Sat 25 October 2025
Cluster Coding Blog

রম্য রচনায় অমৃতা ভট্টাচার্য

maro news
রম্য রচনায় অমৃতা ভট্টাচার্য

আজ কোজাগরী

কাল অনেক রাত্তির অবধি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। চাঁদের আলোয় ভাসছে চরাচর। চারিদিকে ধানিজমি তার সবুজ জাজিমখানি মেলে ধরে রাতচড়া পাখিদের উড়ান দেখছে কেবলই। মানুষজীবন তো রোজ রোজ এমন অপার্থিবতায় ডুবে যেতে পারে না! কোজাগরী চাঁদের আলোয় সে কেবল পিটুলি গোলা দিয়ে আলপনা এঁকে দিতে পারে। কোন সে পদ্মাসনা দেবীর ধ্যানে ডুবে গিয়ে সমৃদ্ধি চাইতে পারে। সে চাওয়ায় কোন এক মায়া লুকিয়ে থাকে। তার খোঁজ পাওয়া কি সহজ? সেসব ভারী ব্যক্তিগত আসলে। সেই সব চাওয়ায় কি ভাতের খিদে লুকিয়ে থাকে? থাকে নিশ্চয়ই। একেকটা মারী পেরোনো বছরে মাছভাত না হোক মানুষের শাকান্নটুকু জুটে যাক, এটুকুই তো। ভাতে-ভাত খাওয়া মানুষের চোখ জুড়ে নিদালি মন্তর নামুক, তবে না জীবন! ধান্য শস্যের দেবীর কাছে সেসব চেয়ে নেওয়ার আগে, মানুষের রান্নার ইতিহাসে তলিয়ে যাই চলুন। সে ইতিহাসের মধ্যে কেবল তো রিপু নেই, আছে পিটুলির আলপনা। সে আলপনায় ফুটে উঠেছে কত না হরফ। সে কেবল খিদের ভাষা নয়, জীবনের ভাষাও বটে। সে জীবন চাল'কে বলেছিল তণ্ডুল। ধান্য শস্য যখন তুষ পরিভ্রষ্ট হয় তখনই সে হয় তণ্ডুল। তখন আর তার অঙ্কুর হয় না। তণ্ড শব্দের দিশা খুঁজে দেখতে গেলে দেখি, তণ্ড মানে যার আবরণটুকু মায়ময়। তার সঙ্গে উলচ প্রত্যয় যোগে তণ্ডুল শব্দের উদ্ভব। আমাদের মনে যে বাসনার বীজ জেগে ওঠে তা ওই তণ্ড থেকেই। তণ্ড থেকে মুক্তি মানে বাসনা থেকেও মুক্তি। তখন কেবল এই দেহখানা, এই মনখানা থাকবে, কর্মবাসনার অঙ্কুর আর দেখা দেবে না। ধানের খোসাখানা ছাড়িয়ে নিলেও তেমনই তো হয়। তখন সে বাসনা বিমুক্ত শস্যকণা বৈ অন্য কিছু নয়। মানুষের খাদ্যবাসনা পুরোতেই তখন তার কুনকে উপচানো শরীর। ধানে আর চালে কী আশ্চর্য এক ফারাক সেতু বলুন! বাসনা আর বাসনাবিমুক্তির গল্প এমন করে ভাতের পাতে ধোঁয়া উড়িয়ে হাজির হোক প্রতিদিন। রান্নাঘরে প্রতি প্রতিদিন এমন কত বাসনাবিমুক্তির লড়াই চলতে থাকে! কোজাগরী চাঁদের আলোয় সেসব স্পষ্ট হয়ে ওঠে কি আদৌ? ওঠে না। এমন আশ্বিনের পূর্ণিমায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি তাই দেখি, কোন সে আষাঢ়ী পূর্ণিমার মেঘমল্লার বেজে চলেছে অবিরাম। কারা যেন, কেবল সরস্বতী না, লক্ষ্মীকেও বন্দী করতে চাইছেন তার স্বাভাবিক শ্রী আর সমৃদ্ধিটুকু নিয়ে। এমন কাঙাল বিত্তবাসনায় ডুবে না গিয়ে ধানিরঙের জাজিমখানি চাঁদের আলোয় ভাসুক। মানুষের পাতে পাতে জুটে যাক শাক, ভাত, চিড়ে,মুড়ি,কুমড়োর ঘ্যাঁট। জুটে যাক আশ্বিনের পাকা চালতের ঝোল। ভরা পেটে মানুষ ঘুমোক খানিক। চাঁদের আলোয় অথবা অন্ধকারে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register