Wed 22 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় মধুমিতা ভট্টাচার্য

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় মধুমিতা ভট্টাচার্য

নিরাপরাধ পাপী

"মা তো মাই হই বটে, খুন জখম করলেও সে তো মা। সে জননী ,সে ঈশ্বর। খুন তো সে করেনি। আমার হাত থেকে হয়ে গেছে। তাও নিজের বউ কে। সে তো আমার জিনিস। আমার যা মন চেয়েছে তাই করেছি। মা নানাভাবে অত্যাচার করেছে ঠিক। সেটা তার মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য। অত্যাচার করার জন্য তো অত্যাচার করেনি। এটা কে তো শাসন ই বলে। সে শাসন করা তো অন্যায় নয়। আমার মায়ের দোষ টা কোথায় বলুন? খুন তো আমি করলাম। সেতো আমাদের ভালো থাকার ই জন্য। খুন করতে তো চাইনি। কেন বউ আমাদের সব কথা সব আবদার সব অত্যাচার ,মেনে নিল না। তাই তো রাগের বশে হয়ে গেল " এক নিঃশ্বাসে বড়ো বাবুর থাপ্পড় খেয়ে ছিটকে পড়ে বসে কাঁদতে কাঁদতে কমল বলে চলেছে। "হুজুর বউ গেলে বউ পাওয়া যায় ,মা গেলে মা পাওয়া যায় না। আমার মা কে ছেড়ে দিন। বলছি তো আমরা কেউ ওকে খুন জখম করতে চাইনি। আমাদের দাবী গুলো মানাতে চেয়েছিলাম। তাতে ওর কষ্ট হত একটু, কেন কষ্ট সহ্য করলো না? তাই তো মাথাটা বিগড়ে গেল।" উঠে দাঁড়িয়ে বড়ো বাবুর সামনে হাত জোড় করে বলতে থাকে কমল। "হুজুর যমজ বাচ্ছা আছে ,তারা খুব ছোট আমরা না থাকলে কে দেখবে ওদের এখন বলুন? ছেড়ে দিন আমাদের। ওদের মা তো নিজের জেদের জন্য মারতে বাধ্য করালো আমাদের। এখন ওই বাছাগুলোর কি হবে বলুন?" তোদের গতি জাহান্নামে। সুরেশ - কমলের শ্বশুর বলতে থাকে। "চুপ কর হারামজাদা, মেয়ের সংসার ভাঙা তোদের কাজ" শ্বশুর কে বলে ওঠে কমল। "তোর বড়ো মেয়ের সংসার ভেঙে নিজের ঘাড়ে ফেলে রেখেছিস। যৌতুক তো ন্যায্য অধিকার জামাইয়ের। আমি নিইনি আলাদা কথা। কিন্তু তোর বড়ো জামাই কেও দিসনি কেন রে? পাপী অপদার্থ বাপ তুই।" এবার যারা রাস্তায় ঘিরে রেখেছিল কমল দের পরিবার কে, চটি জুতো ছুঁড়ে মারতে লাগল। বড়ো বাবু গর্জে উঠলো সেই জনতা কে। কমলের পরিবার কে পুলিশ জীপে ওঠাবার উদ্যোগ নিলো বড়বাবু। কমল শেষ চেষ্টা করার মতো বলে উঠলো ,স্যার আপনার মা হলে কি আপনি ফেলে দিতে পারতেন? মা কত কষ্ট করে বড় করে তোলে ছেলেমেয়েদের" চোখ জ্বলছে বড়োবাবুর সামনে পড়ে থাকা কমলের বউ সুরমা র অসাড় মৃতদেহ দেখে। অত্যাচারের ছাপ সারা শরীরে। সুরমার পরিবারের কাছে থাকা যমজ বাচ্ছা গুলো মা মা করে কেঁদে চলেছে। আর্তনাদ করে কেঁদে চলেছে সুরমার পরিবার। পাশে দাঁড়িয়ে কমলের মা। "ঠাকুর যা করে মঙ্গলের জন্য"বলছে। কমল দৌড়ে গিয়ে নিজের মায়ের পা ধরে কেঁদে ওঠে। সংসার টা আমার সুন্দর ছিল মা। ভেঙে গেল। কত যত্ন করতো বউটা, সুন্দর করে সাজিয়েছিলো সংসার। আমাদের সুখ সহ্য হলো না মা , বউ কেন তোমার শাসন,,সামান্য মারধর ছিল ওটা মায়েরা তো ছেলেমেয়েকে মারতেই পারে, কেন বউ সহ্য করলো না। তাই তো মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না মা বেটা। দিলাম আগুন দিয়ে বউ এর গায়ে। আগুন তো একদিন সবাইকেই নিতে হবে। পুড়তে হবে চিতায়। তো একটু কদিন আগেই না হয় বউটা পুড়লো। আমি আর আমার মা সাহায্য করলাম তো সেই অমোঘ সত্যকে।আগুন দিয়ে দিলাম বউএর গায়ে। কি দোষ টা করলাম আমরা?? আজ ওই বউ এর জন্য আমাদের এই দশা হলো। তুমি আমার কাছে দেবী ,আমার মা তুমি। আজ বউটার জন্য আমাদের জেল/হাজত খাটতে হবে। নিজের নিরপরাধ আত্মবিশ্লেষণ ব্যস্ত কমল, বউ কে খুন করা টা যে নিজের কত দরকার ছিল, খুন করার জন্য যে খুন করেনি। দরকারে খুন করেছে এই বক্তব্য টাই তুলে ধরার চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু স্বার্থপর জনসাধারণ সেটার মর্মই বুঝতে চায় না। নিরপরাধ আত্মভঙ্গীতে কমল আর তার মা এগিয়ে যেতে থাকে পুলিশ জীপের দিকে...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register