Mon 20 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - তিন

maro news
সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - তিন

টুকরো হাসি - তিন

কুলের কথা

দীপেনের বিন্তিপিসি বিয়ের দু’বছর পর বিধবা হয়ে পাড়ায় ফিরল।ওদের বাড়ির নিয়মকানুন আদ্যিকালের বদ্যিবুড়োর বাবার টাইপের।পিসি বিধবা হয়ে আসার পরেই দীপেনের মা রান্নার মাসিকে ছাড়িয়ে দিল।বাসন মাজার মেয়েটিকে বলল,‘তোকেও আসতে হবে না।‘
পিসির জন্য হাজার নিয়ম।নিষেধ।এটা খাবে না,ওটা কোরো না এভাবে করোনাকাল এল।পিসির জন্য সবেতেই মিলিটারি শাসন।বিধবা মানুষ বলে কথা!বিন্তিপিসি কপালের দোষ ভেবে সব মেনে নিচ্ছে।
বাড়িতে পোলাও,কষামাংস,বিরিয়ানি,চিকেনরোল এমন অনেককিছু খাওয়া হয়।বিশাল তালিকা।কিছুরই স্বাদ পায় না বিন্তিপিসি।শুনেছে খাবারের গন্ধে আর দেখায় নাকি অর্ধভোজন হয়।কচু পোড়া।যদি তাই হত তবে সবকিছুর গোটাটাই তো খাওয়া হত!তা হয়েছে?হয়নি।ওসব কথা,ব্যাঙের মাথা।
বান্ধবীরা বলেছে,‘সব খাবি।বুঝলি?চেটেপুটে খাবি।এখন আর এসব কেউ মানে?’
বিন্তিপিসি খাওয়ার কথা ভেবেও বউদির ভয়ে সাহস পায়নি।দাদার বাড়ির আশ্রয় ছাড়া তার কোথাও যাবার নেই।বর মারা যেতেই ভাসুর সম্পত্তি হাতিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে।
এখন পাড়াবেড়ানোও বন্ধ।কোন এক নাক চ্যাপ্টাদের দেশ থেকে হতচ্ছাড়া,বদমাশ করোনা নামের একটা লম্পট এসে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।মাস্ক চাপা দিয়ে বিশ্বসুদ্ধ লোকের নাক চ্যাপ্টা করে দেবার মতলব।বেরোলেই হ্যা হ্যা করে জাপটে ধরবে।নিয়ে তুলবে হাসপাতালের বাসরঘরে।তারপরই লাশ গায়েব।
টিভির খবর দেখে বেজায় চটে বউদি বলল,‘করোনায় ঘন্টা বাজানো,প্রদীপ জ্বালানো,ফুল ছড়ানো হয়েছে।এখন প্রসাদ বিলি হচ্ছে।’
বিন্তিপিসি বলল,‘প্রসাদ কোথায়!সবাই তো মদ কিনছে।’
‘থামো।মুখে কিছু আটকায় না তোমার!যাও ভালো করে কুলকুচো করে এসো।সন্ধ্যাবেলা মদ বলার জন্যই তোমাকে কাশী পাঠানো উচিত।’
মদে নাকি দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা!বয়স্ক লোকেরা ঠিক করল ধর্মনীতিকেও চাঙ্গা করবে।সন্ধ্যাবেলা কথকঠাকুর শ্রীকৃষ্ণলীলা গাইবেন।
বিন্তিপিসি বলল,‘আমি যাবো?’
বউদি একটু ভেবে বলল,‘যাও।কৃষ্ণঠাকুরে দোষ নেই।দুপুরবেলা তোমাকে বাড়িতে অনেকক্ষণ খুঁজে  পাইনি কেন?ফিরে তার উপযুক্ত জবাব দিও।’
মঞ্চের সামনে বসল বিন্তিপিসি।আসর জমে ক্ষীর।কথকঠাকুর রাধার উদ্দেশ্যে গাইছেন।
আবেগে সুন্দরী বিন্তিপিসির মাস্ক খুলে গলায়।কৃষ্ণের মতো দুষ্টু হেসে কথকঠাকুর বিন্তিপিসির নাকের ডগায় হাত নাড়িয়ে গাইতে লাগলেন,‘এবার তোর কুলের কথা দেব বলে।বলে দেব।বলে দেব।কুলের কথা দেব বলে।’
একই কথা অনেকক্ষণ শুনতে শুনতে সাংঘাতিক রেগে বিন্তিপিসি ঝটাক্‌সে উঠে দাঁড়াল।
চিৎকার করে বলল,‘রোজই আমাকে পিণ্ডি চটকেই খেতে হয়।কতদিন বাদে দুপুরে লুকোয়ে লুকোয়ে কয়েকটা কুল খেয়েছি।মুখপোড়া,নালিশকুটি তুমি সবাইকে তা বলে দেবে?শুধু বলেই যাচ্ছে,কুলের কথা দেব বলে! ইয়ারকি।খেয়েছি বেশ করেছি।আমি আর ভয় পাব না।যাও বউদিকে বলে দাও কুলের কথা।’
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register