Mon 20 October 2025
Cluster Coding Blog

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ১৬৮)

maro news
দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ১৬৮)

পর্ব - ১৬৮

অরুণ একটু বিরক্ত হয়ে বললেন, হাজব্যান্ড ওয়াইফ এই সম্পর্ক নিয়ে তোমার এত তিক্ততা আমাদের হতাশ করে।
শ‍্যামলী বলল, শব্দের অর্থ, উৎস, বিস্তার আর বিবর্তন নিয়ে এক ধরনের পড়াশুনা হয়। ওই যে আপনি হাজব্যান্ড কথাটা বললেন, ওটা শুনেই আমার অ্যানিম‍্যাল হাজব‍্যাণ্ড্রি শব্দটা মনে পড়ল। এই রাস্তায় আসার পথে অ্যানিম‍্যাল হাজব‍্যাণ্ড্রি দপ্তরের একটা অফিস আছে লক্ষ্য করেছি। মেয়েদেরকে হিন্দি ভাষার কবি তুলসীদাস পশুর সামিল বলে চিহ্নিত করে লিখেছেন। দেখবেন বিয়ে হলে মেয়েদের গোত্রান্তর হয়। ওই গোত্র কথাটার মধ‍্যেও ওই পশুর সামিল বলে চেনানোর চেষ্টা আছে। তার পর দেখুন, মেয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ উওম‍্যান। এই যে ম‍্যান শব্দটির আগে উও কথাটা জুড়ে দেওয়া হল, এই উও কথাটার অর্থ লক্ষ্য করতে বলব।
অরুণ বললেন, শ‍্যামলী, আমার অনেক কাজ আছে।
শ‍্যামলী হেসে বলল, আমি হয়তো আজ আপনাকে একটু দুঃখ দিয়ে ফেললাম, তাই না? আসলে আমি একটা ছোট্ট ফেভার চাইছিলাম। এই বলে সে একটা গহনা রাখার ছোট্ট বাক্স অরুণের হাতে দিয়ে বলল, আমার হয়ে এটা যদি দিদিকে দিয়ে দিতেন!
গহনার শৌখিন বাক্সটা হাতে নিয়ে  অরুণ বললেন, এতে কি আছে? বলে, সেটি খুলে দেখে বললেন, এ যে তোমার সেই চমৎকার মুক্তোহারটা।
শ‍্যামলী বলল, অরুণদা, এটা দিদির হাতে দিয়ে বলবেন, শ‍্যামলী দিয়েছে।
অরুণ বললেন, শুনেছি মাধ‍্যমিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার জন‍্য শ্বশুর মশায় তোমাকে এটা গিফট করেছিলেন।
শ‍্যামলী বলল, মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে মানুষকে কিছুই বোঝা যায় না। বাবার ইচ্ছে হয়েছিল, মেয়েকে সাজাবেন, তাই। এখন এটা দিদির কাছেই থাকুক। এ মণিহার আমায় নাহি সাজে।
অরুণ বললেন, তোমার জিনিস, আমাদের দিয়ে দিচ্ছ কেন?
শ‍্যামলী বলল, জড়ায়ে আছে বাধা, ছাড়ায়ে যেতে চাই, ছাড়াতে গেলে ব‍্যথা বাজে।
অরুণ বললেন, শ‍্যামলী তোমার ঠিক কি হয়েছে বলো তো?
শ‍্যামলী বলল, আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।
তারপরেই দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ওরেব্বাস, ব‍্যাঙ্কারবাবুর পনেরো মিনিট সময় নষ্ট করে দিয়েছি। আর নয়, এবার পালাই।
বলেই শ‍্যামলী বেরিয়ে এল ম‍্যানেজারের চেম্বার থেকে। ব‍্যাঙ্ক থেকেও।
বাইরে বেরিয়ে দেখল, করবী মিত্র তখনও গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
শ‍্যামলী প্রবল লজ্জা পেয়ে বলল, আমি ভেবেছিলাম, আপনি আমাকে এগিয়ে দিয়ে চলে যাবেন। ভাবতে পারিনি, এতক্ষণ ধরে আপনি অপেক্ষা করে থাকবেন।
করবী বললেন, এবার তো বাড়ি যাবি, না কি?
শ‍্যামলী বলল, না না, এখনও অনেকগুলো কাজ বাকি।
করবী বললেন, সে কি রে? সারাদিন এভাবে ট‍্যাঙস ট‍্যাঙস করে ঘুরবি? পড়তে বসবি কখন?
সামনে পরীক্ষা না?
আজ্ঞে, কয়েকটা কাজ না সেরে নিলেই নয়।
করবী ধমকে বললেন, এভাবে চললে হবে? পড়াশোনার জন‍্য সময় দিতে হবে না?
 শ‍্যামলী বলল, ম‍্যাম, সূর্যকে ঘিরে বুধ থেকে প্লুটো, এই নয়খানা গ্রহ অবিরাম ঘুরে চলেছে। একটাই অভিন্ন সূর্যকে নাভিতে রেখে ওদের ঘোরা, তবু সব কয়টার ঘোরায় নানা রকম পার্থক্য। কেউ খাড়া দাঁড়িয়ে ঘুরছে, কেউ একটু হেলে ঘুরছে। শুক্রগ্রহ আবার শুয়ে শুয়ে নিজেকে পাক খেতে খেতে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। বৈচিত্র্য আছে বলেই জগৎটা এত আকর্ষণীয়।
করবী বললেন, তাহলে তোর নেক্সট ডেস্টিনেশনে তোকে পৌঁছে দিয়ে আমি বাড়ি যাই?
শ‍্যামলী বলল, না না, আপনি অনেকক্ষণ দেরি করে ফেলেছেন। আমি টুক টুক করে ঠিক হাঁটতে হাঁটতে চলে যাব।
করবী তাঁর গাড়ি করে এগিয়ে গেলেন।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register