Wed 05 November 2025
Cluster Coding Blog

T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || 26য় সুমিতা চৌধুরী

maro news
T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || 26য় সুমিতা চৌধুরী

খাড়া বড়ি থোড়, থোড় বড়ি খাড়া

উফফফফ এই একটা মাত্র ছুটির দিন সারা সপ্তাহে, সেই দিনটাতেও একটু জুড়োবার জো নেই! যত্তসব আদিখ্যেতা, "আজ তো তোমার ছুটি, তাই আজ তোমার সাথে দেখা করতে যাবো, অনেকদিন দেখা হয়নি, কথা হয়নি।" নিজেদের আর কি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে, আড্ডা মারবে, আর গাণ্ডপিণ্ডে গিলবে কব্জি ডুবিয়ে। ফাঁকতালে একদিন বেশ সংসারের কাজ থেকে ছুটি ম্যানেজ হয়ে গেল বুদ্ধি খাটিয়ে। আমার বেলা কোনো রেহাই নেই। রোজ অফিস করেও সংসার সামলাও, আবার রোববারেও গুষ্টির যষ্টিপূজো করো। দূর ছাই মনে হয় আর থাকবো না। নেহাৎ মেয়েটা ছোটো। মেয়েটা না হলে, আর থাকতামই না এই ছিস্টির সংসারে। "মলি, এই দ্যাখো, কতো বড়ো বড়ো গলদা চিংড়ি পেয়েছি আজ। জমিয়ে মালাইকারি করো দেখি। আর কচি পাঁঠার মাংসও এনেছি। কষা মাংস, চিংড়ির মালাইকারি আর তোমার হাতের ফ্রায়েড রাইস, একদম জমে যাবে রোববারের আসর। আর তোমার হাতের এইসব রান্না ঝুমারাও খেতে খুব ভালোবাসে। কই গেলে গো?" "আসছি আসছি। রান্নাঘরে রাখো।" উফফফ, একেবারে পাড়া মাথায় করে দিচ্ছে। জানাতে হবে না সবাইকে, নিজের আহ্লাদী বোনকে কতোটা ভালোবাসে। আর আমার বেলায় ভালোবাসার ছিঁটেফোঁটাও কোথাও দেখি না। এই নাকি ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। যেই বিয়ে হলো, নিজের খাঁচায় পোরা হলো, সব ভালোবাসা উবে গিয়ে আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ল। এখন দিনরাত খেটে খেটে মরো, ফরমাইস পূরণ করো। মালাইকারি, কষা মাংস, ফ্রায়েড রাইস, আহ্লাদ আর ধরে না। কেন নিজেও কিছু একটু করো। বোনকেও বলো একটু করতে তাড়াতাড়ি এসে। না না, তা করবে কেন সব। হুকুম করবে, অর্ডার করবে, এটাই তো একমাত্র কাজ। আর বউ তো বিনা মাইনের ঝি। খেটে খেটে মরবে। এর থেকে রত্নাও ভালো। কাজের বিনিময়ে পয়সা পায়। রাগ হলে দশকথাও শুনিয়ে দেয়। আমার তো তারও বালাই নেই। যতোই কষ্ট হোক বত্রিশ পাটি বের করে হুকুম তামিল করে যাও। "ও বৌদি, মাছ মাংস সব ধুয়ে রেকে দিইচি বেসিনির পাশে। ঝাঁট, পোঁচা, সব হয়ে গেচে। আমি চললুম এবার। ঘরে আজ অনেক কাজ আচে। টুম্পার বাবা আজ বাড়ি আচে না। গেঁড়ি- গুগলি, কচু- ঘেচু, সব এনে হাজির করবে। এখন চোদ্দ পদ রাঁদো। তারপর গিলেকুটে তিনি আমায় একেবারে উদ্দার করে দেবেন। আর ভালো লাগে না বাপু। সাতবাড়ির কাজ করো, তারপর আবার বাড়িতেও সবার ফাই ফরমাশ খেটে মরো। আমাদের গতরটা যেন গতর নয়। মরলেই শান্তি পাই। লেটা চোকে। শুধু ঐ রত্নাটার জন্যিই তো মরতেও পারি না গো। আমি ছাড়া ওকে কে দেকবে বলো বৌদি? এই দেকো, তোমার সাথে কতা বলতে গিয়ে আমার কতো বেলা হয়ে