Sat 25 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৮)

পদচিহ্ন

সপ্তদশ পর্ব যে নৌকোর মাঝি এতোদিন ধরে কূল খুঁজে পাওয়ার তাড়নায় প্রাণপণে পাল টাঙিয়ে দিয়ে বৈঠায় হেঁইও বলে দাঁড় বাইছিলো সে মাঝি যেন দূর দিকচক্রবালে আবছা সবুজের রেখা দেখতে পেলেন। তাঁর কাছে কোনো স্মার্ট ফোন ছিলো না, একটা সাধারণ মোবাইলের নাম্বার দেওয়া ছিলো আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে। সেই ফোনেই ডাক আসতে শুরু করলো। কলকাতার কিছু মধ্যবিত্ত মানুষ বলরামবাবুকে ডাক পাঠালেন, সাহায্যের আশ্বাসে তাঁর লড়াইয়ের পাশে দাঁড়ানোর ঐকান্তিক ইচ্ছায়। বলরামবাবু সেই ডাক পেয়েই ছুটে গেলেন কলকাতা। পার্কসার্কাস, বালিগঞ্জ, খিদিরপুর, টালিগঞ্জে। সাথী তার একজন বাল্যবন্ধু, যার একটা এম্বাসেডর গাড়ি তিনি নিজে ড্রাইভ করে ভাড়া খাটতেন। সেই বাল্যবন্ধুর এম্বাসেডর করে, বন্ধুকে শুধুমাত্র তেলখরচ দিয়ে, তিনি ছুটতে শুরু করলেন পূর্ব মেদিনীপুর থেকে কলকাতা শহর। বেশকিছু সহৃদয় মানুষ, পুরোনো জামাকাপড়, কিছু নতুন জামাকাপড়, পাঁচ দশ হাজার টাকা, চাল, ডাল এসব দিয়ে মানুষটার পাশে দাঁড়ালেন। তার মানুষটির একাগ্রচিত্ততা, ও মানসিক দৃঢ়তা দেখে আর অন্ধকার দিগন্তে রূপোলী আভার লক্ষণ দেখে এবার তাঁর সহধর্মিণী ছবি করণ তাঁকে এক প্রস্তাব দিলেন। আর এই প্রস্তাবনা বলরাম করণকে বর্তমানকালের একজন শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ভিত্তিপ্রস্তরস্থাপন করে দিলো। ছবি করণের নিজের নামে বেশকিছু আবাদি জমি ছিলো বলরামবাবুর বাড়ি, বর্তমান স্কুল ও নির্যাতিত মহিলাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের পাড়াগাঁয়ে। গ্রামের গরুরগাড়ি যাতায়াতের রাস্তা ধরে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলে, এর উঠোন, তার রান্নাঘর, ওর পুষ্করিণীর পাড় ধরে পৌঁছুতে হতো সেই জমিতে। সেই জমিতে ছবিদেবীর গরুর গোয়াল ছিলো। আর ছিলো কিছু আনাজপাতির ক্ষেত। ছবিদেবী এগিয়ে এলেন সেই জমিতে অনাথআলয় গড়ে তোলার প্রস্তাব নিয়ে। সেই জমিতে পা রাখার সাথেসাথেই লক্ষ্মীর কৃপাদৃষ্টি এসে পড়লো বলরামবাবুর যাত্রাপথে। জার্মানি নিবাসী একজন বঙ্গজ সন্তান বিমল রায় এগিয়ে এলেন সেই জমিতে অনাথ আশ্রম গড়ে তোলার প্রস্তাব নিয়ে। তিনি এই কাজে সহায়তার জন্য বলরামবাবুকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করবেন বলে কথা দিলেন। বলরাম করণের বুকের ভেতর যেন আনন্দের বান ডাকলো। তিনি মাথার ওপরে মধ্যাহ্ন সূর্যের দিকে তাকিয়ে প্রণাম করলেন। পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। কোনো একজন ব্যক্তি যে তার কাছে এধরণের প্রস্তাব নিয়ে আসবেন সেটা যে তার স্বপ্নেরও অধিক ছিলো। তাঁর দুচোখ থেকে স্বপ্ন দেখা উধাও হলো। অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করার যে দৃঢ় সংকল্প তিনি গ্রহন করেছিলেন সেই সংকল্প দৃঢ়তর হলো। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register