Fri 24 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১১৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১১৭)

রেকারিং ডেসিমাল

গল্পের শুরু চোখের সামনে দেখতে আরম্ভ হয়েছিলো উনতিরিশ বচ্ছর আগে। ক্রমশ সময়ের পাতা উলটে গল্পের পরের পর্ব মেলে ধরতে থাকেন মহাকাল। এগিয়ে চলে কাহিনী নানান রকম মোড় ঘুরে। লোমশ মুনি হয়ে বসে থাকা হাস্যমুখ মানুষটি আবার কখনো মুখ কালো ও করেন, তাঁর ছোট্ট ঘরে নতুন দম্পতি বাসা করায়। হয়তো মনে হয়, তবে কী আমি মুছে গেলাম বাড়ি থেকে? মান অভিমান খুচরো পয়সার মতো ছড়িয়ে পড়ে ঘরে দোরে। আবার সে সব গুটিয়ে গুছিয়ে ও রাখে সময়। ছোট ছেলে, তাঁর পরমা সুন্দরী গিন্নি, টুকটুকে গোলগাল ছেলেটি ফিরে এসে সংসার পাতে বাড়ির নীচের তলার ঘরগুলোতে। ইস্কুলে যায় ছেলে। সংগে মা দৌড়ে চলে। দাদা বৌদি ট্রামের ফার্স্ট ক্লাসের সামনে চলা বগি থেকে দেখে হেসে কুটিপাটি হয়, মা সামনের বগির পাদানিতে দাঁড়িয়ে আকুল নয়নে পিছন দিকে তাকিয়ে। পিছনের বগির পাদানিতে দাঁড়িয়ে ছেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে। সে একা একা ফিরতে বদ্ধ পরিকর। মাকে কোনো মতেই সে আজ চিনবে না। লেখাপড়ার সিঁড়ি মেধা ব্যবহার করে চটপট টপকে যায় ছেলে। মস্ত চাকুরে হয়ে ওঠে দেখতে দেখতে। পাশেই নতুন ফ্ল্যাট তৈরী হচ্ছে। সেইখানে ফ্ল্যাট কিনে নতুন সংসার সাজান বাড়ির আগের প্রজন্মের ছোট বউ। তাঁর বর ফিরে ফিরে আসেন পুরোনো বাড়িতে শিকড়ের টানে। দুই বাড়ি মিলিয়ে চলে সংসার। ছেলের বিয়ে হয়। ফুটফুটে দুই নাতি। এইসব চলতে চলতেই এসে পড়ে মহামারী। করোনা, প্যানডেমিক। মৃত্যু থাবার আঁচড় কাটে ডায়বেটিসওয়ালা পরিবারের মানুষগুলোর গায়ে। মেজ ভাই, সেজ বোনের পর ছোটো ভাইও অসুস্থ হয়ে রইলেন হাসপাতালে। বহুদিন লড়াইয়ের পর এক রাতে বাড়ি ফিরে এলো নিথর দেহ। কৈশোরে বড়ো ভালবেসে গলায় মালা দেয়া সুন্দরী আঁকড়ে থাকে তাঁকে। যতক্ষণে না সবাই বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে রওনা হয় মহাশ্মশানের দিকে। বছর ঘুরে আসে। বাৎসরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ছেলে। গিন্নি কেবলই সবাইকে বলেন, আমি আর একা পারি না, বুঝলে? খুব কষ্ট। বুঝলে, আমি একদম পেরে উঠিনা আর। বড্ড কষ্ট। পরের মাসে, দুই নাতিকে নিয়ে পুত্রবধূর সাথে সুন্দরবন বেড়াতে চললেন তিনি। একটু ভালো লাগার আশায়। নৌকায় পা দিতে দিতেই শ্বাসকষ্ট আর বুকে অসহ্য ব্যথা। নিমেষেই চলে গেল প্রাণ। দুপুরে হাসপাতালে রুগী দেখতে দেখতে কর্তার গলা শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল ডাক্তার। কাকির বয়েস তাদের থেকে খুব বেশি নয়। সব রিপোর্ট পত্র এই ত কয়েক দিন আগেই কাকার বাৎসরিকের দিন দেখিয়ে হাউমাউ করেছে মানুষটা। খুব কষ্ট, বুঝলি। খুব কষ্ট। ডাক্তার দেখেছিল, সত্যিই হার্টের সমস্যা অনেক। তাই বলে চলেই গেলো? মাত্র উনষাট। কত সাজার, গান গাইবার, কবিতা পাঠ করার ইচ্ছে নিয়ে। যাহ। কোন গল্পের কি রকম শেষ লেখেন যে জীবন মশাই। এ কি রকম টুইস্ট হল কাহানি মে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register