Wed 05 November 2025
Cluster Coding Blog

|| বাইশের বাইশে শ্রাবণ একটু অন্যরকম || 26য় সুদীপ ঘোষাল

maro news
|| বাইশের বাইশে শ্রাবণ একটু অন্যরকম || 26য় সুদীপ ঘোষাল

আজ ২২ শে শ্রাবণে তাঁর স্মৃতিতর্পণ করি

মরে গিয়েও বেঁচে থাকা।এতদিনেও তাঁর গানে, কবিতায় মন শুদ্ধ হয়। তাঁর গানে,সুরে মন হারিয়ে যায় অসীম অনুভবে হৃদয় কাঁদিয়ে।উপন্যাস,ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, নৃত্যনাট্য, গীতিনাট্য, পত্রসাহিত্য,ভ্রমণকাহিনী!! শেষ জীবনে চিত্রশিল্পী৷ সংসার করেছেন, জমিদারী করেছেন, কৃষি নিয়ে কাজ করেছেন, ক্ষুদ্র কুটীর শিল্প গড়েছেন, গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে ব্যাপৃত ছিলেন!! ক্ষুদ্র ঋণের প্রবর্তন করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভাষণ দিয়ে বেড়িয়েছেন সমগ্র পৃথিবীতে৷ সমাজ, রাষ্ট্র, শিক্ষা নিয়ে তাঁর ভাবনা এত আধুনিক যে তা এক বিস্ময়৷ সেই যুগে তিনি জাতীয়তাবাদের ভয়াল রূপের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছেন৷ শান্তিনিকেতন গড়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্দশ সন্তান। তাঁর মা সারদা দেবী সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দার্শনিক ও কবি, মেজ ভ্রাতা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় আইসিএস; অন্য ভ্রাতা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ ও নাট্যকার এবং বোনদের মধ্যে স্বর্ণকুমারী দেবী ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ ছিল সঙ্গীত, সাহিত্য ও নাট্যাভিনয়ে মুখর। শুধু তাই নয়, বাইরের জগতের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ছিল নিবিড়। সেই বৃহৎ পরিবারে বালকেরা ভৃত্যদের তত্ত্বাবধানে বাহুল্যবর্জিতভাবে প্রতিপালিত হতো। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাল্যকালের অপূর্ব স্মৃতি-আলেখ্য রচনা করেছেন জীবনস্মৃতি গ্রন্থে। কলকাতার সেই প্রাসাদোপম বাড়িতে ছিল পুকুর, বাগান এবং আরও অনেক রহস্যঘেরা জায়গা। ভৃত্যদের শাসন এড়িয়ে বালক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পক্ষে দূরে কোথাও যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই তার শিশুচিত্ত বাইরের বিপুল পৃথিবীর বিচিত্র কল্পনায় বিহবল হয়ে উঠত। পরবর্তী জীবনের কবিতায়, গানে এবং দেশবিদেশ পর্যটনে শৈশবের এই আকাঙ্ক্ষাই যেন নানাভাবে মূর্ত হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে। পরে বেশ কয়েক বছর তিনি পড়েন বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত নর্মাল স্কুলে। সেখানেই তাঁর বাংলা শিক্ষার ভিত্তি তৈরি হয়। সবশেষে তাঁকে ভর্তি করা হয় সেন্ট জেভিয়ার্সে। কিন্তু অনিয়মিত উপস্থিতির জন্য তাঁর স্কুলে পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে বাড়িতে বসে পড়াশোনা চলতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ১৮৭৩ সালে পিতার সঙ্গে হিমালয় ভ্রমণ। পথে মহর্ষি প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে কিছুদিন তাঁরা অতিবাহিত করেন। সেই প্রথম কবি নগরের বাইরে প্রকৃতির বৃহৎ অঙ্গনে পা রাখেন। এই যাত্রায় পিতার স্নেহসিক্ত সান্নিধ্য লাভ রবীন্দ্র-জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পিতার অসাধারণ ব্যক্তিত্বের আদর্শ তাঁকে অভিভূত করে। হিমালয়ের নির্জন বাসগৃহে তিনি পিতার নিকট সংস্কৃত পড়তেন। সন্ধ্যায় মহর্ষি তাঁকে চিনিয়ে দিতেন আকাশের গ্রহনক্ষত্র। এভাবে মহর্ষির প্রকৃতিপ্রীতি ও সৌন্দর্যবোধের সঙ্গে কবির নিবিড় পরিচয় ঘটে। হিমালয় থেকে ফিরে এসে হঠাৎ যেন রবীন্দ্রনাথ শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করেন। এরপর থেকে তাঁর শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চা অনেকটাই বাধামুক্ত হয়। এ সময় গৃহশিক্ষকের নিকট তাঁকে পড়তে হয় সংস্কৃত, ইংরেজি সাহিত্য, পদার্থবিদ্যা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, প্রাকৃতবিজ্ঞান প্রভৃতি। এর পাশাপাশি চলতে থাকে ড্রয়িং, সঙ্গীতশিক্ষা এবং জিমন্যাস্টিকস। নিয়মিত স্কুলে যাওয়া বন্ধ হলেও কবির সাহিত্যচর্চা অব্যাহত থাকে। রবীন্দ্রনাথ প্রথম মুদ্রিত কবিতা ‘অভিলাষ’ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১২৮১ সনের (১৮৭৪) অগ্রহায়ণ মাসে (কারও কারও মতে প্রথম কবিতা ‘ভারতভূমি’ বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হয়)। তাঁর দ্বিতীয় মুদ্রিত কবিতা ‘প্রকৃতির খেদ’ (১৮৭৫)। এ দুটি কবিতা তিনি পড়েছিলেন ঠাকুরবাড়ির বিদ্বজ্জন সভায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৮৭৪ সালের গোড়ার দিকে ঠাকুরবাড়ির মনীষীরা বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিক, সংবাদপত্র-সম্পাদকসহ বিদগ্ধজনদের আহবান করে ‘বিদ্বজ্জন সমাগম’ নামে এক সাহিত্য সম্মিলনীর আয়োজন করেন। দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন সম্মিলনীর উদ্যোক্তা। তথ্য সংগৃহীত।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register