Wed 29 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ২৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ২৪)

বাউলরাজা

তৃতীয় খণ্ড

আমি মনে মনে বললাম কথায় একটু ভুল থেকে গেলো গো বাউলদিদি। পৃথিবী যাকে বুকে ধরে সে আর পৃথিবী দেখবে কেমন করে গো, সে ব্রহ্মাণ্ড দেখে, শুধুমাত্র প্রভাতী সূর্যের আলো কে সে ফিরিয়ে দেয় আঁধারে ঢাকা পৃথিবীর বুকে আলো দেখাবার গর্বে। প্রভাতবেলার সূর্যের যে লাজভাঙা রঙ সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষশাখায় এসে পড়ে, আলোকিত করে তোলে সে বৃক্ষশোভিত কুসুমদলকে, তারপর ধীরেধীরে সমস্ত গাছটাই আলোয় আলোময় হয়ে ওঠে, ঠিক সেভাবেই কৃষ্ণভামার মুখ অলক্ত রঙে রাঙা হয়ে উঠলো। বাউলনির সে রূপ বড় শান্ত, বড় নম্র। মুদিত নয়নে গলায় অঞ্চলপ্রান্ত জড়িয়ে নিয়ে আভূমিনত হলো সে মোহিনী রূপ। --- যাকে চোকে দেকা যায় না, কিন্তু চক্কু জুড়ে তাকে তাকেই কী জ্ঞানচক্কু বলে গো ঠাকুর! অবশ্যই তাই। তুমি তোমার জ্ঞানচক্কু দে যে ব্যম্মাণ্ড দেখো, যে আলো ছইড়ে দাও, সে আলোতেই তো আমার আঁদার কাটে গো।

বেশ কিছুক্ষণ সময় সে আমার কাঁধে ওর হাত রেখে বসেছিলো। এখন সেই হাত দিয়েই আমার গলা জড়িয়ে ধরে সোহাগে যেন লতিয়ে পড়লো। -- জানো ঠাকুর তোমাকে আমি আমার আকাশ বলে বাবি। না গো, এট্টুস খানি বুল বললাম গো। তোমাকে আর রবিঠাকুরকে। আকাশ যেরকমটা আমাদের আলোর আতুরঘর, তোমরা দুজনেই আমার কাচে সেরকমটাই গো। তুমি উপনিষদের কতা বলচিলে না? রবিঠাকুরের গানের ভেতর দে সে সব উপনিষদের কতাকে যে সরলবাবে বুজিয়ে বলা আচে সেরকমটা আর পাই কোতায় বলো দেকি? আর হচ্ছো গে তুমি। আমার মনের বেতরে যতো পশ্নই গুরেফিরে মরে, সে সব পশ্নের সমাদানপত্তর বুজি তুমি। তুমি আমার আদার রাতের আলো গো ঠাকুর। কথাকটি বলেই সে আরও ঘন হয়ে বসলো। আমার বাহুতে তার শ্রীঅঙ্গের পরশ। তার সেই কচি আমের আঠালো কষের মতো ঘ্রাণ আমার চেতনা ছুঁয়ে। -- রবিঠাকুর আর তোমাকে একসাতে বাবলেই যেন পকিতিময় সুর ছড়িয়ে পড়ে গো ঠাকুর। রবিঠাকুরের আলোর আকাশ যেন তোমার গানেগানে ভরে ওটে। কতকাল হয়ে গেলো, তোমার গান শুনি না। যেন সুরের পিপাসায় মন শুকিয়ে কাঠ হয়ে রয়েচে। একটা গান শোনাও না গো ঠাকুর। সেই যে গো - সেই গানটা -- আকাশ আমার ভরলো আলোয়, আকাশ আমি ভরবো গানে। করো নাগো পদীপদাদা। এতোক্ষণ যে নদী নীরব ছিলো, হঠাৎ করেই ওর বুকের থেকে নুড়ির গড়িয়ে যাওয়ার আওয়াজে যেন নূপুরধ্বনি বাজতে লাগলো। সেই রাতেরবেলার আকাশ যেন আমার চেতনা জুড়ে আবীররঙা হয়ে উঠছে। আমি, আমার চেতনার কোন অতলে তলিয়ে যাচ্ছি বুঝতে পারছি না। যেন ছায়াপথের কোন সুদূর থেকে এস্রাজের সুর ভেসে আসছে, খুব ক্ষীণ কন্ঠে এক নারীকন্ঠের অস্পষ্ট ডাক শুনতে পেলাম। --- ঠাকুর...

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register