Wed 05 November 2025
Cluster Coding Blog

|| কালির আঁচড় পাতা ভরে কালী মেয়ে এলো ঘরে || T3 26য় দীপশিখা চক্রবর্তী

maro news
|| কালির আঁচড় পাতা ভরে কালী মেয়ে এলো ঘরে || T3 26য় দীপশিখা চক্রবর্তী

ভীষণ একা হয়ে পড়েছে স্মিতা। সারাদিন নিজেকে চার দেওয়ালের মাঝে আটকে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সে। জানালার পাশেই নিজের এক অন্যরকম পৃথিবী গড়ে তুলেছে মনের মতো করেই।

--- মামণি, একবার নীচে নেমে আয় তো!

মায়ের ডাকে চমকে ওঠে স্মিতা। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারে নিত্যদিনের ঝামেলার আর এক পর্ব আজ।

--- আয় মা, হাতে পায়ে মুখে একটু ভালো করে ফেসপ্যাকটা মাখিয়ে দিই। নিজে তো আর কোনোদিন করবি না। এদিকে তোর বাবা আর আমি চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি যে কীভাবে তোকে পাড় করবো এবার!

মুখে হাতে ফেসপ্যাক ঘষে ঘষে লাগাতে থাকে স্মিতার মা, আর একনাগাড়ে দোষ দিতে থাকে নিজেদের আর স্মিতার ভাগ্যকে। স্মিতা চুপ করে তাকিয়ে থাকে মায়ের দিকে, তার আর কাউকে কিছু বোঝাতেও ইচ্ছে করে না।

গোটা পাড়া জুড়ে খুব নাম স্মিতার, কারণ সে একমাত্র মহিলা যে ওই পাড়ায় ইংরেজি সাহিত্যে পি.এইচ.ডি করেছে। সবার বাড়িতে ভালোর উদাহরণ হয়ে থাকা স্মিতাকে হঠাৎ বাঁকা চোখে দেখে এখন সবাই। তার বিয়ে হওয়া নিয়ে পাড়াসুদ্ধ লোকের যে চিন্তায় ঘুম নেই চোখে!

একরাশ বিরক্তি নিয়ে চোখ-মুখ ধুয়ে রঙ মেখে সাজতে থাকে স্মিতা, যে সাজগোজ সে পছন্দ করেনি কোনোদিন। মায়ের কথামতো তাকে আজ সুন্দর লাগতেই হবে! ভাবতে ভাবতে চোখে জল নিয়েই হেসে ওঠে সে, হঠাৎ করে এই কালো রঙ সুন্দরে কী করে বদলে যাবে সেটা যে নিজেও বোঝে না!

--- কি রে, রেডি হলি? ছেলেপক্ষ এসে পড়লো বলে।

---হ্যাঁ মা, আবার নাটকের মূল ভূমিকায় আমি, কী সুন্দর সেজেছি দেখে যাও!

মা চাবির গোছাটা কাঁধে ফেলে তড়িঘড়ি মেয়ের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই থমকে যায়।
চারপাশে তখন ঢাক আর উলুধ্বনি। শাঁখের আওয়াজে ঘরে ঘরে তখন শ্যামা পূজার তোড়জোড়।

মেয়ের চোখের জল আগলে তাকে জাপটে ধরে স্মিতার মা। আজ যে অন্ধকার মুছে যাওয়ার দিন, অন্ধকারের মাঝে লুকিয়ে থাকা আলোর দিন, সমস্ত আতঙ্ক মাটিতে মিশিয়ে ঘরের প্রদীপে সম্মানের আগুনটুকু জ্বেলে দেওয়ার দিন।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register