Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় মনোরঞ্জন ঘোষাল

maro news
T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় মনোরঞ্জন ঘোষাল

ঘুড়ি না দৌড়াদৌড়ি!

না। ভাদ্রে বিশ্বকর্মায় আমাদের এই আনন্দ ছিল না। ও সব শহুরে মানুষের সখ। বিশ্বকর্মায় আয়েস করে ঘুড়ি ওড়াবে। আমরা বাপু পাড়া গ্রামের চাষী মানুষ। মাঠে পৌষে ধান চাষ হত। আমরা বলি জলাজমি বা শুধুই জলা। একটু শীত পড়লে জলার জল শুকিয়ে যেত। তখন ধান পেকে যেত। ধান কেটে তুলে নিলে মাঠ একেবারে পরিষ্কার। জ্বালানি করার জন‍্য ধান গাছের বড় বড় গোড়াগুলো কেটে নিত সকলে। ওকে বলে নাড়া। ঐ মাঠের মধ‍্যে সব চূড় করে রাখতো। তখন হত আমাদের ঘুড়ি ওড়ানোর মজা। সকাল বিকেল এসবের ঠিক ছিল না। সময় ফাঁক পেলেই ঘুড়ি লাটাই নিয়ে ছুটে যেতাম জলাতে। একটুখানি সুতোয় ঘুড়ি বেঁধে ছুটে বেড়াতাম জলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। আর শুয়ে জিরিয়ে নেবার জন‍্য তো নাড়ার গদির বিছানা তো সব সময় তৈরী। ঘুড়ি ওড়ানোর থেকে মজা ছিল বেশি ঘুড়ি লোটাতে। কারো ঘুড়ি কেটে গেলে তা দেখেই ছুটে চলতাম তাকে ধরতে। কখনও বড় গাছের মাথায় কখনও পুকুরের জলে পড়ত সেই কাটা ঘুড়ি। তখন হতাশ হয়ে ফিরতে হত। অনেকে বড় কঞ্চির মাথায় কিছু ছোট কঞ্চি বেঁধে ঘুড়ি ধরার কৌশল করত। তার সেই কঞ্চি ফেলে ঘুড়ি ছিড়ে পালিয়ে যেত অনেকে। তবে এ ধরণের কাজে ঝুঁকি ছিল খুব। ঐ কেটে যাওয়া ঘুড়ির দিকে চেয়ে দৌড়ে যেতে কত কাঁটার খোঁচা খেতে হত। আমাদের পাড়ার খগেন তো একবার পানা পুকুরেই পড়ে গেল। আবার গাছের সঙ্গে বা লোকজনের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়াটা প্রায়শই ছিল। তেমন হলে মাথায় গাঁট্টা খেতেও হত। এখন সেই পরিশ্রম আর ছেলেমানুষীর কথা মনে পড়লে কষ্ট হয়। তবে তখন এমন কষ্ট ছিল না। অভাব ছিল কিন্তু তা মালুম হত না। জীবনটা উপভোগ করতে পারত সবাই। আজ সেই শৈশব কোথায় হারিয়ে গেছে। সব এখন গল্প কথা স্মৃতি। সেই সংস্কৃতি মেলবন্ধন আন্তরিকতা পরিবেশ সব আধুনিকতা গ্রাস করেছে। আজকের দিনগুলিকেও গ্রাস করবে আগামী। শুধু স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকবে কারো কারো মগজে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register