Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৯৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৯৩)

রেকারিং ডেসিমাল

সব কিছুরই একটা ভালো দিক আর একটা মন্দ দিক থাকে। বেড়ানোর ক্ষেত্রে ও ব্যতিক্রম হয় না। উড়োজাহাজ ভালো। হ্যাঁ। কত কায়দা। বসার হেলানো সিট। রানওয়েতে ঘুরতে থাকা ছুটন্ত পাখি। সোঁ করে আকাশে উঠলেই উড়ে যাবার আনন্দ। নীল আকাশ। সাদা মেঘের সমুদ্র। অনেক আরাম। আর এক দুই ঘন্টায় হাজার হাজার মেইল পেরিয়ে যাওয়া। কিন্তু দুঃখ ও আছে। কোথা দিয়ে গেলাম। চারপাশে কি। সহযাত্রীদের সাথে আলাপ। কিছুটি দেখার, চাখার উপায় নেই। পৌঁছানো আছে। ভ্রমণ নেই। পথকে দেখার, ছোঁয়ার উপায় নেই। তাই, উড়ানে অভ্যস্ত হয়ে ও, ছানাদের মন রেলগাড়ীর গল্পে মেতে থাকে। দিদির এক বছর বয়েস থেকে ছিলো একখানা মজার রেলইঞ্জিন। টুকটুকে হলুদ গাড়ি, লাল চিমনি, ছাদ থেকে মুণ্ডু বাড়িয়ে আছে দুই টেডি বিয়ার। একজন লাল, একজন নীল। সামনে দড়ি দিয়ে বাঁধা। দড়ির টানে রেলগাড়ীর চাকা ঘুরলেই উঁচু নীচু হয়ে মাথা নাড়ে টেডিরা। দিদি তাদের নাম রেখেছে ইন্দি বিন্দি। এরপর ভাইয়ের ও ছোট্ট রেল গাড়ি হল। দুই ভাইবোনকে দাদা আম্মু যত খুদি খুদি কাঠ আর প্লাস্টিকের জন্তু জানোয়ার পাখি কিনে দেন কেবলই, তারা চেপে বসে এ গাড়িতে। পাঁচ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে দিদি পেয়েছে হামা দেয়া বেবি ডল, যে খুটখাট করে হামা দেয়,আর দুদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, মামি মামি, ড্যাডি ড্যাডি। তারপর কাঁদে, ওঁ অ্যাঁ। আবার বলে, আই লাভ ইউ। সব শেষে গান গায়, টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার… একই সাথে ভাইয়ের তিন বছরের জন্মদিন। তাকে দাদাই চৌকো বাক্সটা দিলেন। সে খুলেই দাদাকে জড়িয়ে ধরে বলল, দাদা! রেললাইন যে! সারা দুপুর দাদা আর ভাই সেই রেলগাড়ি আর তার সত্যিকারের রেললাইন নিয়ে ব্যস্ত হয়েছিল সে দিন। ভাই গোল করে পাতা রেললাইনের মধ্যেখানে বসে। দাদাই পাশে ছোট টুলে বসে চাবি দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছেন ব্যাটারি দেয়া ট্রেন লাইনের ওপর দিয়ে। বাকি সবাই দু জনের কান্ড দেখে হেসে খুন। তো। গভীর উত্তেজনা আর ভালো লাগার জিনিস রেলগাড়ী। যেই বাবা এসে বললেন, ট্রেনের টিকিট এসে গেল কিন্তু। কি লাফালাফি দুই ভাইবোনের। ঠাকুমা ছোটদের মতই আল্লাদে চওড়া হাসি হাসেন। যাক, যাচ্ছি তবে কি বল? বেনারস বলে কথা। মা একটু চিন্তাতেই থাকেন এই হইচই করা মানুষটিকে নিয়ে। কাছের সিনিয়র ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে আপাদমস্তক চেকআপ করিয়ে আনলেন, সপ্তাহ খানেক আগে কাশি হয়েছিল বলে। ছেলে ও সঙ্গে চলল বকুনি দিতে দিতে। –হাঁটতে পারো না। নড়তে পারো না। এদিকে বেড়াতে যাবে বলে লাফাচ্ছো। চলো চেক করে আসবে সব। শুকনো কাশি বলে বুকের এক্সরে,পেটের সোনোগ্রাম ও হল। দেখে টেখে সব নরমাল বললেন ডাক্তার। কাশিও সেরে গেল। বাড়িতে চলল ধুন্ধুমার। একদিকে দুই হাফ ইয়ারলির সিলেবাস, অন্য দিকে সুটকেশ প্যাকিং। সে এক বিচিত্র অবস্থা। সকাল থেকে এক পাশে, ক দিয়ে চারটে শব্দ, কার্সিভ রাইটিং, জিকে মানে জেনারেল নলেজের আনসার। মায়ের অন্য পাশে দিদির সেন্টেন্স মেকিং, সমার্থক শব্দ, ডোমেস্টিক অ্যানিম্যাল, মাল্টিপ্লিকেশান। দুপুরে দু জনকে নিয়ে মা ইস্কুলে দৌড়। নিয়ম ছিল, হাফ ইয়ারলিতে এক মাস আর অ্যানুয়াল পরীক্ষার আগে এক মাস মা চেম্বার বন্ধ রাখবে। এমারজেন্সি থাকলে রাতে দেখে নেবে রুগী। দুপুরে দুই দস্যি শুয়ে পড়লে, শ্বাশুড়ি আর বউ মিলে হাসে আর সুটকেস গোছায়। তা হলে আমরা যাচ্ছি।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register