Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || সংখ্যায় রীতা চক্রবর্তী

maro news
T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || সংখ্যায় রীতা চক্রবর্তী

প্রেরণাদাত্রী নতুনবৌঠান

ঠাকুর পরিবারের অনেককালের খাজাঞ্চি ছিলেন কৈলাশ মুখুজ্জে।রসিক এই মানুষটি রবীন্দ্রনাথের ছোটবেলায় অতিদ্রুত মস্ত একটা ছড়ারমত বলে শিশুরবির মনোরঞ্জন করতেন। সেই কবিতার নায়ক অবশ্যই রবি এবং তাতে যে ভূবনমোহিনী ভাবী নায়িকার বর্ণনা ছিল তা যেকোন বয়সের মানুষের চিত্ত চঞ্চলকরে তোলার জন্য যথেষ্ট। কৈলাশ মুখুজ্জের এই ছড়ার অনর্গল শব্দচ্ছটা ও ছন্দের দোলায় শিশুমনও তাই অনায়াস চঞ্চল হয়ে উঠত। কবির মানসলোকে রূপকথার রাজকন্যার ঘুম ভেঙেছে এই কবিতার সোনার কাঠির ছোঁয়ায়। আটাত্তর বছর বয়সে লেখা "আকাশপ্রদীপ" কাব্যগ্রন্থের "বধূ" কবিতায় মুখুজ্জেমশাইর ছড়াটি কাব্যরূপ লাভ করে। "গলায় মোতির মালা, সোনার চরণচক্র পায়ে" - এই 'নারীমন্ত্র আগমনী গান' বালক রবির মনকে বিশেষভাবে আবিষ্ট করে রেখেছিল। শৈশবের সেই স্বপ্ন সরণিতে 'সোনার চরণচক্র পায়ে'একদিন এল কবির মানসলোকের রাজকন্যা জ্যোতি'দাদার নববিবাহিত বধূরূপে নয় বৎসর বয়সী নতুনবৌঠানের বেশে। ছাদের রাজ্যে নতুন হাওয়া বইল। নতুন বৌকে পাশে নিয়ে দিদি যখন ছাদে বেড়াচ্ছে তখন কাছে যাবার চেষ্টা করতেই ...." যাও বাইরে যাও" বলে ধমক খেতে হত। অথচ নতুন বৌয়ের সবেতেই কেমন সহজ অধিকার। অন্তঃপুরের সব জায়গায় তার সহজ বিচরণ। মনে তার প্রতি ঈর্ষা দেখা দিত।

স্নেহের কাঙাল শিশুরবির ভাগ্যের চাকা ঘুরেছিল এগারো বছর নয় মাসে উপনয়নের পর (১২৭৯ সালের ২৫শে মাঘ)।মহর্ষি পিতা ডালহৌসি পাহাড়ের শৈলপ্রবাসে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পথে কলকাতা থেকে বোলপুর, সাহেবগঞ্জ, দানাপুর, এলাহাবাদ, কানপুর হয়ে অমৃতসরে পৌঁছান। সেখানে একমাস বিশ্রামকরে চৈত্রমাসের শেষে ডালহৌসি পাহাড়ের বক্রোটার সর্বোচ্চ শিখরচূড়ায় পৌঁছান। ১২৮০সালের আষাঢ় মাসে মহর্ষিদেবের "জীবন্ত পত্রস্বরূপ" ডালহৌসি থেকে ফিরে আসার পর অন্তঃপুরের সববাধা দূরকরে মায়ের ঘরের সভায় খুব বড় আসন দখল করে বসলেন। ছোটবেলা থেকে যে আদর পাওয়ার জন্য তিনি লালায়িত ছিলেন সেই স্নেহ ভালবাসা একেবারে সুদসমেত পেয়ে হয়ত একটু বেসামাল হয়ে গিয়েছিলেন।

১২৮১ সালের ২৫শে ফাল্গুন রবীন্দ্রনাথের জননী সারদাদেবী পরলোক গমন করেন। সে সময়ে সদ্য মাতৃহারা বালকদের সবভার নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন রবির থেকে মাত্র দুবছরের বড় নতুনবৌঠান। নতুন বৌঠানের সান্নিধ্য, খাইয়ে পরিয়ে সবসময় যত্নকরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় 'মানুষের সঙ্গ, মানুষের স্নেহের' কাঙাল সন্তানের মাতৃবিয়োগের শোক ভুলিয়ে দিয়েছিল। মূলত তারই উৎসাহে 'ইস্কুলপালানো' রবীন্দ্রনাথ কাব্যসাধনায় মগ্ন হয়েছিলেন । সাহিত্যে অনুরাগ ছিল কাদম্বরী দেবীর সহজাত। কাব্য অনুশীলনের অভ্যাসবশতঃ তিনি যথার্থ বিষযটি উপলব্ধি করতে পারতেন। বিহারীলাল চক্রবর্তীর ভক্ত পাঠিকা কাদম্বরী প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্রকে সরস্বতীর পদ্মবনে হাতধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। নিজেও ছিলেন তার নিত্যসঙ্গিনী হয়ে। বালকের মনের মধ্যে জমে থাকা অদম্য আবেগ যখন প্রকাশের পথ খুঁজে ফিরছিল তখন নতুন বৌঠানই কান্ডারী হয়ে দিশা দেখালেন। পরিহাসছলে বিহারীলালের প্রশংসা করে কিশোর কবির মনে ঈর্ষার আগুন জাগিয়ে রাখাই ছিল নতুন বৌঠানের উদ্দেশ্য।মূলত তারই প্রেরণায় কবির লেখনীতে প্রতিনিয়ত নব নবসৃষ্টির সুধাধারা বর্ষিত হয়েছে। -------- তথ্যসূত্র:- 'কবিমানসী', জগদীশ ভট্টাচার্য।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register