Wed 05 November 2025
Cluster Coding Blog

T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || 26য় ভাস্বতী সরকার

maro news
T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || 26য় ভাস্বতী সরকার

সাদা ফুল

  কুসুমপুর নামে একটা গ্রামে সুধা নামে একটা মেয়ে ও তার দিদিমা থাকত। ওরা খুব গরিব ছিল। সুধার দিদিমা লোকের বাড়িতে বাসন মাজার কাজ করত। সুধা গ্রাম থেকে একটু দূরে বনের ধারে ছাগল চরাতে যেত । ওই বন থেকে শুকনো ডাল পালা ,কাঠ, শুকনোপাতা ইত্যাদি কুড়িয়ে আনত ,দিদিমার রান্নার জ্বালানির জন্য। সুধার বয়স যখন দশ বছর ,ওর দিদিমার জ্বর হলো। সুধা গ্রামের ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে এলো ।কিন্তু তবুও দিদিমার জ্বর ছাড়লো না। সুধার খুব চিন্তা হল। ও কি করবে কার কাছে যাবে, কিছুই বুঝতে পারছিল না। এইসব ভাবতে ভাবতে সুধা একদিন ছাগল চরাতে গিয়ে বনের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলল। ছাগলগুলোকেও খুঁজে পাচ্ছিল না। বনের পাশে একটা বড় নদী ছিল।সুধা নদীর পাড়ে বসে কাঁদতে শুরু করল। হঠাৎ সে দেখতে পেল, নদীর জলে একটা সুন্দরী মেয়ে সাঁতার কাটছে। ভালো করে লক্ষ্য করে সুধা দেখল , মেয়েটার শরীরের নিচের দিকে পায়ের বদলে মাছের লেজ আছে। সুধা দিদিমার মুখে মৎস্যকন্যার গল্প শুনেছিল।মৎস্যকন্যাকে ভালো করে দেখার জন্য সুধা জলের ধারে গেল। হঠাৎ সে পা পিছলে নদীতে পড়ে জ্ঞান হারালো। জ্ঞান ফেরার পর সুধা দেখল, সে একটা ফুলের বিছানায় শুয়ে আছে। পাশে বসে আছে সেই মৎস্যকন্যা। সুধা অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই সে বলল, "তুমি এখন মৎস্যকন্যাদের রাজ্যে আছো। আমাদের মহারানী তোমার সঙ্গে দেখা করবেন।" একটু পরেই মহারানী এলেন। তিনিও খুব সুন্দরী। তিনি সুধাকে বললেন ,তুমি কাঁদছিলে কেন? সুধা বললো, "আমার দিদিমার খুব অসুখ হয়েছে। ডাক্তারবাবু ওষুধ দিয়েছেন,তবুও ভালো হচ্ছে না। দিদিমা ভালো না হলে আমরা কী খাব ?" মহারানী বললেন, " কোন চিন্তা নেই ।আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।" এরপর মহারানী সেই মৎস্যকন্যাকে বললেন, বিদিশা,যাও,ওকে নিয়ে এসো!" বিদিশা চলে গেল । একটু পরেই সে একটা লোককে ধরে নিয়ে এলো। মহারানী বললেন,"সুধা, এই লোকটা ভয়ানক অপরাধ করেছে। ও পরপর তিনদিন রাতে রাজপ্রাসাদ পাহারা দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই ওর সব টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে তোমাকে দিয়ে দেবো।" সুধা বলল," ওর কেউ নেই?" রানী বললেন, "একটা মেয়ে আছে।" সুধা বলল, "না না , আমি টাকা চাইনা। ওর টাকা নিয়ে নিলে ওই মেয়েটা কি খাবে? মহারানী বললেন, "বাঃ! আমার কাছে পরীক্ষায় পাস করে গেছো তুমি।"’ সুধা দেখে মৎস্যকন্যা ওই লোকটার হাত ছেড়ে দিয়েছে। লোকটা সুধার কাছে এসে বলল, "আমি এই রাজ্যের রাজা, পাহারাদার নই। তুমি খুব ভালো মেয়ে, নির্লোভ ও সৎ। আমি তোমাকে পুরস্কৃত করবো। কি চাই বল?" ----- আমি আমার দিদিমাকে সুস্থ দেখতে চাই। আমার দিদিমা পুরোপুরি সুস্থ না হলে আমরা খাব কি? ------বেশ,তুমি চোখ বন্ধ করো। আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খুলো না। সুধা চোখ বন্ধ করলো। একটু পরে রাজা সুধাকে চোখ খুলতে বললেন। সুধা চোখ খুলতেই দেখতে পেল, রাজামশাই-এর হাতে একটা ঘটি । রাজামশাই বললেন, এই ঘটিটার নাম 'ইচ্ছাপূরণ ঘটি'। একে যখন যা খাবার দিতে বলবে, এই ঘটি যোগান দেবে। সুমনা বলল, আর আমার দিদিমা ভালো হবে কি করে? রাজামশাই সুমনার হাতে একটা সাদা ফুল দিয়ে বললেন এটা মন্দার ফুল। এই ফুলটা তোমার দিদিমার মাথায় ছুঁইয়ে দিলে দিদিমা ভালো হয়ে যাবে। হঠাৎ সুমনা শুনতে পেল, কে যেন তাকে ডাকছে। সুমনার ঘুম ভেঙে গেল। ও দেখল ওর দিদিমা বলছে, "তাড়াতাড়ি ওঠ সুমনা। আর কতক্ষন ঘুমাবি? আমি কাজ করতে যাব তো।" সুমনা চোখ বড় করে বলল, "তোমার জ্বর ভালো হয়ে গেছে?" ------ হ্যাঁ। ------- সাদা ফুলটা মাথায় ছুঁইয়েছিলে? ------ কোন সাদা ফুল? -------- রাজামশাই যেটা দিয়েছিলেন। সুমনার দিদিমা কিছুক্ষণ অবাক চোখে সুমনার দিকে তাকিয়ে বললেন, ও,এই কথা। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখ একবার। সুমনা তাকিয়ে দেখল, জানলার পাশে লাগানো টগর ফুলের গাছটা অনেক দিন পরে ধবধবে সাদা ফুলে ভরে গেছে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register