Sun 19 October 2025
Cluster Coding Blog

রম‍্যকথায় মৃদুল শ্রীমানী

maro news
রম‍্যকথায় মৃদুল শ্রীমানী

কিষ্কিন্ধ‍্যায় কিমাশ্চর্য

কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যে মহা নির্বাচন। বালী ও সুগ্রীব, দুই ভাই, নেমে পড়েছেন মহারণে। দাঁত কিড়মিড়, জিভ ভেঙ্গানো ইত্যাদি যত প্রকার বাঁদুরে ক্রিয়াকলাপ আছে, তা অমিত পরাক্রমে দুই ভাই চর্চা করছেন। দুই ভায়ে যে ঈদৃশ আচরণ করা চলে, কিষ্কিন্ধ্যাবাসী আগে দেখে নি। বালী দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছে। সে বড় এই দাবিতে। তার পর সে যুদ্ধে গিয়েছিল। গুহার ভিতরে প্রবল যুদ্ধ করছিল বালী। ভাই সুগ্রীব বাইরে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। এরপর গুহার ভিতর থেকে প্রচুর রক্ত বের হতে দেখে সুগ্রীব ধরে নিয়েছিল বালী আর বেঁচে নেই। তখন গুহার মুখে একটা পাথর চাপা দিয়ে কিষ্কিন্ধ্যায় ফিরে এসে সুগ্রীব রাজা সেজে বসে। ইতিমধ্যে বালী যুদ্ধ জয় করে ফিরে এসে সুগ্রীবকে সিংহাসনে আসীন দেখে অবাক। কানটি ধরে তাকে তাড়িয়ে দিল। কাঁদতে কাঁদতে সুগ্রীব বনে চলে যেতে গিয়ে ভাবল নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে অভিযোগ করা যাক। সে সময় দাশরথি রঘুপতি রাম কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে বৃত ছিলেন। সুগ্রীব বেশ পাকাপোক্ত আইনি ভাষায় দাশরথি রঘুপতি রামের কাছে বালীর অন্যায়ের বৃত্তান্ত বললেন। রাম সাহেব বালীকে নির্বাচনী আইনে রীতিমতো নোটিশ জারি করলেন। বালী প্রথমে দাশরথি রঘুপতি রামকে পাত্তা দেয় নি। নির্বাচন কমিশনার তো কী হয়েছে? নোটিশ করলেই জো হুজুর বলতে হবে না কি? তার পরে বালীর কানে গেল ভেতরে ভেতরে সুগ্রীব কিছু কিছু বড় বড় বানরকে প্রভাবিত করে ফেলেছে। কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যের আমলাদের অনেককে মন্ত্রণালয়ের সদস্য করবার কথা দিয়ে সুগ্রীব বেশ একটা চক্রান্ত করে ফেলেছে। বালী তখন নির্বাচন কমিশনের কাছে হাজিরা দিয়ে বলল আমরা দুই ভাই বানর প্রথামতে লড়াই করব। যে জিতবে কিষ্কিন্ধ্যা তার। বানর প্রথামতে লড়াইতে দাশরথি রঘুপতি রামের খুব একটা সায় ছিল না। কিন্তু সুগ্রীব রাজি হয়ে যেতে নির্বাচন কমিশনের আর বলার কিছু থাকে না। তখন দুই ভাইয়ের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দুজনেই দুজনকে যথেচ্ছ মুখ ভ্যাঙাচ্ছে, কিল দেখাচ্ছে, বাঁদুরে ভাষায় অসাংবিধানিক শব্দ প্রয়োগ করছে। কিষ্কিন্ধ্যাবাসীও অন্য সব বিনোদন বাদ দিয়ে দুই ভাইয়ের নির্বাচনী দ্বৈরথ প্রত্যক্ষ করছে। দূরদর্শনের চ্যানেলে চ্যানেলে দুই ভাইয়ের কে কত বড় বীর, তাই নিয়ে সান্ধ্য আসর বসতে লেগে গেল। দুই পক্ষের বিবদমান নেতারা গলার জোরে নিজ নিজ পক্ষের সমর্থন করতে ব্যস্ত হল। এত জোরে একই সাথে সব পক্ষ কথা বললে