- 41
- 0
আমার দুর্গা
মিত্তির বাড়ির ঢাকের আওয়াজ শুনলে
আর ঘরে রাখা যেত না তামান্নাকে
মহালয়ার পর থেকেই ঘরে ফিরতে দেরি হতো তামান্নার
উঠোনে অপেক্ষায় মা
দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলত--
মা আজ না অসুরের চোখ আঁকা হয়েছে
ধরণী জ্যাঠা কত বড় বড় চোখ আঁকল
যেন মা দুর্গাকে একেবারে ভস্ম করে দেবে
মৃদু বকুনি দিয়ে মা বলতেন---
যা তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আয়
দুই বিনুনি দুলিয়ে তামান্না চলে যেত পুকুর ঘাটে
যত পুজো এগোত তামান্নার তত দেরি
মা বুঝত--তামান্না ওই মিত্তির বাড়ির দালানে
কোনদিন লক্ষ্মী কোনদিন সরস্বতী
আবার কোনদিন মা দুর্গার খবর
'কী সুন্দর জানো মা'
আদর করে মা বলতেন--'আমার দুর্গা'ই বা কম কীসে!
মিত্তির বাড়ির ঢাক বাজলো
পাড়ার ছেলেমেয়েরা সেজেগুজে চলল...
ছোট্ট পড়ার টেবিলে রাখা ছবিটার দিকে
একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় মা
দুদিন আগে পুজোর দখল নিয়ে দুই দলের লড়াই
ঠাকুর দালানের দিকে দৌড়ে যাচ্ছিল তামান্না
একটা গুলি এসে লাগে তামান্নার বুকে
মায়ের সামনে লুটিয়ে পড়ে তামান্না
আমার দুর্গা' আর জাগল না...
নির্দিষ্ট দিনে নেতারা এল
ফিতে কাটলো সানাই বাজল
এক কোণে পড়ে রইল তামান্নার একটা ছবি
পাড়ার এক কাকিমা আলগোছে ছবিটায়
পরিয়ে দিল একটা মালা
রোশনি এসে দাঁড়ায় মায়ের পাশে
বন্ধুকে দেখে মা বলে ওঠে---
'আমার দুর্গা'কে দেখেছিস রোশনি
তাকিয়ে দেখ 'আমার দুর্গা' আসছে
পা টিপে টিপে সবার আড়ালে
রোশনির দু'চোখ জলে ভরে ওঠে
আপন মনে মা বলে চলে---
তাড়াতাড়ি আয় রোশনি
'আমার দুর্গা' এক্ষুনি বাড়ী ফিরবে
ছুঁড়ে দেবে ব্যাগটা আমার কোলে
তারপর 'আসছি মা' বলে দৌড়োবে...
রাত গভীর হয়।
সবাই ঘুমিয়ে পড়ে
মিত্তিরদের সানাইটা যেন বড় বেসুরো মনে হয়
আঁধার বাড়ির সামনে তখনও অপেক্ষায় মা
'আমার দুর্গা' এখনই বাড়ি ফিরবে
সানাইয়ের ম্লান সুর তখনও বেজে চলে...
0 Comments.