Wed 03 December 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক গল্পে বিশাখা বসু রায় - ২

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক গল্পে বিশাখা বসু রায় - ২

অদ্ভুতুড়ে

পর্ব - দুই

মেয়েটি কিন্তু বলেই যাচ্ছে....

দেখো, আমি মুক্তি না পেলে তো আবার জন্মাতে পারবো না! আমরা তো প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে আমরা সাতজন্ম দুজন দুজনকে জড়িয়ে থাকবো! তুমি আর একটা জন্ম পেয়ে গেলে , কিন্তু আমি তো কত বছর ধরে বসে আছি, মুক্তির আশায়!

সুবীর, আমি যে আজও তোমাকে ভালোবাসি, আমাদের প্রেমকাহিনী তো সম্পূর্ণ ই হলো না!

দেখো, শুধু তুমিই পারো আমায় মুক্তি দিতে, এ কাজটা তোমাকে করতেই হবে! বলো করবে...? শুনবে আমার কথা ?

.... কিন্তু আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!

আমি কি করতে পারি? আমি আপনাকে কি ভাবে মুক্তি দেবো?

.... বলছি, তুমি আমার শ্রাদ্ধ শান্তি করলে তবেই আমি মুক্তি পাবো!

... কি ?! আপনি কি পাগল হয়েছেন ?

শ্রাদ্ধ শান্তি! সেটা করতে গেলে তো লোকে আমায় পাগল বলবে! যে মানুষটার অস্তিত্ব কোনোদিন কেউ টের পায়নি, তার শ্রাদ্ধ! আর আপনি আমার কে যে আমি আপনার শ্রাদ্ধ করবো ? কি বোঝাবো লোককে?

আর তাছাড়া একটা প্রেতাত্মার শ্রাদ্ধ!

আপনি জানেন একটা শ্রাদ্ধ করতে কি কি লাগে? পিতৃকুলের পরিচয়, মাতৃকুলের পরিচয়, শ্বশুরবাড়ির কূল পরিচয়, নাম, গোত্র, Minimum একটা ছবি তো লাগে!

.... সে সব আমি জানিনা, সব ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে! পিতৃকুল, মাতৃকুল তো বলতে পারবো, কিন্তু ছবি তো দেওয়া যাবে না!

... আচ্ছা, আমায় একটা কথা বলুন তো, আমিই যে আপনার সেই সুবীর চট্টোপাধ্যায় সেটা বুঝলেন কি করে ? আপনার কথা যদি ঠিক হয়, তাহলে আমার চেহারা তো আর আপনার সুবীরের মত নেই! কি ভাবে চিনলেন আমায়?

.... সেটা কাউকে বলে দিতে হয়না! তোমাকে চিনতে আমার ভুল হবে না! তোমার সঙ্গে যে আমার আত্মার যোগ! এ কি ভুল হতে পারে ?

হ্যাঁ, আমি প্রেতাত্মা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু তাই বলে তোমার আত্মা কে চিনে নিতে পারবো না, তা কি হয় ? না, না, আমার এক ফোঁটা ও সন্দেহ নেই যে তুমিই আমার সুবীর !!! অর্ক পালাতে পারলে বাঁচে, বললো... আচ্ছা, ভেবে দেখি! আপনি এবার রাস্তা তো ছাড়ুন!

...শোনো, বেশী ভেবো না! আমি কিন্তু তোমায় মনে করিয়ে দেবো!

অর্ক এবার bike start করার চেষ্টা করতেই bike টা জেগে উঠলো, আর অর্ক তাতে লাফ দিয়ে উঠে কোনো মতে পালালো!

বিছানায় শুয়ে অর্ক সারারাত ছটফট করলো, ও সত্যি এসব দেখেছে তো, নাকি এটা ওর কল্পনা ?

কি করবে ও, বিশ্বাস করবে মেয়েটার কথা? মেয়েটা তো বললো যে ও মনে করিয়ে দেবে....

তাহলে কি ও থেকে থেকেই অর্ক 'র রাস্তা আটকাবে, নাকি বাড়িতে এসে হানা দেবে?

কথা না শুনলে ঘাড় মটকে দেবে নাকি?

.

.

.

দিন সাতেক কেটে গেলো, অর্ক ও রোজই সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসার চেষ্টা করে, গোরস্থানের পাশ দিয়ে যেতে গেলে একটুও যে গা ছমছম করে না, তা নয়.... তবে কাউকে দেখতে না পেয়ে ওর সাহস বেড়ে গেলো! সবটা একটা দুঃস্বপ্ন বলে হেসে উড়িয়ে দিলো!

