Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৭০)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৭০)

রেকারিং ডেসিমাল

ভর্তি হয়েছেন ডাক্তার মা। পেটে সামান্য চিনচিন ছাড়া কিছুই সমস্যা নেই। সুতরাং দিব্যি হাসি মুখে বাচ্চা সিস্টারদের সাথে ইয়ার্কি ফাজলামো চলছে।

বর তো , সাবধানে থেকো টেকো, বলে, কেবিনে রেখে বাড়িতে চলে গেলেন। আর ডাক্তার পেশেন্ট ম্যাক্সির ওপর ড্রেসিং গাউন চাপিয়ে ঘরের চটি ফটর ফটর করে ওস্তাদি মারতে বেরিয়ে পরলেন। খানিক নার্সিং স্টেশনে। খানিক পাশের সব কেবিনের পেশেন্টদের সঙ্গে। চলল আড্ডা, যতক্ষণ না খাবারের ট্রলি নিয়ে নন্দদা এসে ডাক দিলো। নন্দদা এই নার্সিং হোম শুরু হওয়ার সময় থেকে মালিক ডাক্তার দম্পতির সঙ্গে আছে। তাকে এই পেশেন্ট ম্যাডামের বাবা মা, তাঁদের বন্ধুরাও চেনেন। গত বার মেয়ে হবার সময় এই নতুন মা আবার আলাপ ঝালিয়ে নিয়েছে। সেও খুব মজা পায়। যে বাচ্চা হবার সময় সে দেখেছে, সে আবার বেবি হতে আসছে, আবার ডাক্তার ও। ভাবলেই নন্দদা এ কান থেকে ও কান অব্ধি চওড়া হাসি হাসে। তা, সে এসে হ্যাট হ্যাট করে। চলো চলো, এই যে দিদি ম্যাডাম,  বাইরে ঘুরে বেড়ালে কেবল চলবে? এই নার্স দিদিমুণিরা, কিচ্ছুটি বল না কেনো? ডাকদার পেশেন্ট বলে নিয়ম কানুন নাই কিছু?  স্যার জানলে… নার্সরা হেসে ফেলে। এত নালিশ করে কি পাবে নন্দদা?  বালিশ দেবে না কেউ।

খুদি ডাক্তার হাসতে হাসতে বিছানায় গিয়ে বসে। টেবিল লাগিয়ে রাতের খাবার খাওয়া শুরু হয়। একটু পরে স্যার আর মেজ সেজ ডাক্তাররা আসেন। হবু মা স্যারের কাছে আর্জি রাখে। -- স্পাইনাল চাইই। মেয়ের বেলা জেনারেল এনাস্থেশিয়ার চোটে ত প্রথম কান্নার শব্দ টেরই পাইনি। খুব খারাপ লেগেছিল। ভয় ও। এবারে কিন্তু স্যার প্ল্যানড ওটি, হবে না, এবারে আমি প্যাঁ শুনবো।

স্পাইনাল এনাস্থেশিয়া মানেই সেই ঘাড় নিচু করে  মেরুদণ্ড বেঁকিয়ে পিঠের হাড়ের মধ্যে ইঞ্জেকশন নেয়া। রুগিরা আপত্তি জানান অনেক সময়েই।

স্যার তাই ডাক্তার মেয়েকে বললেন, আচ্ছা দেখছি দেখছি।

পরীক্ষা করে একটু ভুরু কোঁচকালো ডাক্তারের। বললেন বেবির হার্ট রেট এখনো ঠিক আছে বটে, কিন্তু পেটে ব্যথা হলে বলবে মেম সাহেব, আমি তখুনি ওটি রেডি করব।

দু বছর আগে মেয়ে হবার সময় মারাত্মক ঠাণ্ডায়  রাত তিনটেয় স্টিলের হিম টেবিলে শুয়ে কষ্ট পেয়েছে মা। এ বছর যেন ঠাণ্ডা আরও বেশি। এর মধ্যে ওটি? পাগল না পেট খারাপ ?

আয়া মাসিকে বেডের পায়ের কাছে পোস্টিং দিয়ে স্যার বলে গেলেন, মাসি, দিদিমণির একটুও ব্যথা হলে ওপরে কোয়ার্টারে এসে জানাবে। দেরি করবে না।

স্যারেরা বেরিয়ে যেতেই ডাক্তার পেশেন্ট বলল, মাসি ঘুমিয়ে নাও। আমি খাসা আছি। কোথাও যাবে না রাতে। আমি এই শীতের মধ্যে মোটেই ওটিতে ঢুকব না।

মাসি কাঁচুমাচু হয়।

কিন্তু দিদি ব্যথা হলে…

চুপ। কোন কথা না। শুয়ে পড়ো তুমি।

বালিশে পিঠ দিয়ে বসে থাকে হবু মা। পেটের পাশ ধরে চিনচিনে ব্যথা। শুতে পারে না। সারা রাত ছটফট করে ভোরের দিকে চোখ লেগে আসে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register