Wed 22 October 2025
Cluster Coding Blog

সম্পাদকীয়

maro news
সম্পাদকীয়

চিঁড়েভাজা, চালভাজা আর ছোট্ট বাবাই

আমাদের পাড়ায় প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই একবার করে স্বপনদা তার চালভাজা, চিঁড়েভাজা, মুড়ি-চানাচুরের পসরা সাজিয়ে নিয়ে আসে। লেকটাউনের এদিক ওদিক সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে এই লকডাউনেও যতটা পারছে এই বাড়ি, ওই বাড়িতে কিছু বিক্রিবাটা করার চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে কিছু অন্তত রোজগার হয়। দাদার সাথেই আজ দুপুরে এলো বাবাই, ওর একমাত্র ছেলে। খুব মিষ্টি, ফুটফুটে একটা বাচ্চা ছেলে, স্বপনদা বললো ওর বয়স সাত বছর। বড় বড় চোখ, একমাথা ঘন চুল মাথায়, রোদে বাবার সাথে সাইকেলে ঘুরে ঘুরে ওই খুদেটাও চিঁড়েভাজা, চালভাজা, চানাচুর ছোট ছোট হাতে সবার হাতে তুলে দিচ্ছে। স্বপনদাকে জিজ্ঞেস করতে বললো, 'দিদি, এই বাজারে তাও যদি খানিকটা রোজগার হয়। বাবাইয়ের মায়ের সেলাই করা, আর আমার এই বিক্রিবাটা, তবে আশা করছি পুজোর সময় আরো কিছু রোজগার বাড়বে।' আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'ওর ইশকুল কি পুরো বন্ধ?' স্বপনদা বললো 'হ্যাঁ, ঐসব এখন নেই, তবে ইশকুল খোলা থাকার সময় যেত, মিডডে মিলে খেতে পেতো তো, তাই। ও সাথে আসে, নিজে থেকেই সংসারে অভাব বুঝে কাজ করতে চায়, বলে বাবা আমায় তোমার সাথে নিয়ে চলো, আমি এক প্যাকেট, তুমি এক প্যাকেট এইভাবে বিক্রি করলে আরো বেশি বিক্রি হবে।'
আমি বাবাইকে বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস করার পরিস্থিতিতে ছিলামনা, নিজে শিক্ষিত হয়েও মুখ-চোখ লাল হয়ে গেলো, হয়তো লজ্জায়। পাশের মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং-এর বারান্দায় তখন দুপুর-রোদ এড়াতে আমাদের এক প্রতিবেশী তার ছেলেকে সটান নিজের ঘরে নিয়ে চলে গিয়ে এয়ার কন্ডিশনার চালিয়ে দিলেন, গলার আওয়াজ পেলাম, 'দেখছো তো বাবু, চারদিকে এরকমভাবে কোরোনা ছড়াচ্ছে, কেউ রোদে বারান্দায় যায়?'
বাবাই মুখ তুলে একবার ওই বারান্দাটা দেখলো, আমার দিকে তাকালো তারপর, খুব মিষ্টি করে হেসে আমার হাতে এক প্যাকেট চানাচুর তুলে দিয়ে বললো, 'মামাকে এটা দিয়ো, তুমি আর মামা (আমার স্বামী) এইটা খেও, একদম নতুন টকমিষ্টি চানাচুর, আমরা নিজেরা বানিয়েছি'। আমি বেশ কিছু জিনিস আগেই নিয়েছিলাম, তবে এটার টাকা স্বপনদা নিতে চাইলোনা, শুধু বললো, 'দিদি, ও না কদিন ধরে খুব বায়না করছে একটা যে কোনো গল্পের বই ওকে দেবে গো? সারাদিন কাজ করে, আমার সাথে ঠোঙাও বানায়, কিন্তু খুব বই পড়তে ভালোবাসে। আমাদের বাড়িতে সেরকম পড়াশোনা কেউ করেনা।' আমি বললাম, 'ভেতরে আয় তো বাবাই, তোকে গল্পের বই দি কয়েকটা।' বাবাই লাফাতে লাফাতে আমার ড্রয়িং রুমের ডিভানে।
এরপর? বিশেষ কিছুই না, সামনের সপ্তাহ থেকে বাবাই আমার বাড়ি থেকে লাইব্রেরির মতো গল্পের বই নিয়ে পড়বে, আর বেশ কিছু গল্পও শোনাবে আমায়। বেশ লাগলো আজ, বুঝতেই পারলাম, মা আসছে, মা হাসছেও হয়তো, আমরা তো সবাই তার সন্তান। শুভ হোক সকলের, শারদীয়ার প্রাক্কালে।
শনিবারের সাহিত্য হৈচৈ নিয়ে তোমরা আর দেরি না করে পাঠিয়ে দাও কবিতা, ছড়া, গল্প, নাটক, রেসিপি, ঘুরতে যাওয়ার কথা, সবকিছু। মেইল করো sreesup@gmail.com / techtouchtalk@gmail.com এ।
লাইক, শেয়ার, কমেন্ট দিতে ভুলোনা,
www.techtouchtalk.com

শ্রীতন্বী চক্রবর্তী

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register