Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী (পর্ব - ৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী (পর্ব - ৩)

ক্ষণিক বসন্ত

বাহার -পেলেন? -না স্যার। ফায়ার ব্রিগেডের অফিসারটিকে ভাঙা দুর্গের দরজার মতো লাগল বাহারের। সকাল থেকে ডুবুরি নেমেছে গঙ্গার জলে। কিন্তু সোহিনীর বডি পাওয়া যায়নি। একরাশ শূন্যতা নিয়ে খানিকটা অপরাধীর চোখেই বাহারের দিকে তাকালেন অনডিউটি ফায়ার ব্রিগেড অফিসার নটরাজ শ্রীবাস্তব। কিন্তু বাহারের চোখেমুখে তার বিনিময়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। তার চোখের শূন্যতা অমাবস্যারাতের আকাশের মতো। সন্ধ্যা হতেই ঘাট শুনশান হয়ে ওঠে ক্রমশ। সেই নিঃসঙ্গ ঘাটে একা জলমুখী হয়ে বসে থাকে বাহার আর বিলু মাতাল। বিলু এখনও বুঝতে পারেনি ওটা সত্যিই কে ছিল। তার স্বপ্নর জিনপরি নাকি সোহিনী! যতোবার সে ওই ঘটনার কথা ভাবতে যায়, আতঙ্কে শিউরে ওঠে। মনে মনে নিজেকেই দোষ দেয় সে। সব শালা ওই পঞ্চুদার ভাঁটির বাংলা মদের দোষ। মেথরপাড়ায় ন'জন একরাতে ওই এক দোকানের মদ খেয়ে অন্ধ হয়েছে। বিলুর বাপের ভাগ্যি সে এখনও চোখে দেখতে পাচ্ছে। মনে মনে নিজেকে লাথ মারে সে। আর মদ খাবে না জীবনে। হাঁত কাঁপবে, জিভ সেঁধিয়ে যাবে ভিতরদিকে। তাও খাবে না। বাপ মা নেই। আছে তার একমাত্র মা মরা বছর আটেকের মেয়ে। মনে মনে তার দিব্বি কাটে বিলু। তারপর আড়চোখে বাহারকে দেখে। ছেলেটা ওই মেয়েটার আশিক। বিয়ে হবার কথা ছিল দু'জনের। ছেলেটা নাকি মুসলমান। ঘাটে লোকজন আলোচনা করছিল। মেয়েটা নাকি সোসাইড করেছে। এই এক শক্ত শব্দ হয়েছে আজকাল। উচ্চারণ করতে গেলেই জিভ জরিয়ে যায় বিলুর। লোকে বলে ছেলেটা বিধর্মী। সেই জন্যই কি মেয়েটা 'সোসাইড' করল? ভাবতে চেষ্টা করে বিলু। এই আজকালকার মেয়েমানুষগুলো কেমন টপাটপ সোসাইড করে ফেলছে। তার বৌ সরস্বতীও যে অমন ফস করে ঘাসমারা বিষ কেন খেল আজও কী জানে বিলু? কথা নেই বার্তা নেই। কাজ থেকে রাতে ফিরে বিলু দেখে তার বৌয়ের মুখে ফেনা উঠেছে। পাশেই ঘাসমারা বিষের প্যাকেট। হাসপাতালে এক রাত্তির থেকেই বডি হয়ে গেল সরস্বতী। কেন? কল্যাণের সঙ্গে লটরঘটরটা তো সে মেনেই নিয়েছিল। মদ খেয়ে খেয়ে তার নিজের সব পৌরুষ গেছে। মেয়েমানুষের বেঁচে থাকার জন্য আগুন লাগে। বিলু মেনে নিয়েছিল তো। তবু বিষ খেল মাগীটা। বাচ্চাডার কথা ভাবলি না একবার? সে হোক না হয়। কিন্তু এই ছোকরাটাকে দেখে তো ভালোই লাগে বেশ। মন বলে ছেলেটা ভালো। ওর দ্বারা কোনও খারাপ কাজ হওয়া অসম্ভব। তবু মেয়েটা বিষ খেল। কেন? এ প্রশ্ন ঘোরপাক খেতেই থাকে বিলুর মাথায়। ধর্ম নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই বাহারের। সে জানে তার পীরপয়গম্বর সর্বশক্তিমান। তাঁকে কে কী নামে ডাকল, তা নিয়ে তাঁর কিছু আসে যায় না। বাহার জানে সোহিনী তাকে ছেড়ে চলে গেছে ধর্মের জন্য নয়। সুরের জন্য। তার যে গলায় সুর দেননি বিধাতা। সকলকে কী এক সপ্তকে বাঁধা যায়? কিন্তু সোহিনী যে সুর খুঁজছিল। ভাবতে ভাবতে দু চোখে নদীর ভরা উজান দেখা দেয় বাহারের। তার মন বলে ওঠে।' হা আল্লা। হা কৃষ্ণ। হা সর্বশক্তিমান। কেন তুমি আমার কণ্ঠে সোহিনীকে শোনাবার জন্য একটুকু সুর ঢেলে দিলে না?' ভাবতে ভাবতেই বাহার এক ঝটকায় বাস্তবে ফিরিয়ে আনে বিলু। -কী ভাবো? মেয়েটা মরল কেন। সেই কথা? -তুই তো দেখেছিলি। মেয়েটা মরতে যাচ্ছে। আটকাতে পারলি না? একটু দম নিয়ে নেয় বিলু। ঘটনাটার পর প্রায় কুড়ি ঘন্টা হয়ে গেল। এক বিন্দু মদ পড়েনি তার জিভে। জিভের সাথে সাথে ভয় টানছে তার মনের ভিতর। সেই জিনপরির ভয়টা... -কী রে বল? -তুমি মুসলমান। ও হিন্দু। তাই মেয়েটা মরেছে। আগুণ জ্বলে ওঠে বাহারের চোখে। অপেক্ষা অপেক্ষায় রাত বেড়ে গেছে অনেক। বিলুকে মেরে ফেলতে মন করছিল বাহারের। -তুই সব জানিস? শালা মাতাল। জানিস তো বল বডি গেল কোথায়? -উজান জোয়ারে বডি সমুদ্রের দিকে চলে গেছে। ও আর মিলবে না। -তবে রে হারামি। সব জানিস তুই? জানিস না সব।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register