- 74
- 0
সম্পাদকীয়
ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেই তিরাশি সাল । কপিল দেবের বিখ্যাত ক্যাচ । আমরা তখন নেহাতই কুচো, মোটে কেলাস থ্রী । সারা পাড়া তখন ভেঙে পড়েছে একটা টি.ভি র সামনে , ছোটরা আর কিছু না বুঝুক উত্তেজনা খুব বোঝে । সারা পাড়াতে সেবার অকাল দীপাবলী । সাবেকি পাড়া যেন 'সব পেয়েছির দেশ', সেই মূর্হুতে ।
একটাই দুঃখ ছিল আমাদের বান্ধবীদের 'সবাই ছেলে রে। একটাও মেয়ে নেই দলে।' তারপর তো কত স্রোত, কত ঢেউ, কত ওঠা, কত পড়া। ক্রিকেটের জগত সভায় ভারতের শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠতর আসন লাভ। সবই বীরদের গাথা। বীরাঙ্গনাদের কথা তো শুধু ইতিহাস বইতে আছে। তাঁরা তো আর ব্যাট হাতে মাঠে নামে না ।
আমরা তো ইর্য়কার জানি না, স্পিন মানে জানি না, কোনটা মিড অন, মিড অফ, অতিরিক্ত কভার, স্লিপ কিছুই বুঝি না। আর অত ভারী ব্যাট তুলে ছয় হাঁকানোর গায়ের জোর কোথায়।
যেই মেয়েগুলো সেদিন বসে দুঃখ করত আর তারা তো কালের নিয়মে ঘোরতর সংসারী। আরও কিছু বছর পরে কোন এক বিকেলে খেলার মাঠে কোন এক
জনৈক ছেলে বন্ধু বলেছিল 'মেয়েদের দেখতে সুন্দর হতে হয়। টেনিসে স্টেফি গ্রাফ, গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনি দেখতে ভালো তাই ওদের খেলা সবাই দেখে। মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা দেখতে ভালো না। কেমন ব্যাটা ছেলে হাবভাব, তাই ও হেরে গেলেও দুঃখ হয় না। আর ক্রিকেট তাও আবার ভারতের মেয়েরা খেলবে? হাঃ হাঃ হাঃ।'
তবে মহাকাল আড়ালে হেসেছিলেন। শেফালী ভার্মা, দীপ্তি শর্মা , শ্রী চরণী, ক্রান্তি গৌড়া এবার সপাট থাপ্পড় কষিয়েছেন পিতৃতন্ত্রের মুখে হরমনপ্রীতের নেতৃত্বে। আর তাদের পথ দেখিয়েছেন ডায়না এডুলজি, ঝুলন গোস্বামীরা। দীপ্তি, ক্রান্তিরা নিয়ে এলেন ক্রান্তিকাল। এবার ঝুলন, দীপ্তি, শেফালী, রিচাদের কেউ প্রশ্ন করার সাহস পাবে না 'তোমাদের বর জুটবে কি করে? তোমরা সাজো না কেন? পার্লার যাও না? থ্রেডিং কর না? '
এ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় শুধু খেলার মাঠে জয় নয়। প্রতিটা কোনঠাসা মানুষের জয়। প্রান্তিক ভারতীয় মেয়েদের বেঁচে ওঠা।
বিপ্লব এলো । এলো বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
ইন্দ্রাণী ঘোষ
0 Comments.