Wed 22 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় রঞ্জনা বসু

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় রঞ্জনা বসু

কন্যার নাম উমা

  গ্রামের ঢালাই করা রাস্তাটার পাশে সমরের ছোট্ট একটা দোকান। একমাত্র এই দোকানেই সখের মনিহারী জিনিসপত্র পাওয়া যায়। কারণ একটাই, প্রতি মঙ্গলবার সকালে উমা, ভোরের গাড়ি ধরে শহরে গিয়ে কাঁচামাল নিয়ে এসে নিজের হাতে জিনিস তৈরি করে অল্প খরচে। সস্তায় আধুনিক সুন্দর জিনিস গ্রামের মেয়ে, বৌ লুফে নেয়। উমার হাতের তৈরি ভেষজ আলতা, সিঁদুরের গুণগত মান দেখে গতবছর শহর থেকে এক ব্যবসায়ী এসে রকমারী জিনিসের বায়না দিয়ে গেছে। এই মঙ্গলবার দোকান বন্ধ রেখে সমর শহরে এসেছে মাল কিনতে উমার সাথে ওর কিছুটা সুবিধা হবে ভেবে। ট্রাফিক সিগন্যাল, অফিস আর ইশকুলের লোকজনের গাদাগাদি ঠেলে এগোতে গিয়ে সমর একেবারে গলদঘর্ম হয়ে উঠেছে। ঘাড় ঘুড়িয়ে উমা একবার সমরের মাথা আর গায়ের সাদা রঙের ফতুয়াটা দেখতে পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এবার রাস্তাটা টপকে ওপারে যেতে হবে, সমরের জন্য অপেক্ষা করে। হাঁপাতে হাঁপাতে সমর এসে পড়ে। উফ্, তোর খুব সাহস। ওভাবে রাস্তায় দৌড়ায়! গাড়ির ধাক্কা লাগবে তো? উমা শুনে হেসে বলে, তোমার মনে আছে একদিনের কথা। চড়কের মেলা দেখে ফিরতে রাত হয়েছিল। মেঠো পথের ধারে ধারে জলা ডোবা আর জঙ্গলে পশুদের হাঁটাচলার আওয়াজ । মাথার ওপর দিয়ে রাতচরা পাখির ডেকে ডেকে উড়ে যাওয়া... সব দেখেশুনে ভয়ে সিঁটিয়ে আছি আমি। তাই দেখে, তুমি বললে, ভয় কি? আমি আছি তো. .. আমার আজকের সব সে তো তোমারই জন্য। কথাটা শুনে,সমরের মনের ভেতর এক আলো খেলা করে। কিছু বলতে গিয়ে একটা অবসাদ এসে গ্রাস করে নেয় সমরকে। ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারে না, উমা পর স্ত্রী। ওর হাতে শাঁখা,মাথায় সিঁদুর। ওর স্বামী ওকে নেয় না। আকন্ঠ নেশায় ডুবে থেকে অকারণে মারধর করে, পরকীয়াতে মেতে থাকে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একরাতে পালিয়ে স্টেশনে এসে সামনে যে গাড়ি পেয়েছে তাতেই উঠে পড়েছিল, উমা। সেই গাড়িতে সেদিন সমরও ছিল। ফিরছিল, নিজের মেয়ের অন্তেষ্টিক্রিয়া সেরে। চেকারের কাছে একটি মেয়ের কাকুতি মিনতি দেখে নিজে থেকেই এগিয়ে গিয়ে সব শুনে পকেট থেকে টাকা বের করে তুলে দিয়েছিল চেকার সাহেবের হাতে। বাকি সময় কেটেছিল মেয়েটির গল্প শুনে। কি জানি, কি বিশ্বাসে তাকে এনে আশ্রয় দিল নিজের বাড়িতে। উমা এখনও জানে না, সমরের একমাত্র মেয়ের নাম ছিল উমা। যে তার শশুর বাড়িতে ডুবে মরেছে। সেই মেয়ের শোকে তার মা পৃথিবী থেকে চলে গেছে চিরতরে। পৃথিবীর সব কন্যা আজ সমরের কাছে উমা। যদি কোনদিন উমার স্বামী ওকে নিতে আসে! সমর সেই কথা মনে করে দুশ্চিন্তায় থাকে? সে কি মেয়েকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে, কে জানে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register