- 6
- 0
এইবারে রেডি হয়ে আছে মা। নো চিন্তা। পটিপটি হয়ে ট্রলি চড়ে হাসি মুখে, ঝকঝকে রোদ, সামনের কাঁচের ওপারে ঐ তো চিরকালের আরাম তার প্রাণের নবনালন্দা হাইস্কুল বিল্ডিং, আহ। কি আনন্দ! এই চললাম নতুন বেবি আনতে। যাবার পথে এগিয়ে এসে হাত ধরেন শ্বাশুড়ি মা। এই ত এসে গেছি সবাই। এই দ্যাখো, দাদা ও এসেছেন। গরম চেনা হাতের ছোঁয়া কপালে। ঘিয়ে পাঞ্জাবি আর সাদা কাশ্মীরি শাল আর কিইইই ভালো গন্ধ। বাবা… ভারি গলা বলে, বাবা, এই ত, কিছু চিন্তা নেই।
মায়ের একটু মন কেমন করে। বলে, বুতাই? বাবা বলেন , মা আছেন ত তাকে নিয়ে। আমি চলে এলাম তাই। বিকেলে সে আসবে আম্মুর সাথে।
ট্রলি ঢুকে যায় ওটির ভেতর।
কিন্তু স্যারের মুখ গম্ভীর। শ্বাশুড়ি মাকে বলেন, এখনো আপনার ছেলে এলো না ? কখন ফোন করেছি। হাজব্যান্ডের কনসেন্ট না নিয়ে এত প্রিম্যাচিওর বেবি, আমি ত শুরু করতে পারব না।
শ্বাশুড়ি চিন্তিত গলায় বলেন, আসলে ও ত অনেক সকালে বেরিয়ে যায়। অফিসে জানানো হয়েছে। কিন্ত ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস, জানেন তো। হ্যাঙ্গারে চলে গেলে আর কেউ সিকিউরিটি এরিয়াতে যেতে পারে না ব্রেক না হলে। তাও আমরা বারবার বলছি।
ডাক্তার বলেন, দেখুন। দেরি হলে মুস্কিল।
এর মধ্যেই কর্তার গলা পায় নতুন মা।
এসে গেছি, এসে গেছি।
দমদম এয়ারপোর্ট। এই কাছের থেকে কাছে ত নয়। প্রায় বারোটা বেজে গেছে। এবার স্যার রেডি হলেন ওটি শুরু করতে। দরজা বন্ধ করার আগে হবু বাবাকে খালি জানিয়ে দিলেন, রিস্ক আছে। বেবির কন্ডিশন নিয়ে চিন্তা আছে মাথায় রাখুন।
ওটির ভেতর এদিকে হইহই। পেশেন্ট বলছে, স্পাইনাল দিন কিন্তু। আমি অজ্ঞান হব না। এনাস্থেশিয়া ডাক্তারবাবু বলছেন, আহা এত অস্থির হয় কেন। পিঠ মুড়ে বসো। সামনে ঝোঁকো, সামনে। ইঞ্জেকশন শিড়দাঁড়া ফুঁড়ে ঢুকে যেতে আস্তে আস্তে পায়ের দিক থেকে অবশ হতে শুরু হল। অমনি কলকল দু পাশে, এই সোনালিদি এই। মা দু দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে, কলেজের জুনিয়র পারমিতা আর তার ভাই পার্থ। রুগি এবং ডাক্তার দু দলেরি দাঁত বের করে কি হাসি।
হ্যা হ্যা, কি মজা রে। স্যার স্ক্রাব করে গাউন পরে এসে দাঁড়িয়ে দেখেন পরিষ্কার করে স্টেরাইল কাপড় চাপা দেয়া শুরু হচ্ছে। বন্ধু ডাক্তাররা বলে, ও স্যার আরেকটা বাচ্চা আছে ত? এত সুন্দর পেট। একটাও দাগ নেই যে। হ্যা হ্যা.. পেশেন্ট ও হাসে, ও স্যার আপনিই ত কেটে ছিলেন। মাথার ওপরে ওটির মস্ত গোল ঘোরানো আলোর চকচকে স্টিলের মধ্যে আয়নার মত পরিষ্কার নিজেকে দেখতে পায় মা।
স্যার ছুরি দিয়ে প্রথম ইন্সিশান দিলেন। গোলাপি ইউটেরাস। ব্যস তারপরেই ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল সবাই। স্যার পিডিয়াট্রিসিয়ানকে শিগগির আসতে বলছেন। ছোটরা যন্ত্রপাতি এগোচ্ছে। সাকশান, সাকশান, জলদি…
মা টের পায় ছানা ত বেরিয়ে এসেছে। কেউ কিছু বলছে না কেন? মা ডাকে, স্যার, ও স্যার, কি বেবি হল? আমি দেখব যে।
ঘর্মাক্ত চিন্তিত বুড়ো ডাক্তার বলেন, এই সময় তুমি কি বেবি জিজ্ঞেস করছ মেম সাহেব?
এই যে জলদি দেখ, ছেলে। খুব কষ্ট পেয়েছে, অক্সিজেন দিতে দাও, ছাড়ো।
মায়ের মাথার পাশে বাচ্চাকে হাতে নিয়ে পিডিয়াট্রিসিয়ান দৌড়ে এসেছেন।
মা বড় করে তাকায়। অবাক হয়ে দেখে পদ্মাসনে বসে আছে নীল টুকটুকে গোপাল।
সারা গায়ে কর্ড পেঁচিয়ে ছিল যে, খুব মুস্কিল… বলে দৌড়ে নিয়ে চলে যান ডাক্তার।
কয়েক মুহূর্ত পরেই মায়ের কানে আসে সেই বহু কাঙ্ক্ষিত শব্দ। ওঁয়া।
পরিষ্কার বুঝতে পারে মা, ছেলে মা বলেই ডাকছে।
0 Comments.