Wed 05 November 2025
Cluster Coding Blog

T3 || প্রভাত ফেরি || 26য় জয়ন্ত বিশ্বাস

maro news
T3 || প্রভাত ফেরি || 26য় জয়ন্ত বিশ্বাস

প্রভাত জ্যেঠু, তুমিও চলে গেলে!

আমি কৃষ্ণনগরে থাকি। কৃষ্ণনগর স্টেশনে প্রথম কবিতাপাক্ষিক পত্রিকা দেখি। তখনও কলকাতা যাওয়া হয়নি। সদ্য লিখছি। ২০০৫-০৬ সাল হবে। পরে কলকাতায় পাতিরাম যাই। পাতিরাম থেকে কবিতাপাক্ষিক এর শারদীয় সংখ্যা সংগ্রহ করি। ওই সংখ্যায় এক ফর্মা পৃষ্ঠার গন্ডগোল ছিল। আমি পরে পাতিরামে গিয়ে বলি। ওরা বলেন, ওদের কাছে এই সংখ্যা আর নেই। তখন আমি পত্রিকা থেকে প্রভাত জ্যেঠুর ফোন নং পাই। ফোন করি। পটলডাঙা স্ট্রিটের বাড়ির ডিরেকশন উনি দেন। বলেন, সামনে একটা মুচি বসে থাকতে দেখবে। ওকেই জিজ্ঞেস করবে, বলে দেবে। তারপর কত গেছি প্রভাত জ্যেঠুর বাড়িতে, বিশেষ করে কবিতা দিতে যেতাম। উনি কখনও কখনও কিছু কারেকশন করে দিতেন। যূথিকা জ্যাঠিমা এটা সেটা খেতে দিতেন। দুবার প্রভাত জ্যেঠুর জন্মদিনে আমি গিয়েছিলাম।কবিতা পাঠ, খাওয়া দাওয়া, রাতে মহাবোধি সোসাইটিতে থাকা, সারা রাত গল্প করা হয়েছিল।অবশ্য প্রভাত জ্যেঠু ছিলেন না। উনি জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে আমাদের সাথে দেখা করে, বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে উনার বাড়িতে ব্রেকফাস্ট খেয়ে, কিছু গল্প করে আমি বাড়ি চলে এসেছিলাম। উনার কাছ থেকে প্রচুর পুরনো দিনের গল্প শোনার সৌভাগ্য হত। একবার চাকরি পরীক্ষা দিয়ে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায়, আমি উনাকে ফোন করি, বলি অনেক রাত হয়ে গেছে, শেষ ট্রেন অনেক রাতে আছে। আজ রাতটা থাকা যাবে? আমি রাস্তা থেকে রাতের খাবার খেয়েই যাব। শুধু থাকতে দিলেই হবে। তখন উনি বলেন, তোমায় খেয়ে আসতে হবে না। তুমি রাতে রুটি খাও তো? আমি বলি হ্যাঁ খাই। সেদিন উনার বাড়িতে রাত্রিযাপন করি। সেদিন, তখন রাত ৮ বাজে। উনি বললেন, এখন আমাকে বিরক্ত করবে না, আমি লেখায় বসব। আমি সেদিন চাক্ষুষ উনাকে খাটে বসে লিখতে দেখি। আমি কোন কথা না বলে পাশের ঘরে চলে এসেছিলাম সেদিন।উনি কোনদিনও প্রণাম নিতেন না। বলতেন রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কাউকে প্রণাম করবে না।আমি একবার বলেছিলাম আমি তো কোনদিন রবীন্দ্রনাথকে দেখিনি। আমার কাছে আপনি রবীন্দ্রনাথ।সেইদিন জোর করে উনাকে প্রণাম করেছিলাম। আজ মানুষটি নেই, খুব কষ্ট পেয়েছি। অনেকদিন পর কোন মৃত্যু আমাকে এতটা কষ্ট দিল। ভেবেছিলাম কোভিড মিটে গেলে উনার বাড়িতে যাব, সে যাওয়া আর হল না। তবে আমি বিশ্বাস করি মৃত্যুর পরও একটা জগত আছে , সেখানে গিয়ে উনি নিশ্চয়ই উনার পুরনো সঙ্গী সাথীদের সাথে কবিতা নিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। কারণ উনার গোটা জীবনটাই ছিল একটা কবিতা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register