Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৭৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৭৮)

রেকারিং ডেসিমাল

কন্যা, পুত্রবধূ এবং দুই নাতনিকে নিয়ে শ্বশ্রুমাতা নববর্ষের বাজার করতে গড়িয়াহাট। ট্যাক্সি। বাচ্ছারা এ ওর ঘাড়ে। গরমে হাঁসফাঁস হয়েও সিল্কের শাড়ি। তবু, গড়িয়াহাট খুব দূরে ত নয়, কাজেই নেমে পড়া যেত। তারপর শুরু হল রোমাঞ্চকর যুদ্ধের গল্প। ফুটপাথে লোক লোকের মাথা খেয়ে ফেলছে। মানুষের স্রোত, নানান সাইজ, গঠন, সাজপোশাকের। পিলপিল করে মানুষ এ ওকে কনুই দিয়ে গুঁতিয়ে, ধাক্কা দিয়ে, উদভ্রান্তের মত চলেছে। কি না, সেল। চৈত্র সেল। নতুন বছর আসছে। এই প্রমীলা বাহিনী অবশ্য সেলের ডিসকাউন্ট সন্ধানে আসেনি। নতুন জামা ইত্যাদির খোঁজে বড় দোকানে যাবে বলেই এসেছে। কিন্তু যাবে কি করে ? চারপাশের মানব স্রোত বলছে, যেতে নাহি দিব! তার মধ্যে ছোটদের হাত শক্ত করে ধরতে হচ্ছে। পাছে ভিড়ের ধাক্কায় ছিটকে না যায়। বাসন্তী দেবী কলেজের আগে পরে ছোটদের জামার বনেদি ভালো দোকান। সেদিকে যাবার খানিক চেষ্টা করে সিনিয়র মোস্ট ঘেমে ঝোল, দিকভ্রান্ত এবং হতাশ হয়ে বলেন, উফ, এত মহাবিরক্তি!  হ্যাঁ রে, যাব কি করে? ফিল্ডে নামে হাসপাতালে লোক খেদানিয়া অভিজ্ঞতাওয়ালা বউ। কনুইয়ের গুঁতো, আর বকুনির ফোয়ারায়, টেন কমান্ডমেন্টের মোজেস যেমন রেড সি ফাঁক করে ফেলেছিলেন, সেই রকম একটা রাস্তা বের করে মানব সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে বাকিদের দোকান অবধি এনে ফেলে রুমাল বের করে কপাল মোছে। বাচ্ছারা ভ্যাঁ করে কাঁদার কাছাকাছি। ছোটটাকে দোকানের কাউন্টারের ওপরে তুলে দেয় মা। হাঁ হাঁ করে ওঠে দোকানের কর্মচারী এবং বাকি দোকান ভর্তি ঠাসা লোক।

একি!  একি!  একে ওঠালেন কেন?

মা নির্বিকার মুখে বলে,  নইলে এত ছোট, এত ভিড়ে ত নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি জামা দিন। বেরিয়ে যাই। মা, কি জামা নেবে চটপট বলো।

বাকি ক্রেতাদের হই হই, প্রতিবাদ,অগ্রাহ্য করে কোন রকমে দুই মেয়ের ফ্রক কিনে শান্তি। মেয়েকে কোলে করে বেরিয়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে মা। মেয়ের দিদি শান্ত মানুষ। কাঁদোকাঁদো মুখে তার মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে আসে। দিদা ঘর্মাক্ত কলেবরে মস্ত বাক্স দুখানা বড় পলিব্যাগে নিয়ে বিজয়ীর হাসি হেসে এসে বলেন, হয়েছে।

বাইরের হাওয়ায় একটু শান্তি হয় সকলের।

দম নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ।

চল, চল, ইন্ডিয়ান সুইট হাউস। গরম সিঙারা আর মালাই চমচম।

গড়িয়াহাটের ছপিং রিচুয়াল শেষে এইটা মাস্ট ছিল। সিলেক্ট স্টোর থেকে রাসবিহারীর দিকে মুখ করে দু পা হাঁটলেই দেয়ালের গায়ে ছোট্ট দোকান। তাতে অনবদ্য মুচমুচে সিঙাড়া, আর দুই কমলা গোলের মাঝখানে ক্ষীরের প্রলেপ দেয়া অসাধারণ মিষ্টি। বৌমার বাপের বাড়ি তেও একই পছন্দ চালু ছিল। তাই এখানে ও দোকান বরাবর যেতে কি আনন্দ, আহা। একটা বড় ব্যাগে এইসব ভরা হলেই আবার বাড়ির দিকে ফেরা। চৈত্র বাজারের হইচই, সে বছরের মত মধুরেণসমাপয়েৎ।

এইটা না হলে যেন, নতুন বছর আসতেই পারে না।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register