Thu 30 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ২২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ২২)

তৃতীয় অধ্যায় (চতুর্থ পর্বের শেষাংশ)

পুত্র রোহন, আই-এ- এস পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। টেলিগ্রামের মাধ্যমে খবর এসে পৌঁছেছে। আর মাত্র মাস-দেড়েকের মধ্যেই 'ভাইভা- পরীক্ষা,' তাই সে এ বিয়েতে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। রাঘবেন্দ্র বাবু বেশি জোড়াজুড়ি করেননি; ছেলেটা, বরাবরই একটু অন্য ধরনের; ব্যবসা- পত্রে সম্পূর্ণ অনীহা, যেন দৈত্যকুলে প্রল্হাদ! তার একটাই চিন্তা, শিরদাঁড়া ঋজু রেখে দেশের শাসন- ব্যবস্হায় অংশ নেওয়া--মন্ত্র একটাই 'করেঙ্গে ঔর মরেঙ্গে'। রাঘবেন্দ্র বাবুর মনটা পুত্র-গর্বে গর্বিত হয়; এ রকম সৎ- নিষ্ঠাবান পুত্র পাওয়া, যে কোন পিতার পক্ষেই তা গৌরবের বিষয়। পুত্র, অন্যভাবে বংশ- গৌরব, ঐতিহ্যকে বৃদ্ধি করতে বদ্ধ পরিকর। পিতা- মাতার আশীর্বাদ সব সময়ই যে তার মাথায় বর্ষিত হবে, তা বলাই বাহুল্য। শিব-শংকর, রমেন্দ্র ও ইন্দর, ভাইপো রোহনের জন্য গর্ব অনুভব করে। ওদের ছেলে গুঞ্জন, ব্যবসায়ে খুবই উৎসাহী; সেই বংশের ব্যবসা সামলাবে।

বিয়ের দিন, অঞ্চলের প্রায় সব বাড়িরই একজন নিমন্ত্রিত। ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলেই সপরিবারে নিমন্ত্রিত; এছাড়াও রাজনৈতিক দলের ভাইরা তো আছেই, আছে পুলিশ, আমলা- গামলা, সব- সব! কত লোক নিমন্ত্রিত, সঠিক বলা যাবে না;এদিকে আবার নিমন্ত্রিতের সংখ্যা আইনানুগ ভাবে সীমিত থাকার কথা। মুখ্যমন্ত্রী এসে রাঘবেন্দ্রবাবুকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তাঁর উত্তর, "আপনার আমলা, হোমরা- চোমরারা যদি বিভিন্ন ভাবে, প্রত্যেক দিন খেতে পারে, তো আমি যদি আমার অঞ্চলের লোকদের একদিন খাওয়ার ব্যবস্থা করি, তবে তা দোষের কিছু দেখি না; আইন তো আছে, আইনের ফাঁকও আছে, আর সেইটা কাজে লাগিয়ে সবাই করে- কম্মে খাচ্ছে; দেশের মানুষ যদি একদিন আমার আতিথ্য গ্রহণ করে, তাদের যদি একদিন খাওয়াবার সুযোগ পাই, তো দাদা, আপনার দেশের মহাভারতের এতটুকু বিচ্যুতি ঘটবে না বলে আমার বিশ্বাস; আর এও জানি, আপনার মতও এটাই; তাই তো এই বিশাল জনতার মাঝে আপনার উপস্থিতিটা আমি অন্তরের সঙ্গে আকাঙ্ক্ষা করেছি।"

মুখ্যমন্ত্রী, রাঘবেন্দ্রবাবুর পিঠ চাপড়ে বললেন, "সব মানুষ যদি তোমার মত হত, তো ঐ আইনের বাধ্যবাধকতার প্রয়োজনই ছিল না। "

সবাই বর- বৌকে আশীর্বাদ করে চলে গেছেন। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে বড় বড় হরফে লেখা 'আপনাদের শুভেচ্ছাই কেবল প্রার্থনীয়, লৌকিকতা করে লজ্জায় ফেলবেন না';এমন বিনি পয়সায় ভোজ, ভিড় যে উপচিয়ে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। উপস্থিতের সংখ্যা, নিমন্ত্রিতের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায়, রাতে পুকুরে জাল ফেলতে হয়েছে, মাঠে সব্জির খেতে লোক( নামানো ্হ্য়ে্হ্য়ে) নামানো হয়েছে। খাওয়া- দাওয়া শেষ হতে প্রায় রাত কাবার। রাঘবেন্দ্রবাবু, ভাই'র বিয়ে উপলক্ষে, অঞ্চলে একটা ইতিহাস গড়লেন;তবু তাঁর মনে রয়ে গেছে একটা অস্বস্তি ;শিবানীর অনুপস্থিতিটা, বুকটাকে মোচরাতে থাকে; না থাক, তাকে ভুলতেই হবে;কিন্তু, ভুলবো বললেই কি ভোলা যায়!

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register