার তরুনের প্রশ্ন আমি বললাম, ‘না, আমি কলকাতা থেকে...’ ‘তাইলে বাঙালি নিজেরে ক্যামনে কন আপনে ?’ ওহ, তাই তো, আমি তো ইন্ডিয়ান, বাঙালি নই তরুনকে বললাম,’ঠিক, আপনার নাম কি ভাই?’ ‘আশরাফ’, ইতিহাস ঠিক প্রতিশোধ নিয়ে যায়।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register