Tue 04 November 2025
Cluster Coding Blog

T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || 26য় অসীম কুমার রায়

maro news
T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || 26য় অসীম কুমার রায়

গর্ভধারণ

পাহাড় আমার কাছে ধ্যানমগ্ন দেবতার মতোন কাছে টানে। কেন যে এরকম হয় বলতে পারব না। দেরাদুনে সহস্রধারা দেখে যখন মৌসুরীতে পৈঁচ্ছালাম তখন বিকেলের লাল আলো রঙ ছিটাচ্ছে। সেদিন হোটেল জোগাড় করে আমি আর বিমান পুরো রাতটুকু রেষ্ট নেব ভাবলাম। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে রুমে এসে চেঞ্জ করে ড্রয়িং রুমে ঢুকে দেখি বিমান ততক্ষণে বোতল আর গ্লাস নিয়ে বসে পড়েছে। হোটেলের বয়টা কাজু, কিসমিস, আখরোট, চানাচুর, ঝুড়িভাজা প্লেটে করে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। বিমান একটা মদের পিপে। খাওয়ার সময় কোনো হুশ থাকে না। অনেকবার বলেছি। বললেই বলবে, মদের পেগ কোনোদিন গুনে খেতে হয় না। তাতে গৃহস্থের অকল্যাণ হয়। হাতি হয়। এই মানুষটাকে নিয়ে যে আমি কী করব? ভাবলাম আজ রাত্রিরে অনেক গল্প করব। রোমান্স করব। মনের ভেতর কত কথা জমা হয়ে আছে। আমার কপাল! শ্বশুরবাড়িতে ঘ্যানঘেনে শাশুড়ি আর টিকটিক করা শ্বশুরের জ্বালায় অতিষ্ঠ। কতদিনপর সময় সুযোগ করে, ছুটি নিয়ে, দমবন্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে এখানে আসা। পরেরদিন বিকেলবেলায়, আমি আর বিমান একটা পার্কে উঁচু জায়গায় বসে ওখানকার পাগলপারা সৌন্দর্য উপভোগ করছি। সামনে ধূসর গাড়োয়াল পর্ব্বতশ্রেনী। পাহাড় এত রহস্যময় কেন? নীলাভ মেঘ ঢেকে রেখেছে প্রতিটি চূড়া! পাহাড়ের চূড়ায় কী আছে জানবার জন্য আকূল ইচ্ছে। আমি বিমানকে বললাম, ওখানে মানুষ যেতে পারে? বিমান বলল, কেন পারবে না। মানুষের অসাধ্য কিছু আছে? আমি বললাম, কী করে যায়? ও বলল, কেন অদিতি তুমি যাবে? আমি বললাম, ইয়ার্কি কোর না। বললেই যেন তুমি বীর এক্ষুণি নিয়ে যাবে। সেসব আগেকার দিনে হত। ভীম দ্রৌপদীর জন্য কুবেরের বাগান থেকে চুরি করে সোনার গোলাপ এনে দিয়েছিল। বিমান বলল, বলেই দেখনা অদিতি! আমি দেখচ্ছি এখানে সেরকম সাটে্ল হেলিকপ্টার ভাড়া পাওয়া যায় কিনা। - ইস্! তোমার কত মুরদ আমার জানা হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সারাদিন অফিস। বাড়ি ফিরে মদ নিয়ে বসে যাওয়া। রাতে যে দুটো কথা বলব, ওমা দেখি সিংহ গর্জনে ঘরর ঘরর নাক ডাকছে। এবার আমি কী নিয়ে থাকবো? বল তুমি। বিমান বলল, যাহ্। সবদিন এরকম করি নাকি? - অধিকাংশ দিন। না হলে সকালে রবিবার রবিবার মাকে নিয়ে কালীঘাট নয়তো দক্ষিণেশ্বর। নয়তো বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চেকআপ করিয়ে নিয়ে আসা। একফোঁটা আদর নেই, সোহাগ নেই, ভালোবাসা নেই। সিনেমা দেখা নেই। ভালো করে কথাবার্তা গল্পগুজব করার পর্যন্ত তোমার টাইম নেই। এবার আমি তোমাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাব। দেখবে। অলরেডি কয়েক জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছি। একটা না একটা ঠিক পেয়ে যাব। - সেকি? বলনিতো? - কেন বলব? আজ পাঁচ ছ বছর বিয়ে হল আমাদের। সে খেয়াল