Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৫৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৫৮)

রেকারিং ডেসিমাল

নতুন বউ চুল নিয়ে একটু নাজেহাল হয়েই থাকে। 
কলেজের থার্ড ইয়ার থেকে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে চুল রাখা শুরু। সে চুল এখন মাসি, মা, পিসিমাদের ধারায় গড়াতে গড়াতে হাঁটুর খাঁজ ছোঁয়। 
জট পড়ে একশা। 
আগে হয় খুলে রাখা, নয় হাত খোঁপায় দক্ষিণাপণের দোকান,  সায়লেন্সের, মস্ত কাঁটা চলত। আর নয়ত অগত্যা, মায়ের হাতের রবিবার বেঁধে দেয়া টাইট লম্বা বিনুনিটা যে কদিন চালানো যায়। 
বাড়ি ফিরলে মা হাত ব্যথা করে জট ছাড়াতেন আর সাথে চলত বকুনি। 
এই, এই জন্য সারা জীবন ছোট করে কেটে দিয়েছি। পড়াশোনা করবে, কাজ করবে না চুলের পেছনে সময় নষ্ট। এই ঘঞ্জ চুলের বাসা!  
তার মধ্যে চাট্টি  লাল চুল আর শক্ত কী!  য্যান শুয়োইরা কুচি!! অনেক পরে খুঁজে পেয়েছিল বউ, এ শব্দের মানেটা। 
শুয়োরের ঘাড়ে শক্ত রোঁয়া থাকে। তাকেই বাঙালরা কয় শুয়োইরা কুচি। 

সে যাই হোক, এখানে চুল খুলে ঘুরতে আরাম। বাড়িতে আরও দুই জন খুদির ও অনেক চুল। মোটা বিনুনি, টপ নটের বাহার,  সে মেলাই সাজ। 
চুল খুলে বারান্দা দিয়ে হাঁটলে দিদা ডাক দেন। 
এই যে কেশবতী রাজকন্যা। 
আবার কোন দিন আল্লাদের ডাক, সোনা বউ এদিকে আস। দেখি সাজ খান। 
সাজ পছন্দসই হলে, দাদুকে ডাক, এই দিকে তাকাও। দেখো দেখি কুমারের বউরে কেমন দেখায়? 
এরকমই এক দিন কথামৃত সঙ্ঘের পুজোয় যাবার জন্যে মায়ের দেয়া তসর পড়ে রেডি হচ্ছিল পুচকে বউ। 
দিদা ঘরে দাঁড় করিয়ে রেখে, একখানা লাল টুকটুকে ভেলভেটের চওড়া পাড় ধবধবে সাদা তাঁতের শাড়ি বের করে আনলেন নিজের মস্ত স্টিলের আলমারি থেকে। বললেন আজ ভালো দিন, আমি দিলাম এ শাড়িখান। পুজোর সাজে এইখান পড়ে যাও দেখি। দেখবে খোঁপার ওপর আধ ঘোমটা দিলে লালপাড়খানা দিয়ে মুখের বর্ডার তৈরী হবে কেমন। 
থতমত খেয়ে নতুন বউ বলে, এখন নতুন শাড়ি কেন? 
সঙ্গে সঙ্গে বকুনি। 
অত কথা কিসের ? ছেলে মেয়েরা যে শাড়ির গাদা করছে, আমি বুড়ী কোথায় বাহার দেব শুনি?  চোপ। কোন কথা না। 
শিগগির পড়ে এসো। শ্বাশুড়িরা ডাক দিল বলে নীচের থেকে। 
কি আর করা। 
অগত্যা শাড়ি পালটে এল নাতবউ। 
ঘরের আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেন দিদা। 
ভালো করে দেহো দেখি। 
তোমার সাজটা ভালো ছিলো, না আমার এই সাজানোটা খুলেছে বেশী ? 
হেসে ফেলে নাতবউ। 
আর এর পর তোমায় যে শাড়ি দিয়েছে আমায় রাগ করে যদি দু ঘা দেয়, যে আমার মাকে আদর করে দিইছি, তুমি মা না পড়তেই নিলে কোন আক্কেলে, তখন ? 
নয় সন্তানের দাপুটে মা ঘাড় সোজা করে বসেন,  সে আমি বুঝব। আমার ছেলেপুলেদের এত লাই আমি এখনো দিই না বুঝলে ?  
বুঝল নতুন বউ। 
ইনি হলেন জাঁদরেল ঠাকুরানী। 
চোটপাট কিছু কম নয়। 
মনে মনে সবাইকে এখানেই সেলাম ঠুকতে হয় বটে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register