ঠিক এক সপ্তাহ বাদে অর্ক তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো! হঠাৎ মাঝরাতে ওর ঘুম ভেঙে গেলো, ভীষণ শীত করছে ওর...! হাত বাড়িয়ে পায়ের কাছে রাখা বালাপোশ টা টানতে গিয়ে হাত আটকিয়ে গেলো, চোখ খুলে আঁতকে উঠলো! দেখলো সেই মহিলা ওর বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে, কোমরে হাত দিয়ে কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে!

লাফ দিয়ে উঠে বসলো ও! মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে বললো...কি ব্যাপার? খুব নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছো দেখছি, আর এদিকে আমি মুক্তির আশায় চরকি পাক খাচ্ছি! তুমি আমার কথা শুনবে, নাকি ? তাহলে কিন্তু আমাকে অন্য রূপ ধরতে হবে!

... অন্য রূপ... মানে ?

অর্ক 'র গা ছমছম করছে!

... আপনি এখানে ঢুকলেন কি করে ?

... এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, না?

দেখাবো আমার অন্য রূপ?

... না, না! দেখতে চাইনা অন্য রূপ!

বলুন কি করতে হবে ?

... আমার শ্রাদ্ধ শান্তি করে !

... কিন্তু...!

... কোনো কিন্তু নয় ! আমি বলছি, তুমি লিখে নাও আমার পূর্বপুরুষের নাম, ধাম সব, আর তোমার পিতৃকুলের যে কজনের নাম আমি জানি, বলছি !

... আর ছবি ?

...আমার ছবি একটা এঁকে নিও, তাহলেই হবে !

... ছবি ? আমি আঁকবো ?

... হ্যাঁ, এইতো তুমি আমায় দেখছো,

আর তুমি তো খুব ভালো ছবি আঁকো , তাই আমায় দেখে হাতে এঁকে নিও!

অর্ক তাজ্জব!

ও যে ভালো ছবি আঁকে, সেটা এই মেয়ে জানলো কি করে ?

আশ্চর্য তো! মেয়েটি ওর মনের কথা পড়তে পারলো, বললো... কি.. আমি জানলাম কি করে ? তাই ভাবছো ? তোমার দেওয়ালে ওই যে ছবিটা, ওটা তো তোমার আঁকা! কে ওই মেয়েটা, তোমার প্রেমিকা?

... ওঃ ওটা?

না, না, ওটা তো স্মিতা প্যাটেলের ছবি!

... সেটা আবার কে?

...উনি খুব নাম করা নায়িকা ছিলেন,

আমার খুব প্রিয়!

অল্প বয়েসে মারা যান!

... ওঃ, তাই বলো!

যাই হোক, তুমি আমার একটা ছবি এঁকে ফেলো, আর সেটা দিয়েই শ্রাদ্ধ শান্তি করে দাও!

... আপনার ছবি.. সেটা কি করে সম্ভব ?

... কেন, আমায় দেখে দেখে আঁকবে?

... সেও কি সম্ভব ?

... হ্যাঁ, সম্ভব !

রোজ রাতে আমি আসবো তোমার কাছে, মাঝরাত থেকে ভোর রাত, এই তোমার সময় ! ভোরের আলো ফোটার আগে আমি চলে যাবো! কি পারবে না ?

... পারবো ?

... অবশ্যই পারবে, পারতেই হবে! তুমি তো তোমার আগের জন্মে অপূর্ব ছবি আঁকতে! সেই গুণ টা তো এ জন্মেও ফিরে পেয়েছো!

অর্ক আঁকতে খুবই ভালোবাসে, কিন্তু সময়ের অভাবে বহুদিন আঁকতে বসতে পারেনি, আর এই বাড়িতে আসার সময় আঁকার কোনো সরঞ্জাম ই নিয়ে আসেনি!

ও একটু চিন্তা করে নিলো, আর তারপর বললো

... ঠিক আছে, আমায় কটা দিন সময় দিন , Canvas, রঙ তুলির ব্যবস্থা করতে হবে তো! তার জন্য সময় লাগবে!

আজ আপনি যান, আমাকে ঘুমোতে দিন!

... ঠিক আছে, আজ আমি যাচ্ছি, কিন্তু বেশী সময় নিও না!

আমায় মুক্তি পেতে হবে! আমার পরের জন্মে তোমার কাছে ফিরতে হবে তো! 'সে ' চলে গেলো বটে , কিন্তু অর্ক 'র তো ঘুম ছুটে গেছে! কিছু তো একটা করতেই হবে, নাহলে তো ' সে ' ওকে ছাড়বে না !

ক্রমশঃ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register