Wed 29 October 2025
Cluster Coding Blog

সম্পাদকীয়

maro news
সম্পাদকীয়

ভাষা থেকে ভাষান্তরে

আমরা বসবাস করি নানা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির দেশ ভারতে। পৃথিবীতে এমন আর একটি দেশ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। হ্যাঁ, আজ বিশ্বায়নের যুগে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র‌‌‌, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, মধ্যপ্রাচ্য সহ অনেক দেশেই বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ গিয়ে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহ করছে। নব্বইয়ের দশকের আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া, চেকোস্লোভাকিয়ার মতো দেশগুলি ছিল নানা জাতিতে গড়া। কিন্তু ধীরে ধীরে এক একটি জাতি বা ভাষাভাষীর মানুষ এক একটি পৃথক দেশ গড়ে নিয়েছে। একমাত্র ভারতেই সেই প্রাচীনকাল থেকে এক হয়েছে কত শত জাতি। কিন্তু তারা যেমন মিশেছে এই দেশের মাটিতে, তেমনই তাদের ভাষা সংস্কৃতিকে আগলে রেখেছে পরম মমতায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গেলেও ভারত তার বৈচিত্র্য ধরে রেখেছে। ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নৃতাত্বিক বৈচিত্র্য। ফিরে আসি ভাষায়। নানা ভাষার দেশে পরস্পরের সঙ্গে ভাব আদানপ্রদানের জন্য একটি সাধারণ ভাষার খুব প্রয়োজন। মায়াবী চাঁদেরও যেমন কলঙ্ক থাকে, তেমন বৈচিত্র্যময় ভাষার দেশে অফিসিয়াল একটি ভাষাকে বেছে নিতে একটু ঝুটঝামেলা তো থাকবেই। সে সব পেরিয়ে বলি, প্রথমদিকে ইংরেজির সাথে সাথে উর্দুকে অফিসিয়াল ভাষা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে উর্দুর পরিবর্তে দেবনাগরী হরফ সমেত হিন্দি ভাষা সেই স্থান নেয়। তবে মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে কিন্তু কোন রাষ্ট্রভাষা নেই। ১৯৪৯ সালের আজকের দিনেই অর্থাৎ ১৪ই সেপ্টেম্বর সংবিধানে ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দিকে অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর ১৯৫৩ থেকে এই দিনটিতে হিন্দি দিবস পালিত হয়। ১-১৪ সেপ্টেম্বর বা ১৪-২৮ সেপ্টেম্বর হিন্দি পক্ষ পালিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী হওয়ার সুবাদে এ ব্যাপারে কিছুটা অবগত রয়েছি। এই সময়ে হিন্দি ভাষাকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য অফিসগুলোতে হিন্দি ভাষায় প্রবন্ধ রচনা, কবিতা লেখা ও পাঠ, ক্যুইজ ও সেমিনার আয়োজিত হয়। সাহিত্যের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে বেশ ভালোই লাগে। তাছাড়া এতে ভাষা নিয়ে বৈরীতা দূর হয়। সাহিত্য সুদূর অতীত থেকেই এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তেমনি এই সময়ে আমরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা সকলের নিজস্ব ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারি। অবাক লাগে যে তিনি যদি নিজের ভাষায় এ ভাবনাকে আবদ্ধ রাখতেন, তাহলে কত কিছুই অজানা থেকে যেতো। আমার বাংলায় যা প্রস্ফুটিত হয় তার সুবাস ছড়িয়ে দিই হিন্দির মাধ্যমে দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণমৃত্তিকায়, পূর্বোত্তরের সবুজ বনানীতে, আর্যাবর্তের গাঙ্গেয় সমভূমিতে, হিমালয়ের তুষারে আর মরুস্থলীর সোনালী কণায়। আমাদের দেশে ভাষাগত বৈচিত্র্যের হাত ধরে গড়ে উঠেছে নানা জাতির সাহিত্য, যা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সৃষ্টি করেছে। আমরা আমাদের দেশের প্রতিটি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবান।

সায়ন্তন ধর

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register