Wed 05 November 2025
Cluster Coding Blog

T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || 26য় শতদ্রু ঋক সেন

maro news
T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || 26য় শতদ্রু ঋক সেন

শারদীয় দৃষ্টিকোণে

'ওরা"..

পুজো আসছে। দিকে দিকে ব্যস্ততা, হৈচৈ, সব মিলিয়ে পুজো আসছে। যখনই পুজো আসে, আমার মনে পড়ে " ওদের " কথা। একটি পুজো কে সাফল্য মন্ডিত করে তুলতে "ওরা" এক পর্যায়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, কিন্তু কোথাও ওদের এই অবদান প্রকাশিত হয় না, ওদের যে একটি ভূমিকা আছে, তা জেনেও সবাই না জানার ভান করে, ভাবে ওরকম তো কত লোক করেই থাকে, এ আর এমন কথা কি। গোড়া থেকে বলি। কালীঘাটের পটুয়া পাড়ায় এক ভাড়া বাড়িতে আমার জন্ম আর বেড়ে ওঠা। ছোট থেকেই তাই ঠাকুর গড়ে ওঠা দেখতে দেখতে, আমার পুজোর দিন গোনা শুরু। খড়, কাঠামো, মাটি, রং আর সাজগোজের মৃন্ময়ী মায়ের চিন্ময়ী হয়ে ওঠা দেখেই আমার বড়ো হওয়া। যখন আশ্বিনের মাঝামাঝি, পূজার বাজনা বেজে ওঠে, মায়ের মূর্তি প্রস্তুত হয়ে প্রতিক্ষা করে প্যান্ডেল প্যান্ডেলে প্রতিষ্ঠিত হবার, তখনই আর বছরের মতো আমাদের পাড়ায় ঘটে "ওদের" আবির্ভাব। ওরা সবাই গ্রাম থেকে আসা খুব সাধারণ মানুষ। কেউ বা ভাগ চাষী, কেউ দিন মজুরের কাজ করে দিন অতিবাহিত করে। পুজোর আগে, কিছু কাঁচা পয়সা উপার্জন করতে ওদের শহরে আসা, যাতে করে ওদের বাচ্চাদের একটি নতুন জামা হয়, কারুর বৌয়ের শাড়ি বা গ্রামীণ মেলায় নতুন কিছু কেনার পর ও বেঁচে যাওয়া পয়সায় সস্তার চাউমিন। ওদের কাজটি খুব সামান্য। ঠাকুরের উৎপত্তি স্থল থেকে মূর্তি বয়ে লরি তে তোলা, আবার অনেকে প্যান্ডেলে গিয়ে বেদির উপর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত করে আসে। শুনতে ছোট হলেও এই কাজের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এক চিলতে এদিক ওদিক হলেই ক্রেতা বা পটুয়ার চোখ রাঙানি বা গালাগালি অনিবার্য, তার উপর মূর্তির অঙ্গ হানির পাপ লেগে যাওয়ার ভীতি। ছোটবেলা থেকেই এদের অনেকের সাথে আমার সখ্যতা তৈরি হয়েছিল। আমাদের বাড়ির সামনের গলির দালানে ঠাকুর তৈরী হতো, আমাদের গলির মধ্যে গাদা গাদি করে এরা বসে থাকতেন। সন্ধ্যার পড়া শেষ করে, ক্যাপ বন্দুক হাতে গল্প করতে যেতাম, কতো গল্প শোনাতেন এঁরা, গ্রামের গল্প, চাষবাসের বা মাছ ধরার কথা। আজন্ম শহুরে লালিত আমার কাছে এঁদের জীবনধারণ ছিলো বিস্ময়কর, অনেকটা এক ঝলক টাটকা হাওয়ার মতো। তারপর ধীরে ধীরে বয়েস বাড়তে লাগলো। আমাদের পুরনো বাড়ি কালের নিয়মে ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাটে রূপান্তরিত হলো। সেখানে ফ্ল্যাট কিনলেও, এখন বাড়ি আর গলির মধ্যে চওড়া পাচিঁল, মাঝে মাঝে ফটো তোলার জন্য দালানে গেলেও নিয়মিত যাওয়া হয় না, আর তাছাড়া এখন অতো সময় কোথায়। তাও এখনো ওঁরা আসেন, গলির মধ্যে থেকে ওদের গলার আওয়াজ পাই, বরাবরের যতো নিজেদের কাজ পালন করেন এরা, কিন্তু এই উৎসবের নানা আলোর মাঝে আজো ওদের এই দায়িত্ব পালনের কাজটি বরাবরের মতো আঁধারে ডুবে থাকে। মৃন্ময়ী মায়ের চিন্ময়ী রূপের আলোর পরশ ওদের জীবনেও আসুক ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register