Wed 22 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় সুস্মিতা পাল

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় সুস্মিতা পাল

আমার ভান্ডার আছে ভরে 

জন্ম মৃত্যুর অলাতচক্রে বৃত্তাকারে ঘুরে চলেছি জন্ম থেকে জন্মান্তর। জীবনে নিজের তৈরী কারাগারে আটকে থেকে দিনগত পাপক্ষয় করে চলেছি। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্ষমতার, অর্থের লোভ, মোহ। রাহুগ্রস্থ এই জীবনে আচ্ছন্ন থেকে কেটে যায় সোনার দিনগুলি, আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্তি খুঁজে ছটফট করি ,আর তলিয়ে যেতে থাকি অনস্তিত্বের চোরাবালিতে। দুঃখের কথা বলি আমরা সবাই, কিন্তু তা থেকে মুক্তির উপায় সন্ধান করি কি? নিজের অক্ষমতার কথা ভেবে হতাশ হই, কষ্ট পাই। এই প্রসঙ্গে 'কল্পদ্রুমাবদান'- এর ১৬ সংখ্যক কাহিনী অবলম্বনে রচিত কবিগুরুর 'কথা ' কাব্যের 'নগরলক্ষ্মী ' কবিতাটি মনে হয় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সুবিশাল প্রাচীন বৌদ্ধসাহিত্য এক অসামান্য রত্নাকর। ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ঃ ''বৌদ্ধধর্মের মহান জীবনাদর্শ, বৌদ্ধ ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল, আত্মোৎসর্গপূত অধ্যায়সমূহ বুদ্ধের প্রতি ভক্তির একাগ্রতার উদাহরণগুলি ও বুদ্ধমহিমা তাঁহার কাব্যের বিষয়রূপে তাহার কল্পনাকে মুগ্ধ করিয়াছিল ।'' (সাহিত্য ও সংস্কৃতির তীর্থ সন্ধানে) প্রাচীন বৌদ্ধসাহিত্যের কাহিনীর নির্মাণে গভীর অর্থ ও ব্যঞ্জনা সন্ধান করে নতুনভাবে তাকে নির্মাণ বা বিনির্মাণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ।কাব্যসূচনায় 'বিজ্ঞাপন' অংশে কবি বলেছেন - ''এই গ্রন্থে যে সকল বৌদ্ধকথা বর্ণিত হইয়াছে তাহা রাজেন্দ্রলাল মিত্র সংকলিত নেপালী বৌদ্ধ সাহিত্য সম্বন্ধীয় ইংরাজী গ্রন্থ হইতে গৃহীত। '' 'শ্রেষ্ঠভিক্ষা' কবিতায় বুদ্ধের অন্যতম প্রধান শিষ্য অনাথপিন্ডদ নগরবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন প্রভুর জন্য ভিক্ষার ঃ'ভিক্ষা আমার প্রভুরে দেহ গো। ' কিন্তু '' ফিরে যায় রাজা ফিরে যায় শেঠ, /মিলে না প্রভুর যোগ্য কোনো ভেট। '' শেষ পর্যন্ত দীনহীনা রমণীর বস্তুগত তথা হৃদয়গত সর্বস্বদানে পূর্ণ হয় ভিক্ষার ঝুলি। আদর্শের সঙ্গে জীবনচর্যার সামঞ্জস্য পূরণের এই সদিচ্ছাই দেখতে পাই 'নগরলক্ষ্মী 'তে ।দুর্ভিক্ষপীড়িত শ্রাবস্তীপুরে ভগবান বুদ্ধের অন্নদানসেবার আবেদনে ভক্তবৃন্দ হয়ে রইলেন নির্বাক। ধনী ক্ষমতাবান ভক্তরা এই বিরাট দায়িত্বভার নিতে নিজেদের অক্ষমতার কথা জানিয়ে দিলেন সলজ্জমুখে। ঠিক এই সঙ্কটকালে আলোকবর্তিকা হাতে এগিয়ে আসেন অনাথপিন্ডদকন্যা সুপ্রিয়া। মানবাত্মার বেদনা অনুভব করে তার উপলব্ধি ছিল - 'কাঁদে যারা খাদ্যহারা আমার সন্তান তারা '। আমাদের বিশ্বব্যাপী বর্তমান সমস্যার সঙ্গে এই কবিতার চেতনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।সুপ্রিয়া নগরলক্ষ্মীর ভূমিকায় নিজেকে তুলে ধরেন সবার সামনে। কারো একক প্রচেষ্টা, তা তিনি যতই ধনী হোন্, এই বিশাল চাহিদার কাছে কম। তাই দেশের সঙ্কটে সমষ্টিগত চেতনার প্রয়োজনীয়তা ও সার্থকতা এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 'আমার ভান্ডার আছে ভরে তোমা সবাকার ঘরে ঘরে। ' 'দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা'র দেশে ভালো কাজের মধ্যে দিয়ে বা 'শিবজ্ঞানে জীবসেবা 'র আদর্শে এই মূহুর্তে জীবে প্রেম করার প্রকৃত সুযোগ এসেছে। দেবীপক্ষে নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে অপমানিতা দ্রৌপদীর মতোই সব নারীরা প্রতিবাদ প্রতিরোধের শপথ নিলে তবেই দেবীশক্তির আরাধনা সার্থক হবে। ঠিক তেমনই আজ আমাদের নগরলক্ষ্মী হয়ে ওঠার যোগ্য সময়। সবার ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে দুঃস্থদের সাহায্য করার প্রচেষ্টাই সম্মিলিত রূপে ব্যপ্ত হয়ে যাবে বৃহত্তর পরিধিতে। তাদের মুখের হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে আপনার পুজোর দিনগুলি। দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটলেই চারপাশের পৃথিবী মোহন অঙ্গুলি ছাপিয়ে সুন্দরতা ছড়িয়ে দেবে । সুপ্রিয়ার কাছে প্রার্থনা করি- দান করো আমাদের নগরলক্ষ্মীর সেই করুণাঘন দৃষ্টি। অতীতের সেই দৃষ্টি দিয়ে আমরা স্পর্শ করি নিজের অস্তিত্বকে, খুঁজে পাই মুক্তির পথ। হাজার হাজার বছরের কালগত ব্যবধান পার হয়ে নগরলক্ষ্মীর আবেদন হয়ে উঠুক সর্বজনীন।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register