গেল। আর কি করবো বলো? দুক্কের কথা কাকেই বা বলবো? কেই বা বুঝবে? কপাল করে জন্মেছি, আজন্ম ভুতের বেগাড় বইতে হবে বইকি। মেয়েটা নেকাপড়া শিকছে। অন্তত ঐটার যেন আমার মতো কপাল না হয়। এইটিই সবসময় বলি ঠাকুরকে। আসি গো। তোমারও তো আজ মেলা রান্না, দাদাবাবুর ফিরিস্তি তো শুনলাম। আবার ছোড়দিরাও সব আসবে। আমি আজ আর ওবেলা আসতে পারবুনি। এক্কেরে কাল সকালে আসবো। বাসন- কোসন যা থাকবে, কাল এসে করবো। আসি গো বৌদি। বাপরে কতো বেলা হয়ে গেল তোমার সাথে বকতে গিয়ে।" "হ্যাঁ, আয়। কাল সকাল সকাল আসিস কিন্তু বাবা, দেরি করিস না। আমার আবার অফিস আছে। দাদাবাবুরও। দেখিস আবার ডুব মারিস না।" "না না, কিচ্চু চিন্তা করোনি। আমি সক্কাল সক্কাল চলে আসবো। এখন আর মেলা বকে দেরি করিওনি বাপু। একেই বাড়ি গিয়ে গুষ্টির কাজ করো, তাতে দেরী হলে আবার ঝাড় সজ্য করো। আসি আসি।" বোঝো, আমি নাকি ওর সাথে কথা বলে ওকে দেরী করিয়ে দিচ্ছি! নিজেই কথা বলতে পেলে আর থামতে চায় না। কথা বলার কাউকে সুযোগ দেয়? নিজেই তো রাতদিন বকে যায়। বকতেও পারে মাইরি। কিই বা করবে বাড়িতে কারো সাথে কথা শেয়ার করতে পারে না। তাই যাকে পায় তাকে ধরে ধরে নিজের দুঃখের পাঁচালি শোনায়। আমিও যদি বলতে পারতাম কাউকে, তবে বোধহয় একটু শান্তি পেতাম, হালকা হতাম। আমার তো সেরকমও কেউ নেই। আবার ওবেলা আসবেও না বললো। ওঃ, এই এতো রান্নার পর যজ্ঞিবাড়ির বাসনও মাজতে হবে? বাপরে। দূর ছাই, আর ভালো লাগে না কিছু। যাই এবার রান্না চাপাই গিয়ে। একটু পরেই সব দাঁত বের করে এসে হাজির হবে। "বৌদি, আজ যা খেলাম না, ওওওওও, দারুণ। তোমার হাতের রান্না একবার খেলে একমাস তার স্বাদ লেগে থাকে জিভে। এখন একমাস ডাল ভাত খেলেই চলবে।" "কি যে বলো? তোমাদের ভালো লাগলেই আমার শান্তি, তৃপ্তি। কতোদিন পর এলে। বেশী কিছু করতেও পারলাম না।" "বাব্বা আর কতো করবে? এরপর খেলে পেট ফেটে তো মরেই যেতাম। এবার তুমি বসো একটু, সারাদিন অনেক খাটাখাটনি গেছে। তোমার তো আবার এবেলা রত্নাও আসবে না। আমি বাসন কটা মেজে দিই।" "ওমা, ছি ছি, তুমি বাসন মাজবে কেন? আমি সব করে নেবো। কোনো অসুবিধে নেই। তোমারও তো বাড়ি গিয়ে আবার হেসেল সামলাতে হবে।" "তা আর বলতে? আমাদের কারোই রেহাই নেই বৌদি। এই একবেলা তোমাদের কাছে এসে যা একটু জুড়োলাম। বাড়ি ফিরেই আবার শুরু হয়ে যাবে হাজার কাজ, সবার ফাই ফরমাশ খাটা, সবার মন জুগিয়ে চলা। তোমার তো আজকের দিনটাও রেস্ট হলো না। আমাদের জন্য।" "আরে না না, এসব কি বলছো। তোমারা আসায় কতো গল্পগুজব হলো, কতোদিন পর একটু প্রাণ খুলে হাসলাম। এটাই তো পাওনা।" "হ্যাঁ, সেই। তবে খাটুনিটা তো খাটুনিই। আমাদের সবার জীবনই একই গো। সে তুমি যতোই অফিসে চাকরি করো, আমি হই না গৃহবধূ আর তোমার রত্না, হলেও কাজের মাসি। সব এক। আমাদের সবার জীবনই সেই খাড়া বড়ি থোড়, আর থোড় বড়ি খাড়া।"
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register