- 8
- 0
দোল। সূর্য আর পৃথিবীর একে অপরকে টেনে রাখা আর দোল দেয়া অদৃশ্য সুতোর বাঁধনে। এই নিয়েই নাকি দোল যাত্রা। আমরা বাংলায় পূর্ণিমায় দোলের রঙ ছড়াই, কিন্তু এ বছর মধ্য প্রদেশে গিয়ে দেখি, সেখানে দোল পঞ্চমীতেই বসন্ত পঞ্চম বাজছে উত্তাল। নেড়া রুক্ষ চম্বল আর বিন্ধ্যাচলের খয়েরী গায়ের ক্যানভাসে উদ্দাম পলাশ, শিমুল, অশোকের খুনখারাপি লাল, যত দূরে চোখ যায় পথের দু পাশে। আর আশ্চর্য, কাঁটাওয়ালা ক্যাকটাস, যাকে চিরকাল বেরঙ নিষ্ঠুর বলে জানি, তার সারা গা ফেটে পড়ছে গুলালের গোলাপিতে। এমন উন্মুক্ত উন্মাদ দোল, এই নাকি দেখতে, মেতে উঠতে, ইন্দোরে আসে সারা পৃথিবীর মানুষ।
শহরে, জল কামানে রঙ মিশিয়ে ছোঁড়া হয় বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ির উচ্চতা ছুঁয়ে। হাজারো লোক রাস্তায়। হোলি হ্যায়।
এই আনন্দ দেখে মনে পড়ে গেল।
ফাগুন চৈত্র আর চারদিকের রঙেরা ছাড়া আমার আর দোল খেলা ছিল না। আমি আর আমার গুটগুটি বন্ধু নিজেদের বাইরের ঘরে এ ওর গায়ে পিচকিরি ভর্তি ভর্তি রঙ গুলে গুলে ঢেলে হেসে কুটিপাটি হয়ে যেতাম। বাইরে বাঁদুরে রঙের বীভৎস উল্লাসের আওয়াজ দৌড়ে যাওয়া অজস্র পায়ের উন্মত্ততা শোনা যেত কিন্তু তা যেন অনেক অনেক দূরে আমাদের ফ্রক আর হাফ প্যান্ট পরা চার দেওয়ালের পৃথিবীতে এর কোন ছিটে এসে পৌঁছাত না।
কখন তার মধ্যেই জ্ঞান গোঁসাই বাবার হাত ধরে এসে বললেন ; আহা, তোমা বিনে কারে বলি -- আর বাগেশ্রী রাগে কথা বসিয়ে বাবামশাই গলায় পরিয়ে দিলেন মীঢ় আর তানের গয়না। আমি দোল ফাগুনের পূর্ণিমার নেশায় গাইতে থাকলাম শ্রীমধুসূদন দোলে শ্রীরাধা সনে মনের বৃন্দাবনের হদিস পাওয়া গেল।
ঢের বড় হয়ে যাওয়া আঠারোয় এসে তবেই খবর পেলাম বসন্ত রাগের সেই দামাল দুরন্ত সুর এলোমেলো বাতাসের সঙ্গে, বেল ফুলের মাতাল করা গন্ধের সঙ্গে, নববর্ষের শাড়ি পরার ধুকপুকের সঙ্গে, পলাশ আবীর ফাগ সব পাকাপাকি ভাবে লাগিয়ে দিয়ে গেল মনের খাতায়। বলে গেল, তুলে ফেলো না। মহাকাল ধোবিওয়ালা, কঠিন হাতে হাজার চেষ্টা করলেও নয়। রঙ থাকুক।
0 Comments.