Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পে সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

maro news
গল্পে সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

অলীক বসন্ত

ঐ যে ভিক্টোরিয়ার বাগানের উল্টোদিকের মাঠে জলফোয়ারার সামনে সুন্দরী কেশবতীর সরু সিঁথির মতো পায়েচলা পথ গিয়েছে, তার দু'ধারে কেয়ারি করা অজানা গাছে অচেনা ফুল ফুটেছে --- নাজুক বেগনীরঙা পুষ্পগুচ্ছ, আমি তার নাম জানি না। না-ই বা চিনলাম, ভাললাগতে তো দোষ নেই। মানুষকে না চিনেই তার উপরে অহৈতুকী প্রীতি জন্মাতে পারে যখন, এ তো নিষ্পাপ ফুল!

রোদ্দুরের তাপ এখন মিঠে থেকে কড়া হচ্ছে, নাগরিক কপালে জমছে অনাহূত স্বেদবিন্দু --- চরিত্রহীন ফাল্গুনী বাতাসের চোরা ঘূর্ণির টানে সাকিন হারাচ্ছে রুদ্রপলাশের বেহায়া পাপড়িরা। এভাবেই বসন্ত আসে আমার নিষ্করুণ শহরে। এসে জিরোয় না এতটুকুও। এতবড় শহরবাড়িতে তার দু'দন্ড বসে হাঁপ ছাড়ার ফাঁক নেই কোথ্থাও। তাই কোকিলের মন উচাটন করা ডাক, আমের বোলের মাতাল করা সুবাস, দোলপূর্ণিমার চরাচর ভাসিয়ে যাওয়া কাকজ্যোৎস্না --- কিছুই জোটে না এই কংক্রিটের শক্তিপীঠে। এখানে হিজলগাছ নেই, নেই ধানসিঁড়ি নদী, খ্যাপা বাউল একতারাতে তান তোলে না সোনাঝুরির বনে। এখানে আকাশের উঠোনে দন্ডি কাটে না কোনো সোনালি ডানার চিল, অবনীরা বাড়ি থাকে না এখানে, সারাদিন দুনিয়াদারি করে বেড়ায় শহরের হাটেবাজারে।

তবু বসন্ত আসে। লক্ষ্মীছাড়া, চালচুলোহীন হাঘরের মতো ভবঘুরে বসন্ত ঠিক আসে প্রত্যেক বছর। ওই যে, একজনের শতচ্ছিন্ন জামাটি এলেবেলে সেফটিপিন দিয়ে আটকানো পিঠের কাছে, আর অন্যজনের অবাধ্য হাফপেন্টুল খসে পড়তে চাইছে হাঁটুর নিচে--- জটপাকানো তামাটে চুল আর নোংরা ফাটা গালের মধ্যেও আশ্চর্য উজ্জ্বল আর খুশিয়াল দু'জোড়া চোখ, সঙ্গে হলদেটে দাঁতের রিনরিনে হাসি --- হঠাৎই ধূসর ফুটপাথের কঠিন পাথুরে বুকে ছিটকে এসে পড়ে একমুঠো গোলাপি আবির। তারপর দখিনা হাওয়ার সওয়ার হয়ে রেণুরেণু ছড়িয়ে যায় শহরময়।

আমিও রঙ খেলতে নামি। অলস আখর বিন্যাসে, মধুর শব্দ চয়নে অলীক এক বসন্ত বসন্ত খেলা।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register