Sun 19 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পকথায় আনোয়ার রশীদ সাগর

maro news
গল্পকথায় আনোয়ার রশীদ সাগর

।। মাগো - মা ।।

রুমিকে কথা দিয়েছে, সে আজই মোবাইল কিনবে। বাড়ি ফিরে, মায়ের কথা শুনে, রাগে গজ-গজ করতে থাকে, আর কত অপেক্ষা করবে সে। যখন হাইস্কুলে পড়তো, তখন উপবৃত্তির টাকা দিতো বিকাশে। সে সময়ই মোবাইল কেনার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষকরা বলতেন, হাইস্কুলে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। সে ছুতোয় মোবাইল আর কেনা হয়নি, অন্য বন্ধুরা মোবাইল কিনে নেয় সে সময়ই। অথচ অন্যের মোবাইলে রহিমের টাকা আসতো। সে টাকা তুলে মায়ের হাতে দিতো প্রতিবেশী চাচা। এখন সে বড় হয়েছে, মোবাইলটা তার চাই-ই। অন্ধকারে হাঁটে রহিম। গা ছম-ছম করে। সামনে বিশাল বটবৃক্ষ। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কাচারাস্তার পাশ দিয়ে, বয়ে চলা নদীর মত, পায়ে হাঁটা পথটি মাঝে মাঝে সাপের মত দেখা যায়। ভয়ে বুক কাঁপছে থর-থর। তবুও তো যেতে হবে। সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে অভিমান করে বেরিয়ে এসেছে।
বাবাহীন পথচলা রহিমের। একমাত্র মা'ই তার মা এবং বাবা। সব দাবি মায়ের কাছেই। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে, যে কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে সে। পরীক্ষার আগে, মা বলেছিল, পাশ করো মোবাইল কিনে দিবো। কিন্তু মা তার কথা রাখতে পারেনি। এখন বলে, বাবা ভর্তিটা হও, তারপর মোবাইল নিও। রহিম রেগে যায়, মা তুমি শুধু কথাডা ঘুরাও। কী করি বাবা, পারি না যে?- এখন ভর্তির জন্য যত টাকা লাগবে, সেডায় তো দিতে পারছিনি! প্রায়ই তোর আলীম চাচার কাছে হাত পাতি। রহিম আর কোনো কথা না বাড়িয়ে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। হাঁটছে সে অন্ধকারে। বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছে করলেও ফিরবে না সে। ওদিকে রুমি শহরে কোচিং করতে গেছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। তার সাথেও দেখা নেই।ক'দিনেই যেন যোজন-যোজন ফারাক হয়ে গেছে দুজনের ভিতর। রহিম যেন মাঠে মাঠে ঘোরে আর রুমি আকাশে চাঁদ হয়ে নীরবে আলো ছড়ায়। রহিম জ্যোৎস্না আলোকে রুমির মুখবয় ভাবে। গতকাল জিসানের ফোনে রিং দিয়ে, রহিমের সাথে কথা বলেছে। রহিমও উৎসাহ নিয়েই বলেছিল, এবার মা ফোন কিনে দিবে, তুমি কারো ফোনে ফোন কইরো না। রহিমের কথা শুনে রুমি খুব খুশি হয়, খিলখিল করে হাসে, পছন্দেরর বন্ধুটির সাথে চুপিচুপি মনের কথা বলা যাবে। যেন কত কথা জমে আছে মনে। রহিম স্টেশনে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে।এদিক-ওদিক ঘোরে। স্টেশনের পশ্চিমে কাঁঠাল গাছটির আলো-ছায়ার নিচে দু'জন লোক বসে আছে, একজন পুরুষ অপর জন মহিলা। তারা চুপিচুপি কথা বলছে। রহিমের চোখে, মহিলাটিকে তার মায়ের মত মনে হয়।ছ্যাঁত করে ওঠে বুকের মধ্যে। পুরুষটি তো আলীম চাচা, যার মোবাইলে বিকাশ থেকে উপবৃত্তির টাকা আসতো।রহিম বসে পড়ে স্টেশনের ইটের উপর, মা ; আমার মা, কোথায় যাচ্ছে? হতবাক ও বিস্ময়ে চোখে পানি এসে যায়, কেঁদে ফেলে সে, মা; মাগো আমার। দুদিক থেকে দুটি ট্রেন এসে ঈশ্বরদী স্টেশনে থামে।আলীম চাচার হাত ধরে দক্ষিণমুখী ট্রেনে ওঠে, রহিমের মা। রহিম ভগ্ন ও ক্ষুধার্ত শরীর নিয়ে উত্তরমুখী ট্রেনে উদ্দেশ্যহীন ওঠে পড়ে। দুদিকের দুটি ট্রেনই প-অউ-উ শব্দে চলতে শুরু করে। রহিম নীরবে আর্তনাদ করতে থাকে, মা; এ আমার মা!!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register