Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক রম্য রচনায় সংযুক্তা দত্ত - ৮

maro news
ধারাবাহিক রম্য রচনায় সংযুক্তা দত্ত - ৮   আজ শোনাবে আমার নাচের দ্বিতীয় ইনিংসের গল্প মানে মা হওয়ার পরের জীবনের গল্প। মাঝে ৬ বছরের বিরতির পর আবার কর্মজীবন শুরু হয়েছে। পেরেন্ট টিচার মিটিং এ এসে এক স্টুডেন্টের বাবা, আমায় জিগ‍্যাসা করলেন," ডিড ইউ টিচ বেঙ্গলী ড‍্যান্স এন অ‍্যা প্লে স্কুল ফাংশন?" ফ্ল‍্যাশব‍্যাকে ঝরঝর করে স্মৃতিরা ভীড় করে এল.. ইন্দোর,কলকাতা,হলদিয়া পর্ব চুকিয়ে আমরা তখন বিশাখাপত্তনম, সমুদ্র শহরের বাসিন্দা। সে এক বিভীষিকাময় শহর, ভাষা বিভ্রাটের চুরান্ত। মেয়ের দেখাশোনা অসুবিধার জন‍্য চাকরি ও ছেড়ে দিয়েছি আর নাচ তো প্রায় গত জন্মের ব‍্যাপার মনে হচ্ছে। মেয়ে একটা প্লে স্কুলে যেত " টম এ‍্যন্ড জেরী", প্রিন্সিপাল ভদ্রমহিলা আমায় খুব পছন্দ করতেন। কথায় কথায় জানতে পেরেছিলেন আমার নাচের ব‍্যাপারে, স্কুলের এ‍্যানুয়াল ফাংসানে আমায় বললেন যে একটা তোমাদের রিজিওনাল ড‍‍্যান্স করাও বাচ্ছাদের দিয়ে। আমি তো আহ্লাদে আটখানা। একদল তেলেগু, গুটি কয়েক মারোয়ারি আর আমার একেশ্বরী বাঙালি খুশী, এই কচি কাচাদের দল নিয়ে শুরু করলাম। ওরে বাবা, একে তো জনা কুড়ি বাচ্ছা ২ থেকে ৪ বছরের মধ‍্যে তায় আবার যে যার নিজের ভাষায় কথা বলে , হিন্দি ইংরেজি একটু একটু বোঝে আর আমি শুধু একটু একটু তেলেগু জানি তখন। ভয়ানক পরিস্থিতি কিন্তু ওই যে বলে, মিউজিক ক‍্যান ব্রেক অল দ‍্যা বেরিয়ার, তাই যেই গানটা চালালাম সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা গুলো বেশ তালে তালে দুলতে লাগল। কী গান বলো তো? সলিল চৌধুরীর সুরে, সবিতা চৌধুরীর গাওয়া, "হলুদ গাঁদার ফুল দে এনে দে"। তাল তো হল কিন্তু ভাব? কোনোরকমে তাদের হলুদ গাঁদার ফুল,সাতনরী হার আর কানের ঝুমকো একটু বোঝাতে পেরেছিলাম, বাকী সব তালে তালে। আমার এ‍্যাস্সিটেন্ট আমার কন‍্যা যদিও তিনি তখন মাত্র ৩ বছরের কিন্তু যেহেতু ভাষাটা বোঝে, তাই একটু সবার ওপর ছড়ি ঘোরাতো। মাঝে মাঝেই, " মা, দেখো, ও কিন্তু ভুল করছে',আরে আরেকজনের ভুল দেখতে গিয়ে যে নিজের নাচের গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে সেদিকে হূঁশ নেই। এরম ভাবেই চলল প্রস্তুতি। মানানসই সাজ তো চাই, আমাদের বাঙালি দের যেমন সরস্বতী পুজো স্পেশাল একখানি হলুদ শাড়ী থাকে বাচ্চাদের জন‍্য কিন্তু এখানে তো তা নেই। তখন ওনলাইনের জমানা তেমন শুরু হয় নি। আমার মধূসুদন দাদা তো মা, তাই মার কাজ হল কুড়ি খানা ছোট শাড়ী কিনে ক‍্যুড়িয়ার করা। এবার সমস‍্যা হল সাউথ ইন্ডিয়া সবকিছুই খুব ঝকমকে, তাদের বাচ্ছারা এত বড় স্টেজে নাচবে কিনা সূতির শাড়ী পরে? বাবা মারা প্রায় বিদ্রোহ ঘোষণার মত অবস্থা, অনেক কষ্টে গানটিকে ইংরাজিতে তাদের বুঝিয়ে রাজি করানো হল সুতীর শাড়ী পরাতে। অনুষ্ঠান হয়েছিল ভাইজ‍্যাগের এক বিরাট প্রেক্ষাগৃহে 'ভিশাখা চিলড্রেন্সের থিয়েটার ' । সেখানে আমার একদল কচিকাঁচা,হলুদ সরস্বতী পুজো স্পেশাল সুতীর শাড়ী আর মাথায়, গলায় হলুদ গাঁদা ফুল পড়ে মাতিয়ে দিয়েছিল।ভাষা না বুঝেও তালে তালে হাততালিতে মুখরিত হয়েছিল গোটা হল। আর আমি সেই ফুলেদের ছোঁয়ায় বসন্তের দক্ষিণ হাওয়া পেয়েছিলাম আর এই দক্ষিণের দেশের সাথে আরো একটু সখ‍্যতা বেড়েছিল। ভদ্রলোক এর ডাকে আবার বর্তমানে ফিরলাম, উনি বলে চলেছেন " ইউ মেড দেম ওর সিম্পল কটন শাড়ী,বাট ইট নাইস প্রোগ্রাম।" সেই অনুষ্ঠানের যে এমন সুদুরপ্রসারী ইফেক্ট হয়েছিল সেটা ৭ বছর পর জেনে বেশ রোমাঞ্চিত ও পুলকিত হয়েছিলাম।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register