Mon 20 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - ছয়

maro news
সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - ছয়

টুকরো হাসি - ছয়

আরেক প্লেট করে

তিন বছর ধরে ছন্দা গোটা কলকাতার পার্ক, বেঞ্চ, গাছ, পাতার সঙ্গে পবিত্রকে নিয়ে লাগাতার সেলফি তুলেছে।গঙ্গায় চোখের জল ফেলে,অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে তবে ওকে বিয়েতে রাজি করিয়েছে।
ভুলেও কোনোদিন শহরের লাইটপোষ্টের কাছে বা ভালো হোটেলে যায়নি পবিত্র। বলেছে, আলোয় চোখের সমস্যা হয়। ফলে অন্ধকারে পবিত্রর সঙ্গে থাকায়, ছন্দা বাধ্য হয়ে বিয়ের কথা বলেছে। পাকাল মাছের মতো সেই প্রসঙ্গ থেকে প্রতিবারই ছিটকেছে পবিত্র। বিয়ের ছিপে খেলিয়ে ছাঁদনাতলায় তুলতে কম খাটতে হয়নি ছন্দাকে।
ক্লান্ত হয়ে ছন্দা একসময় ভেবেছিল সে বিয়েই করবে না। পরক্ষণেই মত বদলেছে। তার মহান প্রেমের গপ্প এতজনকে বড়ো মুখ করে বলেছে এখন বিয়ে করবে না কেন,তা জানাতে থিসিস লিখে জনে জনে বিলি করতে হবে। বিয়েটা হওয়ায় বিটকেল প্রেমের থিসিস লেখার জ্বালা থেকে সে মুক্তি পেয়েছে।
ছন্দা টের পেয়েছিল পবিত্র একটা মহা কেপ্পন। বিয়ের পরে আরও টের পেল যে, পবিত্রর হাতের জল মুঠো করলেও মাটিতে পড়ে না।
বিয়ের পরে একদিন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে তার একটা লিস্ট করছিল ছন্দা। একটা পৃষ্ঠা শেষ করে পাতা ওলটাবার আগেই পবিত্র বলল, ‘আমার গা গোলাচ্ছে। কালই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হব। আমি সেখান থেকেই হাওয়া হয়ে যেতে চাই। কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না।’
‘এটা সবে ঘুঘু দেখছ।এখনও তো ফাঁদ দেখনি। পোশাক আর সাজগোজের জিনিস আমি এখনও লিখিইনি।
টিভির খবরে ছন্দা শুনল দেশে একটা রোগ ঢুকেছে। সেটাকে আটকাতে লোকজনের বাড়ি থেকে বেরুনো বন্ধ।বেরুলেই রোগটা এমন করে ধরবে কেউ নাকি বাঁচবে না।
পবিত্র অফিসের কাজ বাড়িতে বসে করেছে। সাতদিনের একদিন সকালে বাজারে যায়।
ছন্দা টিভিতে দেখছে এর মধ্যেই অনেকে মিছিল করে থিকথিকে জমায়েতে দাঁত খিঁচিয়ে,চোয়াল শক্ত করে,হাতের মুঠো উপরে তুলে বলছে,‘এভাবে অপরিকল্পিত লকডাউন ডাকা ভুল হয়েছে।’
শুনে বক্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে দু’চোখ ভাসিয়ে ছন্দার বলতে ইচ্ছে করছিল,‘ঠিক বলেছেন।জানেন এই হতচ্ছাড়া রোগ আর লকডাউনের জন্য আমার হনিমুনটাই হল না।’
আনলক ছয় হতেই ছন্দা পবিত্রকে বলল,‘পুজোয় কিন্তু কেউ কোনো কেত্তনই বাদ দিল না। কত নাচই যে নাচল। কোনো নিয়ম মানল না। আমিও মানব না। আমিও এভাবেই সেলিব্রেটি হব। আজ আমাকে ঘোরাতে নিয়ে যেতেই হবে।’
পবিত্র অশান্তি এড়াতে বলল,‘চল যাই।’
‘যাবে? তুমি কী ভালো!’
‘আজ বাইরে কিছু খেয়েও নেব।’
‘উলে বাবা লে!’ হাততালি দিল ছন্দা।
আহ্লাদীর মতো পবিত্রর হাত ধরে ঘুরছে সে।ভাবছে বিটকেল রোগটা কি পবিত্রকে তাহলে বদলে দিল?
ঘুগনিওয়ালাকে পবিত্র বলল,‘ভালো করে টক ঝাল দিয়ে দু’জায়গায় আরেক প্লেট করে ঘুগনি পাউরুটি দাও তো।’
‘আরেক প্লেট করে মানে? তুমি কি এর মধ্যে এখানে এসে খেয়েছ!’
‘তোমাকে ছাড়া একা খাব? বাড়ি থেকে তো আমি বেরোইনি।তোমার মনে নেই, সেই বিয়ের আগে আমরা দু’জনে এখানে এক প্লেট করে খেয়েছিলাম? আজ আবার খাচ্ছি,আরেক প্লেট করে।’
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register