Wed 22 October 2025
Cluster Coding Blog

মার্গে অনন্য সম্মান কাকলি ঘোষ (সর্বোত্তম)

maro news
মার্গে অনন্য সম্মান কাকলি ঘোষ (সর্বোত্তম)
অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ০৮ বিষয় : প্রয়োজনে প্রিয়জন তারিখ : ২২/০৮/২০২

সানাই

বিশ পঁচিশ বছর আগের কথা। সানাই বাজছে। আজ আলোয় ডুবেছে ঘর। ফুলের গন্ধে বাতাস হয়েছে ভারী - যেন গর্ভবতী কোন নারী আর বইতে পারছে না সৌরভের আলসে ভার। রজনীগন্ধারা তাদের মসৃন গ্রীবায় যেন একটু বাঁকিয়ে রেখেছে আজ রাতের মিলন বিলাসিতা তোমার আসার অপেক্ষায়। গোলাপের পাপড়িগুলো নরম রেশমি আলো মেখে রয়েছে তুমি আসার আকুলতায়।
সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর আজ তোমার আসার আশায় প্রাণ মন চঞ্চল; যেন না ঝরা বর্ষা আড়মোড়া ভাঙছে মেঘের ঘুম-ঘুম অন্তরালে। মনের লাজ ঢেকেছে আজ আমার লাল বেনারসি সাজ।
অসংলগ্ন ভিড়ের মাঝে ভীষণ একা হয়ে বসে আছি জানালার ধারে। এতদিন ঐ জানলায় পিঠ রেখে, এলোচুলে রোদ মেখে লিখেছি তোমায় কত কবিতা, কত মনের কথা। পংক্তিগুলো ছিল লজ্জামাখা ওড়নায় মোড়া কোমল, মধুর, হাজার স্বপ্ন সাজানো সযতনে।
আজ সেই জানলার বাইরে পথ আলোয় ভেজা; বহু আয়োজন তোমার আসার পথ চেয়ে; যেন এক কণা আঁধারও ছুঁতে না পারে তোমার চরণচিহ্ন। কি যেন এক অজানা শিহরনে লেপ্টে গেছে আমার চোখের কাজল অশ্রুজলে।
তোমার অপেক্ষায় শনশন বাতাস বইছে বাইরে, অন্তরে। সানাই বেজেই চলেছে মধুর সুরে। বাড়িভর্তি অনেক মানুষজন। সবাই এসে দেখে যাচ্ছে আমার বধূবেশ। আমার ছেলেবেলার সাথি রঞ্জন, ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে কর্মরত। বহু প্রচেষ্টায় ছুটির আয়োজন করে সেও এসেছে আমার আনন্দে সামিল হতে।
সময়ের সাথে সাথে শনশন বাতাস যেন ঠান্ডা আবেশে মুড়িসুরি দিয়ে বসে একটু উষ্ণতার খোঁজে। সানাইয়ের সুর আরো সোনালী হয়ে ঝলমল করে ওঠে। আমার চোখের জল আর বাঁধ মানে না। এই অপেক্ষা যেন অনন্ত। গালের চন্দন লেপ্টে গেছে লুকানো নয়নজলে। রঞ্জন সান্ত্বনা দেয়। একটু হাসি ঠাট্টা করে আমার মন ভোলায় ভিড়ের মাঝে।
রাত হয়ে আসছে। তোমার পথ চেয়ে আমি জানলার ধারে। বেহিসাবি বাতাসে আমার পরিপাটি চুল একটু এলোমেলো। খোঁপার মালা একটু আলগা হয়ে আসে। আরও অপেক্ষা। ঘন ঘন বিদ্যুৎ ঝোড়ো মাতাল বাতাসে। অতিথিদের বাড়ি ফেরার তাড়া। কি করুন মধুর সুরে সানাই বাজছে! যেন ঝরে ঝরে পড়ছে হাজার হাজার ছেঁড়া ফুলের পাপড়ির সুগন্ধ।
আমার অপেক্ষা নীল হয়ে আসছে যেমন রক্তে মেশে বিষ ছলকে ছলকে।আশা-নিরাশার মাখামাখি রং। সোনালী ওড়নায় ঢাকা পড়েছে আমার চন্দন-চর্চিত মুখ। অতিথিরা চলেছে যে যার ঘরের ঠিকানায়। হঠাৎ একটা সাদা অ্যাম্বাসাডর এসে থামলো। আমার প্রাণে রক্তচ্ছাস। কিন্তু তোমার প্রিয় বন্ধু অলোক কে একা নামতে দেখে আমার হৃদস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে গেল। আমার কাছে সে এসে বলে গেল তুমি আর আসবে না। সব জানার পর তোমার মা আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে তোমার পথ আগলেছে। তুমি অসহায়। তোমায় যেন ক্ষমা করে দিতে পারি।
সানাইয়ে অবুঝ সুর তবু থামেনি। জানলার ধারে তোমার অনন্ত অপেক্ষায় বয়ে চলেছে আমার বৃষ্টি ভেজা উতলা মন।
রঞ্জন এসে আমার হাত ধরেছে। অগ্নিসাক্ষী করে আমায় গ্রহণ করেছে তার স্ত্রী রূপে। একমাত্র রঞ্জনই জানতো সব কথা। আমি যে অন্তঃসত্ত্বা।
যে মেয়ে নিজের সব হারিয়ে বসে আছে তার চরিত্রের পরিচয় যে কি! ছি ছি! এমন মেয়ে ঘরের বউ হয়ে আসতে পারে না। তোমার মায়ের লজ্জায় আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথই খোলা ছিলো না। তাই অসহায় ছিলে তুমি। ঘরের বাইরে পা ফেলা হয়নি তোমার।
বধু রূপে বিদায় নিলাম আমি। জানলার ধারে রইল পড়ে আমার অনন্ত অপেক্ষা ওই নীল অপরাজিতার জটাজালে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register