Sat 25 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় জয়িতা ভট্টাচার্য

maro news
T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় জয়িতা ভট্টাচার্য

পেটকাটি চাঁদিয়াল

ভোকাট্টা ভোকাট্টা ভোকাট্টা...নীল আকাশ।আর এক রাশ ছেলে মেয়ের হল্লা মাটির রাস্তা জুড়ে।ছোটবেলায় আকাশে ঘুড়ি মানে পড়ার বই তুলে রাখা। আমরা পুরোনো কলকাতার বাসিন্দা।বিরাট ছাদের এক কোনে পায়রার ঘর। সারা বাড়ি বিকেল হলেই ছাদে। ভাদ্র মাসের শেষে কন্যা সংক্রান্তিতে ঘুড়ির মরসুম এই বাংলা এবং নেপালেও। শুরুর আগে থেকেই মাঞ্জা দেওয়া শুরু হয়।কাঁচের টুকরো আরো কতকি। কাকা জেঠা বাবা সবার হাতে লাটাই। আশপাশের বাড়ির ছাদ ভর্তি লোক। কে কার কাটে । এই বাড়ি ভার্সেস ওই বাড়ি। ঘুড়ির লড়াই।সেই নিয়ে রুদ্ধ শ্বাস উত্তেজনা।পেটকাটা চাঁদিয়াল প্রিয় ছিল আমারও। এছাড়াও দেখতাম বক্স ঘুড়ি,রোলার ঘুড়ি,স্লেড,ময়ূরপঙ্খী,ডায়মন্ড, ডেল্টা এসব শুনতাম। সাড়া পাড়া মুখরিত সেই সব বিকেলের পর গ্রামের পথে সকাল থেকেই শুরু হয়ে যেত আকাশময় ঘুড়ি। এই যে ঘুড়ি আকাশে আজ ।এর ইতিহাস খুঁজি। দেখি ২৮০০ বছর আগে প্রথম চিন দেশে ওড়ে সিল্কের ঘুড়ি।বলা হয় মোজি ও লু বান ঘুড়ির আবিষ্কারক।তেমনই পাতার ঘুড়ি ইন্দোনেশিয়ায় ও পলিনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে।ঘুড়ির গুহাচিত্র পাওয়া যায় সুলাওয়ে দীপপুঞ্জের মুনা দ্বীপে।ভারত ,জাপান কোরিয়া সহ ইউরোপের নানা দেশে প্রচলন হয় ঘুড়ির। মার্কো পোলো শোনা যায় এশিয় দেশ থেকে ঘুড়ি ওড়ানোর গল্প নিয়ে যান ইউরোপে। আমাদের বাংলায় কলকাতা শহর আর শহরতলিতে যেমন বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানো প্রথা, গুজরাতের সবচেয়ে বড়ো উৎসব।সেটি হয় মকর সংক্রান্তি তে।আমাদের মেদিনীপুর জেলায় মকর সংক্রান্তি র দিন এই ঘুড়ি ওড়ানো হয়। শোনা যায় পুরোনো ঢাকায় নবাব নাজিম নওয়াজেস মহম্মদ খান ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে সেখানে ঘুড়ি র প্রচলন করেন।তিনি নিজেই ঘুড়ি ওড়াতে ভালোবাসতে সপারিষদ। প্রজাপতি, পঙ্খীরাজ,চুড়িয়াল,গাহেলদার,কাউন্টার,ঘর,গুড্ডু কয়রা এইসব নামের ঘুড়ি ওড়ে সে আকাশে। যেমন তামিল দেশেও নতুন ফসল ওঠার উৎসব নানা নামের ঘুড়ি ওড়ে আকাশ ময়। এখন আর তত ঘুড়ি দেখি না।চারিদিকে বাংলা য় গনেশ পুজোর রমরমায় বিশ্বকর্মা কোনঠাসা। অথচ বিশ্বকর্মার উল্লেখ রয়েছে ঋক্ বেদেও। বেদে তাঁকে স্থাপত্যের ও কারিগরী দেবতা বলা হয় কারন কথিত, দেবতাদের জন্য উড়ন্ত রথ প্রস্তুত করেন তিনি। এই উড়ন্ত রথের কথা মনে করে বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা এমনই মত অনেকের। পাশ্চাত্যে এই ঘুড়ি "নয় নয় নয় এ মধুর খেলা",সেখানে তা বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সূচনা করেছে। ১৮৫০__১৯১০ ঘুড়ি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলো,পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরাও। এরোনটিকস, ওয়ারলেস, এমনকি ফটোগ্রাফির নানা নিরীক্ষণ হয়। ঘুড়ি উড়ুক আকাশে। আমাদের জ্ঞান কল্পনার সাথী আমাদের শৈশব নিয়ে বারবার ফিরে আসুক এই সব পেটকাটি চাঁদিয়াল।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register