Fri 24 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১১৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১১৬)

রেকারিং ডেসিমাল

হাসপাতালের ওপরের ঘরে ঢুকে কি রকম ভয় ভয় লাগলো। সব বড় ডাক্তাররা বসে বড় টেবিলের ওপারে। আর এত ভীষণ গম্ভীর। থমথমে পরিবেশ। হাওয়াটাও যেন ভারি, দমবন্ধ করা। ঢুকতেই যিনি প্রথম ভর্তি করেছেন, মস্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ভুরু কুঁচকে গম্ভীর গলায় সামনের চেয়ার দেখিয়ে বললেন, বোসো। শ্বাশুড়ি মায়ের গোলগাল পুত্রবধূ চিরকাল সিনিয়র ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রশ্রয়ের হাসিসহ মিষ্টি কথাই পেয়েছে। কি রকম ভয় ভয় লাগলো এই অন্যরকম ব্যবহারে। তাও বুকে সাহস টেনে এনে, মুখ ভাবলেশহীন করে বসে পড়ল। এক এক করে বকুনি শুরু হল। তুমি না ডাক্তার? তুমি পেশেন্ট পার্টিকে ভেতরের খবর জেনে বলেছ? তুমি বলেছ বায়োপসি রিপোর্ট বিনাইন? তুমি এত দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন হবে এ আমরা ভাবতেই পারি না। ছি ছি, মেডিক্যাল ইনফরমেশন কি ননমেডিক্যাল পেশেন্ট পার্টির সাথে শেয়ার করা যায়? তুমি প্র‍্যাকটিস শুরু করেছ, বেসিক এথিকস জানো না? চারদিক থেকে আসতে থাকা তীব্র বকুনিতে দিশেহারা তিরিশের ঘরে পা নতুন ডাক্তার কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, না, মানে, সবাই এত আপসেট হচ্ছিল, বলছিল ভাইফোঁটা ও বন্ধ হয়ে যাবে, তাই। তা ছাড়া, বিনাইনই ত স্লাইড সাতটা। তিনটে ত খালি… এবার ঘর কাঁপিয়ে চেঁচালেন প্যাথলজির হেড অফ দা ডিপার্টমেন্ট। তোমার একবার ও মনে হল না, কেন তিনটে স্লাইড লক করে রাখা আছে? ভেতরের খবর সাধারণ পেশেন্ট পার্টিকে দিয়ে বলেছ বিনাইন!!!! বিনাইন আর ম্যালিগন্যান্ট শব্দের মধ্যে কতটা ডিস্টান্স হয় জানো? সার্জেন যিনি কোলোনোস্কপি করেছেন, দুঃখিত মুখে মাথা নাড়ছিলেন। বললেন, না না, এত বড় ভুল ডাক্তারকে করতে হয় না। এখন যদি বাড়ির লোক আমাদের চ্যালেঞ্জ করে বলে আমরা মিথ্যে রিপোর্ট দিচ্ছি, তোমার কথার ভিত্তিতে? আস্তে আস্তে মাথা নাড়ে ছোট ডাক্তার, না স্যার, ভুল হয়ে গেছে, সরি। কিন্তু কেউ চ্যালেঞ্জ করবে না। মানে… এমনি খুব ক্যাজুয়ালি… বলতে বলতেই, হঠাৎ খেয়াল হয়ে আঁতকে ওঠে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুর দিকে ফিরে বলে, বিনাইন বলেছি বলে ভুল হবে কেন? বিনাইন নয়? গলাটা কেঁপে যায় একেবারে চীৎকার হয়ে। সেই ডাক্তার ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, নো, নো ইটস টু হান্ড্রেড পারসেন্ট ক্যান্সার। ইট ইস অ্যাডিনো কার্সিনোমা অফ কোলোন। বাকি আর কিছু কানে যায় না। ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া শুকনো ঠোঁট নিয়ে ঢোক গেলার চেষ্টা করে মেয়েটা। ঝাপসা লাগে সব। মাথা ঘোরে। ঠান্ডা লাগে হাতের চেটো। সত্যি, সে ত ডাক্তার। সে জানে বিনাইন আর ম্যালিগন্যান্ট শব্দদুটির মাঝখানে আকাশ পাতাল আর একটা গোটা পৃথিবীর দূরত্ব। বিনাইন নয়, মানেই কাঁকড়া তার বীভৎস দাঁড়া দিয়ে কামড়ে ধরে ফেলেছে। রোগের নাম কর্কট।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register