Wed 22 October 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে পার্থপ্রতিম পাঁজা

maro news
অণুগল্পে পার্থপ্রতিম পাঁজা

কচিয়া

তার থাকার কথা ছিল সাঁওতাল পরগনায়। কথা ছিল সারাদিন ক্ষেতে কাজ করে সন্ধ্যেবেলা হাড়িয়া খেয়ে, মহুয়া খেয়ে মাদল বাজিয়ে পাখি, ফুলমণি সোরেং-দের সঙ্গে কোমর দুলিয়ে নাচ করার। কিন্তু কোথায় কি? পেটের রাক্ষসের তাড়নায় সে এখন ইটভাটা শ্রমিক, ভরত পাঁজার ভাটার ফায়ার ম্যান‌। পুরনো লোহার চোঙ ভাটায় আগুন জ্বালিয়ে রাখা খুব জিম্মেদারির কাজ। অফ সিজিনে সে আর বাড়ি যায় না। বাবুর গোয়ালের গরু গুলোর দেখভাল করে। চাঁদনী রাতে মাঠের রাস্তায়, নদীর বাঁধে আনমনে বাঁশি বাজায়। সেই সুর ভেসে যায় অনেক দূরে। কিন্তু একদিন গোল বাঁধলো। মোল্লাহাটে নিয়মিত যাতায়াত করতে করতে আর শিবগঞ্জে মদ খেতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধনা বাজানীর মেয়ে ফুলির সঙ্গে আশনায় করে ফেলল সে। তারই নেশায় পুরনো কাজ ছেড়ে শিবগঞ্জের ভাটায় কাজ নিল। ভাটাটা ফুলির বাড়ির কাছেই। তাছাড়া ওই ভাটাতেই ফুলির বাবা ধনা ফায়ারম্যানের কাজ করে। বাপকে মুড়ি, পান্তা, জল দিতে যাওয়ার অছিলায় বাপের চোখ এড়িয়ে ভালোই লটর পটর চললো। একটাই মুশকিল, ধনা প্রচন্ড রগচটা। একজন সাঁওতালি ছেলেকে কি সে জামাই বলে মেনে নেবে? না নিলে? কিন্তু এত প্রশ্ন মেনে কি আর ভালোবাসা হয়? আগুন আর ঘি এক হলে কে আটকাবে? বাড়াবাড়ি দেখে ধনা একবার নয়, তিন তিনবার বারণ করল, শাসাল, জানে মেরে দেওয়ার ভয়ও দেখালো। কিন্তু বুনো ভালোবাসার নেশায় তখন তারা মশগুল, শুনবে কেন? সাত সকালে বাতাসে ভেসে এলো খবরটা শিবগঞ্জের ওই ভাটায় নাকি আচমকা ধ্বস নেমেছে। আর সেই ধ্বসের সঙ্গে আগুনের মধ্যে সেঁধিয়ে গেছে কচিয়া! সত্যিই কি দুর্ঘটনা? মানুষের মনে সন্দেহ। বুনো ভালোবাসার এই পরিণাম? প্রেমিক কচিয়া পুড়ে গেল আগুনে। শুধু বাতাসে ভেসে রইলো তার বাঁশির সুর............
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register