যে কারো কথাই বোঝা যায় না, সেটা কেউ মানতে চায় না। অবশেষে শুভক্ষণ দেখে দুই মহাবল কপি যুদ্ধ শুরু করলেন। টিভিতে তাঁদের যুদ্ধ দেখে গোটা কিষ্কিন্ধ্যা বাসী পুলকিত ও শিহরিত। নির্বাচন কমিশনার দাশরথি রঘুপতি রাম মাঝে মাঝেই দুই মহাবীরের মধ্যে কে বালী, আর কে সুগ্রীব ঠাহর পাচ্ছিলেন না। রাম ইতিমধ্যে চাইছিলেন সুগ্রীব কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যের রাজা হোক। কেননা সুগ্রীব তাঁকে বলেছিলেন বালীকে বধ করে সুগ্রীবকে জয়ী ঘোষণা করলে রামকে উপযুক্ত পারিতোষিক হিসেবে কোনো অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল করে দেওয়া হবে। দাশরথি রঘুপতি রাম তাই গোপনে স্থির করে নিলেন ভায়ে ভায়ে যুদ্ধ চলা কালেই তিনি তীর ছুঁড়ে বালী বধ করবেন। এদিকে দু পক্ষের চেহারা, আচার আচরণ ও ভাষা প্রয়োগ, দাঁত খিঁচানোর পারিপাট্যে এত মিল, যে রাম কিছুতে ঠাহর পাচ্ছিলেন না কোনটা বালী আর কোনটা সুগ্রীব। তখন তিনি বালীকে ডাকিয়ে বললেন তোমরা আচার আচরণে ম্যানিফেস্টোয় এতই অভিন্ন যে নির্বাচনী যুদ্ধকালে আমি তোমাদের পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না। বালী, তুমি বড় পার্টির হাইকম্যান্ড, তুমি যদি যুদ্ধের সময় মধুপুষ্পী ফুলের একখানি মালা পরো তো ভাল হয়। বালী রামের কথা মেনে নিল। সুগ্রীব তো বালীকে মালা পরতে দেখে আহ্লাদে আটখানা। এবার গলায় মালা থাকার জন্যে তীর ছুঁড়তে গিয়ে আর রামের সমস্যা হবে না। সহজেই বোঝা যাবে কে বালী আর কে সুগ্রীব। সুগ্রীব আনন্দের আতিশয্যে নির্বাচন কমিশনার রামের গুণব্যাখ্যান করতে লাগল। ওদিকে রামের ভয় হল বালী না সব কৌশল ধরে ফেলে। গুপ্তলোক মারফত সে বালীকে জানালো বাঁদুরে নির্বাচনী যুদ্ধ চলাকালীন সে বালীকে একটি তীর ছুঁড়বে। কিন্তু তাতে সাময়িক কিছুদিনের জন্য বালী অজ্ঞান হয়ে থাকবে। আসলে কিন্তু বালী মরবে না। অনেকদিন রাজত্ব চালাবার পরে বালীর পক্ষে এবার অ্যান্টি-ইনকামবেনসি ফ্যাক্টর কাজ করছে। যুদ্ধ যুদ্ধ ভান করে বালী আপাতত রণে পরাজয় বরণ করুক। পাঁচ বছর পরে আবার দেখা যাবে। নইলে কিষ্কিন্ধ্যাবাসী দুই ভাইকেই তাড়িয়ে হনুমানের কাছে রাজত্ব তুলে দিতে পারে। সেটা হবে রেফারেন্ডাম বা প্লেবিসাইট। ইলেকশন কমিশনের এক্তিয়ার আর থাকবে না। রাজত্বে তো হনুমানের নৈতিক দাবি আছে। তার বাবা কেশরী ছিলেন এককালের বানররাজ। হনুমানতন্ত্রের প্রতি বিরোধিতায় ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া মাধ্যমে দেশের মঙ্গল হয়, জনগণের এই বদ্ধমূল ধারণা অব্যয় অক্ষয় রাখতে বালী রামের হাতে তীরের খোঁচা খেয়ে হেরে যাবার অভিনয় করতে রাজি হয়ে গেল। কিষ্কিন্ধ্যাবাসী কিছুতেই বুঝতে পারল না বালীর পরে সুগ্রীব রাজা হলেও কোনো কিছুই পরিবর্তন হল না কেন?

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register