- 19
- 0
কেয়া ফুলের গন্ধ
পারমিতা, গতকাল গিয়েছিলাম একটা ছবি দেখতে,
শ্রাবণ-সন্ধ্যায়।
আকাশে তখন একটি দুটি তারা।
আমলকি পাতার ঝিরিঝিরি বাতাস,
অমলদের প্রাচীরের ওপাশ থেকে শিউলির ইশারা।
আমরা ছিলাম একটা টোটোয়।
টোটোতে কেবল আমরা দুজনে, -আমি আর দীয়া।
কী যেন বলতে যাচ্ছিলাম আমি;
'চুপ' বলে দীয়া আমার ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ধরলে---
'আগে কেয়ার কথা তো শোনো। '
বললাম, 'ফুল কি কথা বলে?'
শুধু দেখা বা না-দেখা নয়।
চোখের আড়ালে থাকে আর একটা চোখ,
ঠোঁটেরও অন্তরালে পিয়া- অধর।
হৃদয়েই তার একমাত্র ঠিকানা।
স্বগতোক্তির মত দীয়া বলে যায়।
তারপর, আর কোনো কথা নেই।
টোটো পৌঁছে দিল গন্তব্যে---
কেয়ার গন্ধ তখনও লেপ্টে আছে
সবুজ পাঞ্জাবীতে, বুকের বোতামে।
ছবি শুরু হবে হবে, হল ভর্তি দর্শক শ্রোতা।
আমরা দুজনে কেবল একা---
ছবির অমিতাভর মত।
দীয়ার অস্পষ্ট উচ্চারণ: "সব পাখি ঘরে আসে, সব নদী---"
তারপর হারিয়ে যায়।
নদী তো সাগরে যায়, তবে কেন---
আহ, কেন যে মনে পড়ে না!
ওকি একটা পাখি? সঙ্গীহীনা?
অথচ কাছাকাছি, হাতে হাত,
চোখের পাতায় তর্জনীর নৈঃশব্দ্য- খেলা।
ঠোঁটের উপরে---
তবু কত দূরে!
অভিযোগহীন, প্রস্থানের কথা বলে না।
বিদায় নেয় না।
শুধু চলে যায়, অনিমেষে হেঁটে যায়।
হারিয়ে যায় কেয়ার গন্ধ।
জয়িতার মত (জয়িতা নাকি সুভাষিনী)
দীয়া কেবল খুঁজতে থাকে
ভার্সিটির পাঠ- জীবন, শান্তিনিকেতন,
শালপিয়ালের বনচ্ছায়া---
দুলতে থাকে সিল্যুয়েটে, দুলতেই থাকে।
হৃদয়ের বিনিময় তবে হল কি?
এক জনমের সব ছোঁয়া-- প্রবল পরিণয়!
সকল আগল ভেঙে যায় কেয়ার গন্ধে।
একটা সময় এক হয়ে যাচ্ছে
একই সঙ্গে বিচ্ছেদ ও বন্ধন,
যন্ত্রণা আর চুম্বন।
0 Comments.