আছে তোমার? এখনো পর্যন্ত কিছু হল না। - হবে অদিতি। হবে। মেডিক্যালি আমরা দুজনেই ফিট। ডাক্তার দেখিয়ে রিপোর্ট পরীক্ষা হয়ে গেছে। হয়তো একটু দেরি হচ্ছে। বিমান বলল, এখানে বেড়াতে এসে জায়গাটা তোমার ভালো লাগছে না? - লাগবে না কেন? আমি আর বিমান হাত ধরে হাঁটতে লাগলাম। পাহাড়ের গা কেটে কেটে রাস্তা বানানো হয়েছে। একদিকে খারাই পাহাড় আরেকদিকে গভীর গিড়িখাত। নীচের দিকে তাকাতে ভয় ভয় শিরশির করে। কত নীচে বহুদূরে একটা নদী দেখা যাচ্ছে। তার খানিকটা দূরে একটা জলাশয় বা লেক। এখান থেকে পাহাড়ের মানুষদের নানা রঙের ঘরবাড়ি গুলো হরেক রকম দেশলাই বাক্সের ডিজাইনের মতোন লাগছে। কেউ কেউ বাড়ির লাগোয়া সামনে একটুকরো জমিতে আনাজ ক্ষেতিও চাষ করেছে। দূরে অনেক জায়গায় কিছু কিছু জমিতে ধান, চা চাষ করা হয়েছে। নাম না জানা কতরকম ফুল, অর্কিড প্রতিটা বাড়ির বাইরেটা আরো অপরূপ করে সাজিয়ে দিয়েছে। সেদিন হোটেলে ফিরে বিমান বলল, আজ আর বেশি ড্রিঙ্কস্ করব না। দুপুরে ঘুমায়নি। ঘুম পাচ্ছে। লাঞ্চটা ভালোই ছিল আজকের হোটেলের মেনুতে। দেশী পাহাড়ি মুরগি মাংসের ঝোল। স্কোয়াশের কারী, পাপড়, সালাট্, আলুর চিপস। দেরাদুন রাইস। ঠান্ডাটা বেশ জমিয়ে পড়েছে। রুম হিটার আছে। আমরা খেয়ে দেয়েই বিছানায় লেপের তলায় ঢুকে পড়লাম। বিমান আচমকা আমার মুখের ভিতর মুখ ঢুকিয়ে দিল। হঠাৎ এভাবে ! আমি অনভ্যাসে ছটফট করে উঠলাম। ওকে ঠেলে জোরে সরিয়ে দিলাম। বিমান বরাবরই এরকম। সহজে হার মানার পাত্র নয়। আরো জোরে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে নিজের বুকের সাথে লেপ্টে নিল। আমি হেসে ফেললাম। বিমান একটু শিথিল হয়ে জিজ্ঞেস করল, হাসচ্ছো কেন? আমি বললাম, না এমনি। বিমান এবার আমাকে ছেড়ে বারবার জিজ্ঞেস করচ্ছে, হাসলে কেন? তোমাকে বলতেই হবে। বল। বললাম, তুমি ভয় পেয়েছ। যদি আমি তোমাকে ছেড়ে সত্যিই চলে যাই। বিমান আমার কথা আমল দিল না। জোর করে কাছে টেনে আমার শরীরটা নিয়ে গোটা রাত তোলপাড় করল। অনেক রাত অবধি একফোটা ঘুমাতে দিল না। এমনিতে বিমানের চওড়া লোমশ বুক, পেশিবহুল পৌরুষের কাছে যে কোনো মেয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করবে। তারপর কত রাত্রিরে যে দু'জনে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। তখনো ভোরের আলো ঠিক ফোটেনি। আবচ্ছা অন্ধকার সরিয়ে অসহায় আলোর রেখা জগতময় ছড়িয়ে পড়তে চাইচ্ছে। হঠাৎকরে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। তলপেটে অসম্ভব ব্যথা আবার একইসঙ্গে আনন্দঘন অনুভূতি। ঘুম জড়ানো চোখে দেখতে পেলাম, কালকে প্রথম যে সামনের গাড়য়াল পাহাড়টা দেখেছিলাম সেটার চুড়োর মাথায় দুটো চোখ জ্বলছে। জুল জুল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। অবিশ্বাস্য। আমি বিমানকে ঠেলা মেরে উঠাতে চেষ্টা করলাম। না থাক। আমি এখন অনুভবের দুনিয়ায়। ঐ দৃষ্টির মায়ার আলো এখন আমার শরীরে মাখামাখি। অপার্থিব অশরীরী তিব্র কোনো অনুভূতি! বলে বোঝানো যাবে না। আমি অস্থিরতায় নিজের ভিতরে পাললিক শিলার গর্ভজাত গর্ভ যন্ত্রণা অনুভব করলাম।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register